Friday, January 21, 2011

উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ ৩ কোটি মানুষ রক্ষায় সক্রিয় একাধিক এনজিও

লবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় অঞ্চলকে রক্ষায় কাজ শুরু করেছে একাধিক বেসরকারি সংস্থা। কিন্তু এসব সংস্থার কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা কৌশলপত্র ও কর্মপরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের বক্তব্য উপকূলীয় অঞ্চলের জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করে মতামতের ভিত্তিতে কর্মপরিকল্পনা করা উচিত ছিল।

কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত ও হুমকির মুখে পড়া এলাকার মানুষদের সাথে কথা না বলেই যে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে তাতে শেষ পর্যন্ত উপকূলকে রক্ষা করা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বেসরকারি সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা। দক্ষিণ উপকূলে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করছে কোস্টট্রাস্ট, হিউম্যানিটিওয়াচ, সিএসআরএল, আভাসসহ একাধিক বেসরকারি সংস্থা।

কোস্টট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী ইত্তেফাককে জানান, পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গরিব দেশগুলোর অস্তিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে। অথচ এজন্য এসব হতদরিদ্র দেশগুলো কোনভাবেই দায়ী নয়। গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য অধিকতর দায়ী ধনী দেশগুলো এখনো কোন দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় উপকূলের বাসিন্দারা হতাশ। তার চেয়েও হতাশার খবর জলবায়ু পরিবর্তনের কৌশলপত্র ও কর্মপরিকল্পনা সরকারিভাবে ইংরেজীতে প্রকাশ করা হয়েছে। যা ভুক্তভোগী অঞ্চলের মানুষ বুঝতে পারছে না। ইকু্যইটি অ্যান্ড জাস্টিস ওয়াকিং গ্রুপ এই কৌশলপত্র বাংলায় ভাষান্তর করে বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মশালার উদ্যোগ নিয়েছে। গত সপ্তাহে বরিশালে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় সরকারি ঐ কৌশলপত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সৈয়দ আমিনুল হকসহ একাধিক বক্তা। ঐ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করতে গিয়ে সংসদ সদস্য তালুকদার মোঃ ইউনুস বলেন, জনগণের অংশগ্রহণ ব্যতিত যে কোন কর্মপরিকল্পনা ও কৌশলপত্র কাজে আসবে না। তিনি উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের মতামত নিয়ে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের পরামর্শ দেন।

তালুকদার মোঃ ইউনুস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ২ দশমিক থেকে ৪ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেলে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দারিদ্র্য এবং পুষ্টিহীনতায় অতিরিক্ত ৩ মিলিয়ন মানুষ মারা যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। ক্ষতিপূরণ আদায়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দাবী উত্থাপন করতে হবে। ইউনিসেফ'র বরিশাল বিভাগীয় প্রধান এএইচ তৌফিক আহমেদ আন্তর্জাতিকভাবে কৌশল নির্ধারণের দাবী জানিয়ে বলেন, সবচেয়ে বেশি আশংকায় পড়েছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দারা। উপকূলীয় এলাকার ১৯টি জেলা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশংকা করা হয়েছে বিশেষজ্ঞ মহলের পক্ষ থেকে। বাংলাদেশের মত নেপাল, মালদ্বীপসহ দরিদ্র দেশগুলোর এই করুণ পরিণতির জন্য দায়ী উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক এনজিও ব্যক্তিত্ব।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর দাবী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলের লাখ লাখ মানুষের জীবন-যাপন হয়ে উঠবে আরো দুর্বিষহ,কঠিন। বাংলাদেশের উপকূল জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে যে হারে বরফ গলছে তাতে ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আরো পাঁচ ফুট বাড়বে। নতুন এই পরিসংখ্যান বিগত দিনের পরিসংখ্যানগুলোর প্রায় দ্বিগুণ। আর এই পরিসংখ্যান সত্যি হলে উপকূলের অবস্থা হবে সবচেয়ে শোচনীয়। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার মতে ৫ ফুট পানি বাড়লে বাংলাদেশের একপঞ্চমাংশ অর্থাৎ উপকূলের ১৯টি জেলা তলিয়ে যাবে। ফলে প্রায় ৩ কোটি মানুষ হবে গৃহহীন, একই সঙ্গে কমে যাবে ফসল উৎপাদন, বাড়বে রোগ-বালাই। ফলে উপকূলের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কোটি কোটি মানুষ এখন তাকিয়ে আছে উন্নত বিশ্বের দিকে। তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় ও উপকূল রক্ষায় সঠিক কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে না পারলে উপকূলকে কোনভাবেই রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

সেভ দ্যা চিলড্রেন জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলের ক্ষতিগ্রস্ত শিশুরা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে এবং একই সঙ্গে শিশুশ্রম বাড়বে। ইতিমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে শিশু পাচার এবং বাল্যবিবাহ বাড়ার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। গ্রামীণ জনউন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জলবায়ু পরিবর্তন কৌশলপত্র প্রণীত হলেও ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের রূপকল্প ২০২১ ও নির্বাচনী ইশতিহারের আলোকে রাষ্ট্রীয় দলিলের পরিমার্জন করা হয়। দেশের সার্বিক উন্নয়নে এ ধরনের পরিকল্পনা অপরিহার্য। কিন্তু উপকূলের মানুষ রক্ষায় খাদ্য নিরাপত্তা সামাজিক সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য, সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো, গবেষণা ও জ্ঞান ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে কৌশল নির্ধারণ প্রয়োজন। তিনি উপকূলীয় জেলার মানুষের সাথে কথা বলে নতুন কৌশল নির্ধারণের দাবী জানান।

No comments:

Post a Comment