Thursday, February 10, 2011

আশঙ্কা অমূলক নয়

বেশ কিছু দিন ধরেই এমন আশঙ্কা করা হচ্ছিল। এবার প্রধানমন্ত্রীও সেই একই আশঙ্কা প্রকাশ করলেন। চট্টগ্রাম ইপিজেড এলাকায় কিছু দিন আগে বড় ধরনের গোলযোগ হয়েছে। গোলযোগ হয়েছে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন গার্মেন্ট কারখানায়। গার্মেন্ট সেক্টরে একের পর এক অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টির পেছনে নাশকতার কোনো ছক থাকতে পারে_এমন আশঙ্কা অনেক দিনেরই।

সামান্য কারণেও গার্মেন্ট কারখানায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে গার্মেন্টে অগি্নকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ঘটেছে প্রাণহানির ঘটনাও। এর পাশাপাশি ঝিনাইগাতী থেকে প্রায় ১৪ হাজার গুলি উদ্ধারের ঘটনা থেকে চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। কারণ সারা দেশে এ ধরনের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদের আরো বড় বড় মজুদ থাকতে পারে। সব মিলিয়েই দেশের বিরুদ্ধে নাশকতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীও সেই আশঙ্কাই ব্যক্ত করেছেন। আশঙ্কা অমূলক নয়।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন অনেকাংশেই গার্মেন্টনির্ভর। আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যের অনেকটাই নির্ভর করে এই সেক্টরের ওপর। সেই সেক্টরে সম্প্রতি নতুন করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির একটা অপচেষ্টা লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন, তার পেছনে তিনি যুক্তিও দেখিয়েছেন। দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতৃস্থানীয় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উপরন্তু মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের পুরনো আইনটি নতুন করে ফিরে আসছে। এ অবস্থায় দেশের ভেতরে থেকে একটি চিহ্নিত মহল যে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার সব রকম চেষ্টা করবে, তাতে সন্দেহ নেই। পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর স্বাধীনতাবিরোধীদের স্বার্থ সংরক্ষণে অনেক কিছুই করা হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা পেতে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। গত ৩৫ বছরে নিজেদের অনেকখানিই গুছিয়ে নিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। এর পাশাপাশি দেশের ভেতরে জঙ্গিবাদের প্রসার ঘটানো হয়েছে। চিহ্নিত একটি শক্তির সরাসরি সহযোগিতায় দেশে জঙ্গিবাদ শাখা-প্রশাখা বিস্তার করেছে। জঙ্গিবাদের পেছনে একটি চিহ্নিত মহল অর্থায়ন করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় দেশে নাশকতার চেষ্টা যে রাজনৈতিক ধর্মান্ধগোষ্ঠী করতে পারে, এমন ভাবনা একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে ঝিনাইগাতী এলাকায় আবার গুলি উদ্ধারের ঘটনা রীতিমতো উদ্বেগজনক। এ এলাকায় অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনা তো এটাই প্রথম নয়। এর আগেও এ এলাকা থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। ২০০৯ সালে ঝিনাইগাতীর পানবর এলাকা থেকে ১০টি আর্জেস গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছিল। ২০০৭ সালে ঝিনাইগাতীর বাঁকাকুড়া এলাকায় একটি ঘরের মাটি খুঁড়ে প্লাস্টিকের ড্রামভর্তি ২৯ হাজার ১০০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। ২০০৭ সালের ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড় এলাকার বাঁকাকুড়া ও গজনী থেকে বিডিআর আরো ১০ হাজার রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছিল। এসব অস্ত্রের পেছনে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের যেমন যোগসাজশ থাকতে পারে, তেমনি তাদের সঙ্গে বিশেষ সখ্যসম্পন্ন এ দেশের জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোরও সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। পুুলিশ ও বিভিন্ন মহল থেকে এমনটাই সন্দেহ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী যে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন, সেটাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। নাশকতা যে চলছে, তাতে কোনো সন্দেহ না রেখে এই নাশকতার নেপথ্যের অপনায়কদের চিহ্নিত করতে হবে। সারা দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের সর্বাত্মক তৎপরতা চালাতে হবে।

No comments:

Post a Comment