Friday, January 21, 2011

ঙ্গীর তুরাগ নদের পারে আজ শুক্রবার প্রথমবারের মতো শুরু হচ্ছে দুই পর্বে তাবলিগ জামাতের ছয় দিনের বিশ্ব ইজতেমা। প্রথম পর্বে অংশ নিচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও বাংলাদেশের ৩৩টি জেলার মুসল্লি।

ইজতেমা মাঠে মুসল্লিদের জায়গার অপর্যাপ্ততা ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় মুসল্লিদের চরম দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে তাবলিগ জামাত কর্তৃপক্ষ এ বছর থেকে দুই পর্বে ইজতেমা করার সিদ্ধান্ত নেয়। গত বছর বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের পর তাবলিগের মুরব্বিরা এ সিদ্ধান্ত নেয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পর আমবয়ানের (সাধারণ আলোচনা) মধ্য দিয়ে ইজতেমার কর্মসূচি শুরু হয়। ভারতের মাওলানা মোহাম্মদ শওকত আলী বয়ান করেন। আগামী রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দুই পর্বে অনুষ্ঠেয় ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হবে। বিশ্ব ইজতেমা শেষ হবে ৩০ জানুয়ারি। বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
ইজতেমার আন্তর্জাতিক নিবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত মাওলানা আবদুল মতিন কালের কণ্ঠকে জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ প্রায় ১০ হাজার বিদেশি মুসল্লি মাঠে এসে পৌঁছেছে। প্রথম পর্বে অংশ নেওয়া মুসল্লিরা আগামী রবিবার নিজ নিজ জেলা ও নতুন জামাতে চলে যাবে। তবে বিদেশি মেহমান ও তাবলিগের মুরব্বিরা মাঠে থাকবে।
মুসল্লিদের সেবা ও নিরাপত্তার জন্য আয়োজক ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পুরো টঙ্গীকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে। দুই পর্বের ইজতেমায় পালাক্রমে একাধিক আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থার প্রায় ২৫ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগেই চটের বিশাল শামিয়ানায় প্রায় ছেয়ে গেছে ইজতেমা ময়দান। আয়োজকরা আশা করছে, এবার জামাতবন্দি হয়ে আসা মুসল্লিদের মাঠে নির্ধারিত খেত্তায় জায়গা হবে। কাউকে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হবে না।
প্রতিবারের মতো এবারও বিশ্ব ইজতেমার কর্মসূচিতে আছে সাধারণ (আম) ও বিশেষ আলোচনা (খাসবয়ান)। উভয় পর্বের দ্বিতীয় দিনে যৌতুকবিহীন বিয়ের আয়োজন হবে। আগ্রহীদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
আমবয়ানের জন্য আন্তর্জাতিক নিবাসের পাশেই লোহার পাইপ ও কাঠ দিয়ে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। এ মঞ্চ থেকে তাবলিগের দেশ-বিদেশের মুরব্বিরা আলোচনা করবে। বয়ানের সুবিধার জন্য মঞ্চে লম্বা পায়ার একটি কাঠের চেয়ার পাতা হয়েছে। বিদেশি মেহমানদের জন্য মঞ্চের আশপাশে হোগলার পাটি বিছানো হয়েছে। তালিম ও খাসবয়ানের জন্য তাশকিল, কাবুওয়ালি জামাত ও জুড়নেওয়ালি জামাতকক্ষ তৈরি করা হয়েছে। বয়ান শোনার জন্য মাঠের বিভিন্ন স্থানে দেড় শ ছাতা মাইক ও পাঁচ শতাধিক লম্বা মাইক টাঙানো হয়েছে। ইজতেমার প্রথম পর্বের মুসল্লিদের জন্য ৪২টি খেত্তা নির্ধারণ করে প্রায় ১০ হাজার খুঁটি বসানো হয়েছে।
ইজতেমার সব কয়টি প্রবেশপথে র‌্যাবের সদস্যরা সন্দেহভাজন মুসল্লিদের শরীর তল্লাশি করে মাঠে প্রবশে করতে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক নিবাসে কেবল বিদেশি মুসল্লি বহনকারী বিশেষ স্টিকারযুক্ত গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। লাল, নীল, সবুজ ও খয়েরি রঙের নিরাপত্তা পাস দিয়ে ‘খেদমত জামাত’কে আন্তর্জাতিক নিবাসে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। মাঠের আশপাশে স্থাপিত পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ও টহলের মাধ্যমে ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের প্রতি সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে।
ইজতেমায় যোগ দিতে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বাস, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চসহ নানা বাহনে করে মুসল্লিদের ঢল নামে। টঙ্গীর আবাসিক এলাকার আÍীয়স্বজনদের বাসা-বাড়িতে মুসল্লিরা ওঠে। এলাকার অলিগলি ও খোলা জায়গায় অস্থায়ী দোকানপাট এবং হোটেল তৈরি করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত গতকাল অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশনের জন্য বেশকিছু দোকানিকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।
র‌্যাবের নিরাপত্তা বেষ্টনী
ইজতেমার মাঠ ঘিরে তিন স্তরে র‌্যাবের ৮০০ সদস্য নিরাপত্তায় দায়িত্বে থাকবে। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, হেলিকপ্টার টহল, ডগ স্কোয়াড ও ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
র‌্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ‘ইজতেমা ময়দানকে পাঁচটি সেক্টরে ভাগ করে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে র‌্যাবের বোম্ব স্কোয়াড, স্ট্রাইকিং ফোর্স ও ডগ স্কোয়াড।
ইজতেমা ময়দান ও সংলগ্ন এলাকার নিরাপত্তা এবং নজরদারির সুবিধার জন্য ইজতেমা ময়দান ঘিরে র‌্যাবের অবজারভেশন পোস্ট থাকবে। মাঠে ছদ্মবেশে ও বিশেষ পোশাকে নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ সোহায়েল কালের কণ্ঠকে জানান, বিশ্ব ইজতেমায় র‌্যাবের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে নিñিদ্র করার লক্ষ্যে পুরো ইজতেমা সময়কালকে চার ভাগ করা হয়েছে। র‌্যাবের কমান্ড পোস্ট থেকে ইজতেমার নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় করা হবে। নৌটহলের মাধ্যমে নদীপথেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে র‌্যাব।
ফ্রি ক্লিনিক উদ্বোধন
ইজতেমায় অংশ নেওয়া মুসল্লিদের বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে প্রায় ৬০টি প্রতিষ্ঠান ফ্রি ক্লিনিক বুথ স্থাপন করেছে। গতকাল হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ, জনকল্যাণ ফার্মাসিউটিক্যালস ও ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস সেবা কার্যক্রম শুরু করেছে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহজহান মিয়া এসব কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। সে সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল ও টঙ্গী পৌরসভার মেয়র আজমতউল্লা খান উপস্থিত ছিলেন।

No comments:

Post a Comment