Friday, January 21, 2011

ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়েও মিলছে না চাল

খোলাবাজারে ন্যায্যমূল্যে চাল বিক্রিতে ( ওএমএস) চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম হওয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও মিলছে না চাল। ফলে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে অনেক ক্রেতাকে।

রাজধানীতে ওএমএম-এর চাল বিক্রির বিভিন্ন স্পটে সোমবার গিয়ে দেখা যায়, কম মূল্যে চাল পাওয়ার আশায় অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ের কয়েক ঘন্টা আগে স্পটে হাজির হয়েছেন। মুহূর্তেই তা দীর্ঘ লাইনে পরিণত হয়। চাল দেয়া শুরু হয়, কিন্তু লাইন ছোট হয় না। ক্রমেই তা আরো দীর্ঘ হয়।

ডিলাররা বলছেন, চাহিদার তুলনায় চালের বরাদ্দ কম। কিন্তু ক্রেতা অনেক বেশি। চাল বিক্রি শুরুর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তা শেষ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে ক্রেতাদের খালি হাতে ফিরতে হয়।

গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় আব্দুলস্নাহপুর স্পটে গিয়ে দেখা যায়, তখনো চাল বিক্রির ট্রাক আসেনি। কিন্তু চাল কেনার জন্য দীর্ঘ লাইন পড়ে গেছে।

৮০ বছরের বৃদ্ধ সোনামিয়া আগেরদিন লাইনে দাঁড়িয়ে চাল না পাওয়ায় সোমবার সকাল ৭টার ভিতরেই চাল কিনতে চলে আসেন। আগেভাগে এসেও ১৫/১৬ জনের পেছনে পড়ে গেছেন। বারবার তাকাচ্ছিলেন ট্রাকের উপরে চালের বস্তার দিকে। সোনামিয়া বলেন, 'বাড়িতে খাইনাওয়ালা মেলা। তাই চাইল নিতে লাইনে দাঁড়াইছি।' বয়স বেশি হলেও কেউ তাকে আগে চাল নিতে দেয় না বলে আক্ষেপ করেন তিনি। 'গতকাল পাই নাই , আইজ চাল নিতেই হইব' জোরের সাথে বললেন ষাটোধর্্ব আব্দুল গফুর। রোদের মধ্যে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, 'রোদে লাইনে দাঁড়িয়ে কষ্ট হইলে কি হইব, জানতো বাঁচাতে হইব। সরকার কম দামে চাল না দিলে যে কি হইতো।'

চাল বিক্রির আরেক স্পট এফডিসি গেইট রেলক্রসিং এলাকায় গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করে অনেকেই যখন ২টার দিকে চাল নিতে আসেন তখন চাল শেষের পথে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয় তাদের।

শুধু এই দুই স্পটেই নয়, রাজধানীর পান্থপথ, পলাশী, আজিমপুর, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, শ্যামলী, কামরাঙ্গারীরচরসহ অন্যান্য স্পটেও দেখা গেছে একই চিত্র। ১ জানুয়ারি থেকে চাল বিক্রির আরো ১৫টি স্পট বাড়িয়ে বর্তমানে ৮০টি স্পটে খোলা ট্রাকে চাল বিক্রি করছে খাদ্য বিভাগ। প্রতি স্পটে ৩ টন করে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু এই বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল।

আব্দুলস্নাহপুর স্পটের ডিলার হোসেন বলেন, সরকার যে চাল দেয় তা দুপুর ২টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। চালের বরাদ্দ আরো বাড়ানো উচিত।

সরকারের সংস্থা টিসিবির হিসাবে বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায়। কিন্তু সরকার ওএমএস'র চাল বিক্রি করছে ২৪ টাকা কেজিতে। প্রতি কেজিতে দামের পার্থক্য ১১ থেকে ১২ টাকা। যে কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও এখন ওএমএস'র চাল কিনতে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন।

আমনের ভরা মৌসুমে হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষের সুবিধার্থে রাজধানীর পাশাপাশি সারাদেশে ন্যায্যমূল্যে খোলাবাজারে চাল বিক্রি শুরু করেছে খাদ্য বিভাগ। সারাদেশে প্রতিটি উপজেলা সদরে প্রতিদিন ৫টি স্পটে ১ টন করে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। ওএমএস'র পাশাপাশি ১ জানুয়ারি থেকে ফেয়ার প্রাইস কার্ডের মাধ্যমেও প্রতি মাসে ন্যায্যমূল্যে ১০ কেজি করে চাল ও গম দেয়ার কর্মসূচি শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না।

খাদ্য বিভাগসূত্র জানিয়েছে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেভাবে ন্যায্যমূল্যে চাল বিক্রি করা হচ্ছে, তাতে চালের বাজারের উপর একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কিন্তু সরকারের মজুদ যথেষ্ট পরিমাণে না থাকায় ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ন্যায্যমূল্যে চাল বিক্রির পরিমাণ বাড়ানো যাচ্ছে না। তবে ওএমএস-এ নানা অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে।

খাদ্য বিভাগসূত্র আরো জানিয়েছে, ট্রাকের সংখ্যা সীমিত হওয়ায় রাজধানীর সব স্থানে চাল বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। চাল বিক্রির কার্যক্রম তদারকির জন্য যে লোকবল প্রয়োজন তাও নেই। তবে চাল বিক্রির স্পটের সংখ্যা শিগ্গির আরো বাড়ানো হবে।

খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ইত্তেফাককে বলেছেন, স্বল্প আয়ের মানুষের কথা বিবেচনা করে ন্যায্যমূল্যে চাল বিক্রির কেন্দ্র ও পরিমাণ আরো বাড়ানো হচ্ছে। যাতে মানুষকে চাল না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে না হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম যেভাবে বেড়েছে তা অস্বাভাবিক। তবে সরকারের ন্যায্যমূল্যে চাল বিক্রির ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

চট্টগ্রামে ফেয়ার প্রাইস কার্ডে চাল বিক্রি শুরু

এদিকে আমাদের চট্টগ্রাম অফিসের রফিকুল ইসলাম সেলিম জানান, চট্টগ্রামে চালের মূল্য সহনীয় রাখতে ওএমএস'র সাথে শুরু হয়েছে ফেয়ার প্রাইস কার্ডের মাধ্যমে ন্যায্য মূল্যে চাল ও গম বিক্রি। মহানগরীর ২৫টি স্পটে ট্রাকে খোলা বাজারে চাল বিক্রি চলছে। একজন ডিলার প্রতিদিন তিন টন করে চাল বিক্রি করছেন।

ফেয়ার প্রাইস কার্ডের আওতায় ৪৭ জন ডিলারের মাধ্যমে চাল ও গম বিক্রি শুরু হয়েছে। নগরীর ষোলটি ওয়ার্ডের প্রায় ৪৭ হাজার দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে মাসে দশ কেজি করে চাল ও গম বিক্রি করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের সবকটিতে এই ফেয়ার প্রাইস কার্ডধারীদের মাঝে চাল ও গম বিক্রি করা হবে। আর তখন দুই লাখ ৫ হাজার স্বল্প আয়ের পরিবার এই প্রকল্পের আওতায় আসবে।

খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা আশা করছেন, সরকারের দরিদ্র বান্ধব এই উদ্যোগের ফলে এই অঞ্চলে চালের দামের ঊধর্্বগতি কিছুটা হলেও নিম্নমুখী হবে। দাম সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত এসব কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও তারা জানান।

No comments:

Post a Comment