Thursday, February 10, 2011

সংযমী হতে হবে

শেয়ারবাজারে হঠাৎ করেই বড় ধরনের ধস নামে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তৈরি হয় আতঙ্ক। কিন্তু এ পরিস্থিতি সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য দীর্ঘস্থায়ী কোনো সমস্যা নয়। পরদিন অর্থাৎ সোমবারই দেখা গেছে, সূচক আবারও কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
এখানে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নেওয়া রবিবারের কিছু সিদ্ধান্ত সহায়ক হয়েছে_এটা মনে করা যায়। এর পরও বিনিয়োগকারীরা আশ্বস্ত হয়েছেন_এমনটা বলার কোনো কারণ নেই। কিন্তু সত্যি হচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের বিকল্প ব্যবস্থা সামনে না থাকার কারণে তাঁদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা বেড়ে গেছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে এসইসি এবং ডিএসইর সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের বিষয়টিও। বিনিয়োগকারীরা স্পষ্টত দায়ী করেছে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনকে। এর ফলে চক্রবিশেষ অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীর পকেট থেকে।
এর পরও অধৈর্য হয়ে কেউ যেন শেয়ার বিক্রি না করেন_এমন পরামর্শ দিয়েছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ। এ মুহূর্তে রাজপথে বিক্ষোভকারী বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে। সরকারের নৈতিক সমর্থনও বাজারের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় কিছুটা সহযোগিতা করতে পারে। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনের প্রতিটি পদক্ষেপ বিনিয়োগকারীদের শান্ত কিংবা অশান্ত করে তোলার জন্য যথেষ্ট। সেই বিবেচনা মাথায় রেখেই সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনকে অধিকতর সতর্কতার সঙ্গে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে।
শেয়ারবাজারে দরপতন কিংবা দাম বাড়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। তবে এ প্রবণতা যদি ক্রমহ্রাসমান কিংবা ক্রমবর্ধমান হয়, তাহলেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা কিংবা আতঙ্ক তৈরি হতে পারে এবং এর পরিণতিতে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনারও জন্ম হতে পারে। বর্তমানে বাজারে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এর অন্যতম কারণ এটি।
যদিও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে কিছু দিন আগেও এ বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর পরও নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি সম্পর্কে বাজারে নানা প্রশ্ন কিন্তু থেকেই গেছে। তাঁদের দক্ষতা, এমনকি সততা নিয়েও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে, যা প্রায়ই তাঁরা ব্যক্ত করে থাকেন। কিন্তু সরকার এসব জানার পরও এসইসির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। একই কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরাপত্তাহীনতার জন্য সরকারকেও দায়ী করছেন। যদিও বাজারের ওপর সরকারের হাত খুবই সীমিত। শেয়ারবাজারের স্বাভাবিক রীতি অনুযায়ী ঝুঁকি কিংবা লাভ-লোকসানের হিসাবটা বিনিয়োগকারীকেই নিতে হয়। সেখানে সরকারের সার্বক্ষণিক খবরদারির বিষয়টি কাঙ্ক্ষিতও নয়।
এই দরপতনের প্রক্রিয়ায় ষড়যন্ত্রকারীদের হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে অদৃশ্য সিন্ডিকেটের কথাও কেউ কেউ বলছেন। সরকার স্বপ্রণোদিত হয়েও সেদিকে নজর দিতে পারে। কারণ, হালে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নির্ভর করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোতে নাশকতা চালানোর কথাও ব্যাপকভাবে শোনা যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, শেয়ারবাজারেও এমন কোনো ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর অস্তিত্ব আছে কি না তা-ও দেখার দায়িত্ব সরকারের। আর বিনিয়োগকারীদের মনে রাখতে হবে শেয়ারবাজার শুধু লাভেরই বাজার নয়, এখানে লোকসানও একটি স্বাভাবিক বিষয়। ব্যবসায়িক মানসিকতা পোষণ করলেই এই ক্ষোভ প্রশমিত হবে।

No comments:

Post a Comment