Monday, February 07, 2011

সরকারের জন্য সতর্ক সংকেত

শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী এলাকা থেকে পুলিশ পরিত্যক্ত অবস্থায় প্রায় ১৪ হাজার রাইফেলের গুলি উদ্ধার করেছে। বাঁকাকুড়া গুচ্ছগ্রামের একটি পরিত্যক্ত মাটির ঘরে আটটি বস্তায় প্লাস্টিকে মোড়ানো অবস্থায় গুলিগুলো পাওয়া যায়। এই বিপুল পরিমাণ গুলি দেখে স্থানীয় জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমবর্ধমান অবনতির পেছনেও এ ধরনের অস্ত্র ও গুলির উৎস কাজ করছে বলে অনেকের ধারণা। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, গুলিগুলো ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম বা উলফা সদস্যদের হতে পারে। এগুলো দেশীয় কোনো জঙ্গি বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীরও হতে পারে_সে আশঙ্কাও পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। ইতিমধ্যে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, বিগত জোট সরকারের আমলে এলাকাটিতে উলফা সদস্যদের অবাধ বিচরণ ছিল বলে অভিযোগ আছে। তাদের সঙ্গে স্থানীয় জঙ্গি সংগঠনগুলো, বিশেষ করে হরকাতুল জিহাদ বা হুজির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। তারা স্থানীয় সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র ও গুলি বিক্রি করত বলেও বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। বর্তমান সরকার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রশ্রয় না দেওয়ার ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় তারা এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী সদস্য ধরাও পড়ে। কাজেই গুলিগুলো কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের হওয়া বিচিত্র নয়। নিঃসন্দেহে বিষয়টি আমাদের জন্য গভীর উদ্বেগের। যেকোনো সময় এসব গুলি হাতবদল হয়ে এ দেশীয় জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের হাতে চলে আসতে পারত।
দেশব্যাপী বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবনতি লক্ষ করা যাচ্ছে, তা থেকে আমাদের নিষ্কৃতি পেতে হবে। আর সে জন্য সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাওয়ার উৎস বন্ধ করতে হবে। কারণ, অস্ত্র ও গোলাবারুদ যত সহজলভ্য হবে, দেশে তত বেশি নতুন নতুন সন্ত্রাসী তৈরি হবে, তত বেশি বাড়বে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। যত দূর জানা যায়, দেশের বেশ কিছু সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে অবাধে আসছে অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ। কিছুদিন আগে সীমান্তপথে অস্ত্র চোরাচালান নিয়ে আমরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ করা যায়নি। জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে এবং সরকারের অস্তিত্বের স্বার্থেও দেশে অবৈধ অস্ত্রের অনুপ্রবেশ কঠোরভাবে দমন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সামান্য অবহেলাও দেশের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। স্বাধীনতার প্রায় চার দশক পর বাংলাদেশ সরকার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তাতে দেশের চিহ্নিত কিছু ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল এবং বিশেষ একটি গোষ্ঠী, যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তারা নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিচ্ছে। সেসব ষড়যন্ত্রের মধ্যে নাশকতার ষড়যন্ত্রও রয়েছে_এ কথা সরকারের পক্ষ থেকেও স্বীকার করা হয়েছে। কাজেই বর্তমান সরকারকে বিষয়টি মাথায় রেখে সারা দেশ থেকে অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

No comments:

Post a Comment