Friday, January 21, 2011

ক্যারিয়ার বাজি রাখতেও রাজি

'আগে থেকে যদি জানতাম, তাহলে আপনাদের সামনে কাঁদতাম না'-দেশের মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত মাশরাফি বিন মুর্তজা বলছিলেন কাল বিকেলে। সবাই এসে পাশে দাঁড়িয়েছেন। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী সন্ধ্যায় বাসায় এসে সহমর্মিতা জানালেন। টেলিফোনে একই ভাষায় সান্ত্বনা দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি।

দল ঘোষণার একটু আগে নাকি প্রধান নির্বাচকও ফোন করেছিলেন। তবে না পেয়ে এসএমএস করেন রফিকুল আলম। আর তাঁর নিজের শহর নড়াইলে তো রীতিমতো হরতাল পালিত হয়ে গেল! যে ভালোবাসা জড়িয়ে ধরে আরো বড় স্বপ্ন দেখছেন মাশরাফি। বিলীন হওয়া বিশ্বকাপ-স্বপ্ন সত্যি হওয়ার ক্ষণ গণনা করছেন তিনি। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ২২ জানুয়ারি কলম্বো যাচ্ছেন মাশরাফি। যে শহরে উড়ে আসা শৈল্যবিদ ডেভিড ইয়াংয়ের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। জানবেন স্বপ্নের গন্তব্য ২০১১ বিশ্বকাপ, নাকি আবারও অস্ত্রোপচারের টেবিল!
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর একটা লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন মাশরাফি-তিন শ টেস্ট উইকেট। ২০০৩ বিশ্বকাপ তাঁর মনে এঁকে দিয়েছিল তিনটি বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন। 'ইনজুরির কারণে টেস্টেরটা হবে না, তা আমি আগেই জেনে গেছি। কিন্তু ভাবিনি যে তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলতে পারব না!' দল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরও যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না মাশরাফি। এ স্বপ্ন পূরণের জন্য এখনো তিনি মরিয়া, 'এই বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে যদি আর কোনোদিন ক্রিকেট না-ও খেলতে পারি, তাতেও আমার কোনো দুঃখ হবে না।' দিন গুনছেন ডেভিড ইয়াংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতেরও, ‘২২ তারিখ কলম্বো যাব। পরদিন ওর (ইয়াং) সঙ্গে দেখা হবে। দেখি কী বলে।’
ডেভিড ইয়াংয়ের মতামতের জন্য অপেক্ষা করছেন নির্বাচক থেকে শুরু করে বোর্ড পরিচালকও। যদি অস্ট্রেলীয় এ সার্জন সবুজ সংকেত দেন, যদি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিক গতিতে ছুটতে শুরু করে ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’...। প্রধান নির্বাচক রফিকুল আলম কালও বলেছেন, ‘ফিট হয়ে গেলে মাশরাফির বিশ্বকাপে খেলার জোর সম্ভাবনা আছে।’ সেই সম্ভাবনার পথ খুলে দিয়ে বসে আছে আইসিসির টেকনিক্যাল কমিটির নির্দেশনা। এ নির্দেশনায় ইনজুরির কারণে দলে পরিবর্তনের সুযোগ আছে। তাহলে কি মাশরাফি ফিট হলেই ধরে-বেঁধে কাউকে ইনজ্যুরড দেখিয়ে দল থেকে বের করে দেওয়া হবে?
বাংলাদেশের ঘোষিত বিশ্বকাপ দলের সর্বশেষ মেডিক্যাল রিপোর্টেও টুকটাক ইনজুরির খবর আছে। গোড়ালির চোটের কারণে প্রিমিয়ার লিগের শেষ দিকের দুটি ম্যাচ খেলতে পারেননি শফিউল ইসলাম। ইনজুরির কারণে শেষ লিগ ম্যাচটাই খেলেননি রুবেল হোসেন। নাজমুল হোসেনের ইনজুরির ট্র্যাক রেকর্ড আছে। তার ওপর বিশ্বকাপের মূল প্রস্তুতি ম্যাচের আগেও কয়েকটা ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ দল। যেমন ১ ফেব্র“য়ারি তিন দিনের চট্টগ্রাম সফরেও প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবেন সাকিব আল হাসানরা। এসবের ধাক্কায় যে কেউই ইনজুরিতে পড়তে পারেন। রফিকুল আলম তাই বলছেন, ‘বিশ্বকাপের এখনো প্রায় এক মাস বাকি। এ সময়ে কত কিছুই তো হতে পারে!’
নিজের পথ খুঁজতে অন্য কারো ইনজুরি কামনা করছেন না মাশরাফি। তাঁর চিন্তাজুড়ে নিজের ফিটনেস। ডেভিড ইয়াং যদি বলেন যে তাঁর পক্ষে বিশ্বকাপে বল করা সম্ভব, তাহলে আপাতত অস্ত্রোপচারে না গিয়ে তিনি ফিরে আসবেন আর অপেক্ষা করবেন স্বপ্ন পূরণের সুযোগের। দরজা যে পুরো বন্ধ হয়ে যায়নি, সেটা তো প্রধান নির্বাচক ইতিমধ্যেই জানিয়ে রেখেছেন। আর যদি ডেভিড ইয়াং অন্য কিছু বলেন, তাহলে চলে যাবেন অস্ত্রোপচারের টেবিলে, বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন পূরণ করতে যে অস্ত্রোপচারটা তিনি পিছিয়ে দিয়েছিলেন, ‘ইয়াং যদি অপারেশনের কথা বলে, তাহলে শ্রীলঙ্কায়ই করিয়ে ফেলতে পারি। অযথা আর সময় নষ্ট করে লাভ কি!’
সময়। সময়কে পেছনে ফেলেই ছুটতে চেয়েছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। জাতীয় দলের ফিজিও মাইকেল হেনরির প্রাথমিক মূল্যায়ন ছিল ৫ ফেব্র“য়ারি দুই পা দৌড়ে বল করতে পারবেন মাশরাফি। কিন্তু ক্যারিয়ারকে বাজি রেখে সে সময়ের ১৮ দিন আগে নেটে বল করেছেন তিনি। মাশরাফির নিজের বিশ্বাস, ‘বিশ্বকাপের আগে আমি পুরো ফিট হয়ে যাব ইনশাল্লাহ।’ অবশ্য তার জন্য দরকার ডেভিড ইয়াংয়ের অনুমোদন। এরই মধ্যে বার দুয়েক টেলিফোনে কথা হয়েছে দুজনের। তবে সামনাসামনি দেখে চূড়ান্ত মূল্যায়ন করতে চান ডেভিড ইয়াং। সেই সাক্ষাতে মাশরাফির সঙ্গে থাকবেন ফিজিও মাইকেল হেনরিও।

No comments:

Post a Comment