Friday, December 31, 2010

'তাদের সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনুন' ___জিম্মিদের পরিবার

যেকোন কিছুর বিনিময়ে তাদের সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনুন- সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ২৬ বাংলাদেশির স্বজনদের এই একটিই আকুতি ছিনতাই হওয়া জাহাজের মালিকপক্ষের প্রতি। বৃহস্পতিবার বিকালে চট্টগ্রাম নগরীর একটি হোটেলে জিম্মিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ছিনতাই হওয়া জাহাজ এমভি জাহান মনি'র মালিকপক্ষ মতবিনিময় করে। এসময় এ আকুতি জানান জিম্মিদের কারও মা-বাবা, কারও ভাই-বোন বা চাচা।

জাহাজ ছিনতাই হওয়ার ২৬ দিন পর মালিকপক্ষ জিম্মিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বসলেন। তবে এর আগে মালিকপক্ষ অনানুষ্ঠানিকভাবে নাবিকদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। গত ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরে ভারতীয় জলসীমায় ২৫ জন বাংলাদেশি নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলির স্ত্রীসহ বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মনি ছিনতাই হয়।

গত ১১ ডিসেম্বর জাহাজটিকে জলদস্যুরা সোমালীয় উপকূলে নিয়ে যায়। ১২ ডিসেম্বর জাহাজ মালিকপক্ষের সঙ্গে জলদস্যুরা যোগাযোগ করে এবং নাবিকদের সঙ্গে কথা বলতে দেয়। এরপর থেকে জলদস্যুরা প্রায় নিয়মিত বিরতিতেই মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। জাহাজে জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারের জন্য পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে ঢাকায় ও চট্টগ্রামে মানববন্ধন করে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

অশ্র"সজল পরিবেশ
বৈঠকের এক পর্যায়ে জিম্মি নাবিক শাহরিয়ার রাব্বীর মা বিলকিস রহমান কাঁদতে কাঁদতে সভাস্থলের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে তার সন্তানের মুক্তির জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করতে মালিকপক্ষের কাছে আহবান জানান। জিম্মিদের পরিবারের সদস্যদের অশ্র"সজল আকুতিতে সভাস্থলের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।

এসময় শাহরিয়ারের ক্যান্সার আক্রান্ত বাবা জিয়াউর রহমান নিজের মৃত্যুর আগে তার সন্তানকে দেখে যাওয়ার আকুতি প্রকাশ করে কেঁদে ফেলেন। তিনি মালিকপক্ষের কাছে তার সন্তানের মুক্তির সম্ভাব্য সময় জানতে চান। এছাড়া জাহাজের প্রধান প্রকৌশলির স্ত্রীর বড়ো ভাই, সেকেন্ড ক্যাডেট মাইনুদ্দিনের বাবা, নাবিক নাজিম উদ্দিনের চাচা জসিম উদ্দিন, নাবিক আবু নাছের আব্দুল্লাহ মজুমদারের পরিবারের সদস্যরা কান্নাভেজা কণ্ঠে তাদের স্বজনদের ফিরিয়ে আনার আকুতি জানান।

এর জবাবে জাহাজ মালিক প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক মেহেরুল করিম বলেন, "আমরা মুক্তিপণ দিতে রাজি, কিন্তু জলদস্যুরা মুক্তিপণের পরিমাণ নিয়ে ওঠানামা করছেন। এছাড়া মুক্তিপণ কাকে-কোথায়-কিভাবে দেব তা নিয়েও আমরা সন্দিহান।" জলদস্যু থেকে সদ্য মুক্ত জার্মান রাসায়নিকবাহী জাহাজ এমটি মারিয়া মার্গারিটের ছেড়ে দেওয়ার উদাহরণ দিয়ে মেহেরুল বলেন, "২৩০ দিন পর মুক্তিপণ নিয়ে এমটি মারিয়াকে ছাড়া হয়েছে। তাদের সব নাবিক সুস্থ আছেন।"

'জলদস্যুদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে"
মতবিনিময়ের সময় স্বজনদের অনেকেই কান্নায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তারা সবাই জলদস্যুদের দাবি করা মুক্তিপণের পরিমাণ এবং জলদস্যুদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চান।

ছিনতাই হওয়া জাহাজ মালিকের পক্ষ জানায়, জিম্মি নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে তারা জলদস্যুদের দাবি করা মুক্তিপণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু জানাননি। তাদের ভাষ্যমতে, আইনি বাধ্যবাধকতা এবং নাবিকদের নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনা করে আমরা মুক্তিপণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে তারা এই মুহূর্তে কিছু বলছেন না।

তবে জিম্মি নাবিকরা ভালো আছেন এবং জলদস্যুরা তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করছেন বলে জানায় মালিকপক্ষ। সভায় ব্রেভ রয়েল শিপিং ম্যানেজম্যান্ট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মেহেরুল করিম উপস্থিত পরিবারের সদস্যদের বলেন, "জলদস্যুদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে। ২৫ ডিসেম্বর সর্বশেষ কথা হয়েছে। ওইদিন জাহাজের ক্যাপ্টেন ফরিদের সঙ্গেও কথা হয়।"

"জাহাজের নাবিকরা সবাই সুস্থ এবং এখনো খাবার ও পানি রয়েছে বলে স্যাটেলাইট ফোনে ক্যাপ্টেন ফরিদ জানিয়েছেন।" ব্রেভ রয়েল শিপিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান পরিবারের সদস্যদের ধৈর্য না হারানোর অনুরোধ জানিয়ে বলেন, "জাহাজ ও জিম্মি নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে আমরা সব ধরণের উদ্যোগ নিয়েছি। তবে তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার স্বার্থে এখনই সব জানাতে চাই না।"

তিনি নাবিকদের পরিবারের সদস্যদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানান। এসময় জিম্মি নাবিকদের পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন হাবীবুর রহমান ও মালিকপক্ষের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

No comments:

Post a Comment