Thursday, December 02, 2010

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রীর বৈঠক

ভোজ্যতেলের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে গত সোমবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘ইচ্ছামতো তেলের দর বাড়ানো যাবে না। বাড়ানোর যুক্তি থাকতে হবে।’ তাঁর এই বক্তব্য ন্যায্য। কিন্তু প্রশাসন যেখানে উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণে পদক্ষেপ নিতে নিষ্ক্রিয় থাকে, সেখানে শুধু অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে আর হুকুম করে তা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
বাণিজ্যমন্ত্রী সভায় উপস্থিত ব্যবসায়ীদের তেলের নতুন দর নির্ধারণ না করে, কক্ষ ত্যাগ না করার কথা বলেন। বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন মরিয়া আচরণ থেকে বোঝা যায়, মূল্য নিয়ন্ত্রণে ভবিষ্যতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে ব্যাপারে সরকার আসলে কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
গত ২৪ নভেম্বর প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বোতলজাত সয়াবিনের দাম এক দিনেই লিটারপ্রতি বেড়ে যায় ছয় থেকে ১৩ টাকা। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম তখন কমতির দিকে। এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজির কথাই বলা হচ্ছে। বাজারের স্বাভাবিক নিয়মও এ দেশে কার্যকর নয়। এ অবস্থায় সরকার কয়েক দিন পর পর হুংকার দিলে তো বাজারের নৈরাজ্য দূর করা যাবে না।
দ্রব্যমূল্য হঠাৎ বেড়ে গেলে বিপাকে পড়ে ভোক্তারা। উদারনৈতিক ব্যবস্থায় বাজারের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ ন্যূনতম থাকলেও কেউ বাজার কারসাজি করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে, তা ঠেকানোর ব্যবস্থা থাকে। বাংলাদেশে বারবার এমন সংকট সৃষ্টি হওয়া থেকে বোঝা যায়, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আমাদের ব্যবস্থাগত আয়োজন মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ। নিয়মিত বাজার তদারকি না থাকা, বাজারের চাহিদা ও জোগানের হালনাগাদ অবস্থা না জানা ইত্যাদি কারণে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি সহজ হচ্ছে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ে বর্তমান নৈরাজ্য নিরসনে সরকারের কার্যকর হস্তক্ষেপ করার সম্ভাবনা বা সামর্থ্য আছে—এমন কোনো আশা ভোক্তাদের মনে জাগাতে পারেনি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রীর এই বৈঠক। নিত্যপণ্যের মূল্য তদারকির ভূমিকা পালনে সরকারের ব্যর্থতা ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার সুযোগ করে দিচ্ছে। প্রয়োজনে বাজারে পর্যাপ্ত পণ্য জোগান দেওয়ার ব্যবস্থা কার্যত সরকারের হাতে নেই। তাই এখন ইচ্ছামতো দর না বাড়ানোর কথা বলে খুব বেশি সুফল পাওয়ার আশা করা যায় না। ব্যবসায়ী ও ভোক্তার স্বার্থের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ প্রয়োজন। প্রয়োজন মূল্য নির্ধারণে সরকারের কার্যকর হস্তক্ষেপ, শুধু হম্বিতম্বি হিতে বিপরীত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাজার অর্থনীতিতে স্বীকৃত উপায়গুলো ব্যবহারে সরকারকে দক্ষ হতে হবে। চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করাই হলো আসল কাজ।

No comments:

Post a Comment