Monday, December 27, 2010

বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে এসে রোগীদের ভোগান্তি

মেয়ে ফরিদা বেগমের চিকিৎসা করাতে গত শনিবার রাতে ফেনী থেকে ঢাকায় এসেছিলেন শফিকুর রহমান। দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাসায় রাত কাটিয়ে গতকাল সকাল সাতটার মধ্যেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গেটে এসে পৌঁছান তিনি। কিন্তু ষাটোর্ধ্ব শফিকুর রহমান ভেতরে ঢুকতে পারেননি। মেয়েকে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন
সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা। শফিকুর রহমানের মতো অসংখ্য ব্যক্তিকে রোগী নিয়ে বিএসএমএমইউর গেটে এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এক্স-রে রিপোর্ট, ব্যবস্থাপত্রসহ চিকিৎসাসংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে রোগীদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। নিরাপত্তাকর্মীরা সকাল থেকেই গেট বন্ধ করে রেখেছিলেন। ভেতরে ঢুকতে চাইলে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান, ভেতরে যাওয়া চলবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বহির্বিভাগ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং ৪০ শয্যার আইসিইউ ও ওটি কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জরুরি ও বহির্বিভাগের গেট ছাড়াও দক্ষিণের গেটটিও বন্ধ ছিল দুপুর ১২টা পর্যন্ত। তবে ওই গেট দিয়ে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী, গণমাধ্যমকর্মী এবং অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের ঢুকতে দেওয়া হয়।
বহির্বিভাগের বাইরে একটি কাপড়ের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘আজ দুপুর সাড়ে ১২টার পর জরুরি ও বহির্বিভাগের রোগীদের চিকিৎসা শুরু হবে।’ প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে আসেন সাড়ে ১০টার দিকে। অনুষ্ঠান শেষে বের হন ১২টায়। কিন্তু গেটগুলো বন্ধ ছিল সকাল থেকেই। সোয়া ১২টার পর মূল গেট খুলতেই রোগী ও তাদের সঙ্গে আসা লোকদের ঢল নামে।
কুমিল্লা থেকে আসা আলী আশরাফ বলেন, তিনি সকাল নয়টা থেকে পেটে ব্যথা নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। দুপুরের আগে চিকিৎসা পাওয়া যাবে না, এটা তিনি জানতেন না।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থেকে আসা মনোয়ারা বেগম জানান, তাঁর হাঁটুব্যথার চিকিৎসার জন্য ভোরে রওনা দিয়ে এসে দেখেন গেট বন্ধ। তাই ফুটপাতে বসে কাটিয়েছেন সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা।
ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোডের বাসিন্দা সাজেদা বেগম জানান, তিনি এক বছরের শিশুর চিকিৎসা করানোর জন্য সকাল নয়টায় এসেছেন। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীরা ভেতরে যেতে দেননি। তিনি সন্তান নিয়ে কয়েক ঘণ্টা বাইরে বসে ছিলেন।
মো. ওয়াহিদ স্ত্রী ও নবজাতককে নিয়ে সাভার থেকে এসেছিলেন। শিশুটির পায়ে সমস্যা। নয়টা থেকে ১২টা পর্যন্ত গেটের বাইরে কোলের শিশু নিয়ে বসে ছিলেন।
যেসব রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছে, তাদের স্বজনদেরও ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অনেকে অভিযোগ করেন, ওয়ার্ডগুলোতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কোনো চিকিৎসক ছিলেন না।
জানতে চাইলে বিএসএমএমইউয়ের পরিচালক আবদুল মজিদ ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের উত্তর দিকের মাঠে বিকল্প বহির্বিভাগ বসিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেখানে রোগীরা চিকিৎসা নিয়েছেন।
বিকল্প বহির্বিভাগের ব্যাপারে আগে কোনো নোটিশ দিয়েছিলেন কি না, জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, বিকল্প বহির্বিভাগে রোগীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য সাদা পোশাকের আনসার প্রস্তুত ছিল। সবকিছুর পরও অল্প কিছু অসুবিধা হয়ে থাকতে পারে।

No comments:

Post a Comment