Friday, December 31, 2010

র‌্যাবের 'ধরে নেওয়া' ব্যবসায়ী ৯ মাস 'নিখোঁজ'

র‌্যাবের 'ধরে' নেওয়া এক ব্যবসায়ী নয় মাস ধরে 'নিখোঁজ' বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। 'নিখোঁজ' ওই যুবকের নাম ইউসুফ আলী সুজন (৩১)। তিনি রাজধানীর কলাবাগানে বসবাস করতেন। সুজনকে জোস্না বেগম নামে এক তরুণীসহ র‌্যাব ধরে নেয় বলে জানান সুজনের ভাই মাহবুব। এই জোস্না সুজনদের বাড়ির এক ভাড়াটের বান্ধবী।

সুজনের ভাইয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, গত ২৪ মার্চ জোস্নার ফোন পেয়ে ফার্মগেটে একটি রেস্তোরাঁর সামনে যান সুজন। সেখান থেকে তাকে 'ধরে নিয়ে যায়' র‌্যাব-২-এর সদস্যরা। মাহবুব জানান, সুজনকে র‌্যাব 'ধরে নিয়ে যাওয়ার' পর জোস্নাই প্রথম তাকে ঘটনাটি জানান।

তবে এ নিয়ে র‌্যাবের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেছেন, তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না। সুজনের ভাই মাহবুব গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, 'নিখোঁজ' হওয়ার পর থেকে এখনো সুজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

"র‌্যাবের এক কর্মকর্তা সুজনকে ধরে নিয়ে গেছেন", বলেন তিনি। গত ২৯ মার্চ শেরে বাংলা নগর থানায় এ বিষয়ে মামলা করেন মাহবুব। 'সুজন নিখোঁজ হওয়ার' ঘটনাটি এখন তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তদন্তের কথা জানালেও ডিবি পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মাহবুবুর রহমান গত শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "মামলার স্বার্থে তদন্ত প্রসঙ্গে এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না।"

সুজনের পরিবারের অভিযোগ, র‌্যাব-২-এর সদস্যরা ওই সময় জোস্নাকেও তাদের হেফাজতে নেয়। পরে জোস্নাকে ছেড়ে দেওয়া হলেও আর খোঁজ মেলেনি সুজনের। সুজনকে 'ধরে নেওয়ার' দিনই জোস্নাকে সিরাজগঞ্জে নিজের বাড়িতে যেতে ছেড়ে দেন লেফটেন্যান্ট ফরহাদ। ছাড়া পাওয়ার একদিন পর বাড়ি যান জোস্না।

মাহবুবের মামলার পর জোস্নাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলায় জোস্নার স্বামী আনিসকেও আসামি করা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জোস্না জানান, আনিসের ফোন পেয়ে তিনি ফার্মগেটে একটি রেস্তোরাঁর সামনে যান। সেখানে গিয়ে আনিসকে দেখতে পাননি তিনি।

"ওখানে গিয়ে দেখি, র‌্যাবের অফিসার ইকবালসহ একদল সদস্য সুজনকে তাদের গাড়িতে ওঠার জন্য টানাটানি করছে।" সে সময় তিনি সুজনকে ছেড়ে দিতে র‌্যাব সদস্যদের অনুরোধ করলে তারা তাকেও ধরে নিয়ে যান বলে জানান জোস্না।

তিনি বলেন, "সুজনকে নিয়ে র‌্যাব-২-এর অফিসে ফরহাদ স্যারের হাতে দেওয়া হয়।" পুলিশকে দেওয়া জোস্নার জবানবন্দির ভিডিও ফুটেজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সংগ্রহে রয়েছে। সুজন গ্রেপ্তার হওয়ার দিন নৌবাহিনী থেকে র‌্যাব-২ এ প্রেষণে যোগ দেওয়া লেফটেন্যান্ট ফরহাদ এবং দুজন ডিএডি'র সঙ্গে জোস্নার ঘনঘন টেলিফোন সংলাপ এবং সুজনকে ফার্মগেটে ডেকে নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

ওইদন (গত ২৪ মার্চ) বিকেল ৫টা এক মিনিট থেকে বিকেল ৫টা ৫৩ মিনিট পর্যন্ত লেফটেন্যান্ট ফরহাদসহ র‌্যাবের তিন সদস্যের সঙ্গে ঘনঘন কথা হয় জোস্নার। সেদিন লেফটেন্যান্ট ফরহাদ, ডিএডি রফিক ও ডিএডি সামসু তাদের অফিসের মোবাইল নম্বর থেকে ঘনঘন যোগাযোগ করেন জোস্নার সঙ্গে। একই সময় জোস্না তার পুরনো মোবাইল ফোন থেকে যোগাযোগ করেন সুজনের মোবাইলে।

জোস্নার সঙ্গে লেফটেন্যান্ট ফরহাদ ও দুই ডিএডি'র ক'বার টেলিফোন সংলাপ হয়েছে তার বিস্তারিত তথ্যও জানতে পেরেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ফরহাদ ১৯ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত জোস্নার সঙ্গে মোবাইল ফোনে ২৫ বার, ডিএডি সামসু ১৭ বার ও ডিএডি রফিক তিনবার কথা বলেছেন। সুজনকে 'ধরে নেওয়ার' অভিযোগ ওঠার পর লেফটেন্যান্ট ফরহাদকে র‌্যাব-২ থেকে নৌবাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

No comments:

Post a Comment