Thursday, December 02, 2010

প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর

বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়নে জাপান সব সময়ই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরকালে নতুন সহযোগিতার আশ্বাস মিলেছে। বাংলাদেশের জন্য এটা অনেক বড় পাওয়া। বিশেষ করে পদ্মা সেতু নির্মাণে অতিরিক্ত ১০ কোটি ডলার সাহায্যের আশ্বাস মিলেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী নাওতো কান স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে এই অতিরিক্ত ঋণ সহায়তা দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। ২৯০ কোটি ডলার ব্যয়ের এ বিশাল প্রকল্পে জাপান আগেই ৩০ কোটি ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।জাপান অনেক দিন আগে থেকেই বাংলাদেশে নানা প্রকল্পে সহায়তা করে থাকে। বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগও কম নয়। প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরের ভেতর দিয়ে দুই দেশের বর্তমান সম্পর্ক আরো জোরদার হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিত করা গেলে বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ আরো বাড়বে। বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগের পরিবেশ রয়েছে। অর্থনীতিতে মন্দাভাব কাটিয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকস প্রণীত পরবর্তী ১১টি উদীয়মান দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে আরো একটি মার্কিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করছে বলে স্বীকার করেছে। তবে এটাও ঠিক, জাপানের সঙ্গে বেশ কিছু ক্ষেত্রে বাণিজ্য ঘাটতিও রয়েছে। এসব বাণিজ্য ঘাটতি দূর করাও জরুরি। প্রধানমন্ত্রী সেদিকেও আলোকপাত করেছেন। বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে জাপানের সঙ্গে একটি সমন্বিত চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের জিএসপি বা জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস সুবিধা লাভের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে 'রুলস অব অরিজিন' শিথিল করার জন্য জাপান সরকারকে অনুরোধ
করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
বিদ্যুৎ, অবকাঠামো, আইটি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পরিবহন, টেঙ্টাইলসহ অন্যান্য খাতে জাপানের বিনিয়োগ আহ্বান করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আশা করা যেতে পারে, প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরের ভেতর দিয়ে জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। গভীর সমুদ্রবন্দর, নতুন বিমানবন্দর, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণসহ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় জাপান সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
যেকোনো দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কোন্নয়নের প্রথম শর্ত পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়ন। বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক সব সময়ই বন্ধুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের উন্নয়নে জাপান সব সময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ আরো বাড়ানোর জন্য এখন কাজ করতে হবে। দুই দেশের মধ্যে সম্ভাবনার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন একটি লাভজনক অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। জাপানের মতো বিনিয়োগকারী দেশের কাছে বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করে তুলে ধরতে পারলে সেটা বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরের মধ্য দিয়ে উভয় দেশের জন্য সম্ভাবনার সেই নতুন দিগন্তই উন্মোচিত হতে যাচ্ছে বলে মনে করা যেতে পারে।

No comments:

Post a Comment