Friday, October 05, 2012

মন্দিরে মিলেছে গান পাউডার ককটেল

কক্সবাজারের রামুতে স্মরণকালের জঘন্যতম ঘটনা সংঘটিত করতে গান পাউডার, পেট্রোল ও ককটেলের মতো বিস্টেম্ফারক ব্যবহার করেছে দুষ্কৃতকারীরা।

২০০ বছরের পুরনো রামুর কেন্দ্রীয় সীমাবিহার ধ্বংস করতে ব্যবহার করা হয় গান পাউডার ও পেট্রোল। আবার ১০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪০ ফুট প্রস্থে নির্মাণাধীন দেশের সর্ববৃহৎ বৌদ্ধমূর্তি ধ্বংস করতে দুর্বৃত্তরা নিয়ে যায় ককটেল। ইট, পাথর ও সিমেন্ট দিয়ে তৈরি এ মূর্তি তারপরও ধ্বংস করতে না পেরে শাবল ব্যবহার করে তারা। ঘটনাস্থলে সরেজমিন গিয়ে গতকাল থেকে আলামত সংগ্রহ করছে সিআইডির ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল। পরীক্ষার জন্য এসব বিস্টেম্ফারক এখন পাঠানো হচ্ছে ঢাকায়। এদিকে ককটেলসহ বিভিন্ন বিস্টেম্ফারক পাওয়ার পর নতুন মোড় নিচ্ছে রামুর ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার আসছেন রামুতে। গতকাল সন্ধ্যায় শহরে টহল দেয় সেনাবাহিনী। নেপথ্যের গডফাদারদের ধরতে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা সংস্থাও।
পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন মন্দিরে বিস্টেম্ফারক পাওয়ার কথা স্বীকার করে তদন্ত দলের প্রধান ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, 'ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আমরা ককটেলসহ কিছু বিস্ফোরকের আলামত পেয়েছি। সেগুলোর কিছু ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এখন যেগুলো পাচ্ছি, সেগুলোও পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে ঢাকায়।' সম্প্রীতির শহর রামুতে গত শনিবার মধ্যরাতে পরিকল্পিতভাবে নাশকতা চালানো হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছে তদন্ত দল। এদিকে বিস্ফোরক শনাক্ত করতে গতকাল রামু এসেছে সিআইডির একটি প্রতিনিধি দল। এএসপি হ্লা চিং প্রু মার্মার নেতৃত্বে এ দলও পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন মন্দির থেকে সংগ্রহ করছে আলামত।
হামলাকারীদের নাম বলছে প্রত্যক্ষদর্শীরা : সিআইডির ফরেনসিক দল গতকাল চট্টগ্রামে এলেও ২ অক্টোবর থেকে ঘটনার নেপথ্যের কারণ উদ্ঘাটন করতে তদন্ত কাজ শুরু করেছে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বাধীন দল। তারা ঘটনার দিন প্রশাসনের ভূমিকা কী ছিল, হামলাকারী কারা ছিল, কীভাবে হামলা হয়, সেদিন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা কী ছিল, ক্ষতির পরিমাণ ও হামলায় ব্যবহৃত উপকরণ সংগ্রহ করে এ ব্যাপারে ১০ অক্টোবরের মধ্যে রিপোর্ট দেবে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, 'রামুতে সংঘটিত ঘটনার বৃত্তান্ত সংগ্রহ করছি আমরা। ২ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করলেও ভয়ে তখন প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকে কোনো তথ্য দেয়নি। তবে এখন হামলাকারীদের নাম বলছে অনেকে। তাই আশা করছি, ঘটনার নেপথ্যের কারণ ও ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে রিপোর্ট দিতে পারব আমরা।'
গডফাদারদের খোঁজে গোয়েন্দারা : গত শনিবার মধ্যরাতে ১২টি মন্দির পুড়িয়ে রামুতে পুরাকীর্তি ধ্বংসকারীদের অনেকের নাম ভিডিও ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য থেকে পাওয়া গেলেও গোয়েন্দা সংস্থা এখনও নেপথ্যের গডফাদারদের চিহ্নিত করতে পারেনি। ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরগুলো থেকে ককটেলসহ বিভিন্ন বিস্টেম্ফারক উপাদান পাওয়া যায়। গডফাদারদের ধরার অভিযান জোরদার করা হয়েছে বলে জানান শীর্ষ এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, 'হামলাকারী ও নেপথ্যের ইন্ধনদাতাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে আমাদের। শিগগিরই এদের মুখোশ উন্মোচন করা হবে জনসমক্ষে।'
সেনাবাহিনীর টহল : রামু থেকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হলেও গতকাল সন্ধ্যায় শহরে টহল দিয়েছে সেনাবাহিনী।

No comments:

Post a Comment