Thursday, December 02, 2010

আনন্দ স্কুলের অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম

বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কবলে নিপতিত হইয়াছে আনন্দ স্কুলের কার্যক্রম। ইহাতে এই স্কুলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাহত হইতেছে। সদ্য সমাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির হার ছিল সর্বাধিক। বিষয়টি অনুসন্ধান করিতে গিয়া উদঘাটিত হইয়া পড়ে নানা অনিয়মের চিত্র। ইহার আগে এই ধরনের কোন কোন স্কুলে একজন মাত্র শিক্ষার্থী রহিয়াছে এমন সংবাদও প্রকাশিত হইয়াছে পত্র-পত্রিকায়। অর্থাৎ ছাত্র-ছাত্রী না থাকিলেও ভুয়া শিক্ষার্থীর নামে প্রকল্পের অর্থ উত্তোলন করা হইয়াছে ঠিকই।
এইসব স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীতে এবার ছিল ১ লক্ষ ৯০ হাজার শিশু। তন্মধ্যে পাবলিক পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার। রেজিস্ট্রেশনের সময় বাদ পড়ে ৫৫ হাজার শিক্ষার্থী। তাহার উপর সমাপনী পরীক্ষায় ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী ছিল অনুপস্থিত। বিষয়টি নিঃসন্দেহে হতাশা ও উদ্বেগজনক।

সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার পথে প্রধানতম বাঁধা ঝরিয়া পড়া শিশু। ইহার মূল কারণ দারিদ্র্য ও অসচেতনতা। কাহারও মতে, সরকারি স্কুলের নিরানন্দময়তা। তাই প্রাথমিক বিদ্যালয় হইতে ঝরিয়া পড়া ৭ হইতে ১৪ বৎসর বয়সী ৫ লক্ষ শিশুকে শিক্ষার আওতায় আনিতে বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় ১৯৯৫ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গ্রহণ করে রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন বা রস্ক প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় গড়িয়া ওঠে ১৫ হাজার আনন্দ স্কুল। বর্তমানে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০১৩ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হইয়াছে এবং ২০১০-২০১১ সালের জন্য ব্যয় ধরা হইয়াছে ৬৫ কোটি টাকা। কিন্তু অভিযোগ পাওয়া যাইতেছে যে, এই প্রকল্পের বেশির ভাগ অর্থ জাতীয় ও স্থানীয় এনজিও, পরামর্শদাতা ও মনিটরিংয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত এলজিইডির পিছনেই ব্যয় হইতেছে। স্কুল পরিচালনায় ব্যয় বাড়িলেও শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র একজন।

পর্যবেক্ষকদের মতে, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে বিদেশী দাতা সংস্থার ঋণে গড়িয়া উঠা অধিকাংশ প্রকল্পের অর্থব্যয়ে যথেচ্চ্ছাচারের কাহিনী সুবিদিত। বাংলাদেশে চলমান এই ধরনের বিভিন্ন প্রকল্পের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সাধারণত আমরা বলিয়া থাকি ঋণ করিয়া ঘি খাইতে নাই। কিন্তু আমাদের কার্যকলাপে ইহার কোন প্রয়োগ নাই বলিলেই চলে। ফলে সেসব প্রকল্পে খাজনার চাইতে বাজনা বেশি হইবে ইহাই স্বাভাবিক। অনেক এনজিও প্রকল্পের অর্থের যোগানদার মূলত সরকার এবং তাহা পাবলিক মানি হিসাবে পরিগণিত। এনজিওগুলি শুধু সেই প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী। যেহেতু শেষপর্যন্ত ঋনের বোঝা জনগণকেই বহিতে হয় এবং ইহার সহিত দেশের উন্নয়নের প্রশ্ন জড়িত, তাই এইরূপ অর্থও নয়-ছয়ের বদলে তাহার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করিতে হইবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় তদারককারী সংস্থাকে হইতে হইবে আরও সক্রিয়।

No comments:

Post a Comment