Thursday, December 02, 2010

শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন হোক

জুম্ম জনগণ পাহাড়কে নিজের ঠিকানা ভাবতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এখনো। স্বস্তি নেই অনেকের। পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে সরকার যাত্রা করেছিল, সেই যাত্রা বিঘি্নত হয়েছে মাঝখানে। মানুষের প্রত্যাশা ছিল, চুক্তিসম্পাদনকারী রাজনৈতিক দলের সরকারে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে হয়তো শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন হতে এবার আর দেরি হবে না। কিন্তু বাস্তব হচ্ছে, শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সাফল্য আশানুরূপ হয়নি এখনো।
শুধু তা-ই নয়, পাহাড়ের মানুষ আবারও সন্দেহ প্রকাশ করতে শুরু করেছে, আদৌ চুক্তি বাস্তবায়ন হবে কি না। তাদের অভিযোগ অনুযায়ী, প্রশাসনই তাদের সেই অনিশ্চিত অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে। আজ ত্রয়োদশ বর্ষপূর্তি হচ্ছে শান্তিচুক্তি সম্পাদনের। সরকারের ব্যর্থতা কিংবা চুক্তি সম্পাদনে অমনোযোগী হওয়ায় সেখানে যে অনিশ্চিত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এবং শান্তিচুক্তি বিরোধীচক্র। তাদের কাজে ইন্ধন জুগিয়ে চলেছে সমতলেরও একটি গোষ্ঠী।
অথচ সরকার গঠনের আগে আওয়ামী লীগ ও মহজোটের শরিক দলগুলো পার্বত্য শান্তিচুক্তি সম্পর্কে প্রায় একই বক্তব্য উপস্থাপন করেছিল। মহাজোটের অঙ্গীকার ছিল, সরকার গঠন করার পর তারা পর্যায়ক্রমে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর ভূমি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েও খুব একটা এগিয়ে যেতে পারেনি তারা। ভূমি জরিপ করতে গিয়ে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। ভূমি কমিশন আইন ২০০১ নিয়ে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে মতভেদ, তা কাটিয়ে আস্থাশীল পরিস্থিতি তৈরি করা সরকারের দায়িত্ব। পার্বত্যবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মও পাহাড়িদের সন্তুষ্ট করতে পারছে না। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর দাবি অনুযায়ী নিরাপত্তার নামে হয়রানিও বন্ধ হয়নি সেখানে। পাহাড়ি-বাঙালি কোন্দল কোথাও কোথাও মৃত্যুর কারণ হতেও দেখা যায়, যাকে কোনোতেই মেনে নেওয়া যায় না। সম-অধিকার আন্দোলন নামের একটি সংগঠন সম্পর্কে পাহাড়িরা যে অভিযোগ উত্থাপন করেছে, সে সম্পর্কে সরকারকে তদন্তসাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বর্তমান সরকারি দল কর্তৃক সম্পাদিত চুক্তির কারণে পাহাড়ে যে শান্তির সূচনা হয়েছে এবং তাদের এ কাজে যেভাবে পাহাড়ের মানুষ সমর্থন দিয়েছে, সেদিকটি খেয়াল রেখে এ সরকারকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। একসময় পাহাড়িরা সশস্ত্র আন্দোলনে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশকে পৃথিবীর বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বিরোধপূর্ণ দেশগুলোর কাতারে ঠেলে দিয়েছিল। পার্বত্য শান্তিচুক্তি সম্পন্ন করার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার বিপথগামী পাহাড়িদের নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে আনার যে সাফল্য অর্জন করেছে, তা অবশ্যই ইতিহাসে স্থান পাওয়ার মতো। এ জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বাংলাদেশের যে ইমেজ তৈরি হয়েছে, তাকে ধরে রাখার দায়িত্ব সরকারেরই। আর চুক্তির উদ্যোগ ও সাফল্যের জন্য যেমন এ সরকার সাধুবাদ পেতে পারে বেশি, এর বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রেও তেমনি তাদের সে-রকম সাফল্য পাহাড়ি-বাঙালি জনগোষ্ঠী প্রত্যাশা করে। শান্তি যেন পাহাড়ের পরিচয় হয়, সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যেতে হবে সরকারকে আর পাহাড়ি এবং সেখানে বসবাসকারী বাঙালিদেরও মনে রাখতে হবে, মতানৈক্য তাদের শান্তি কেড়ে নেবে। স্থায়ী শান্তি ফিরে আসুক পাহাড়ে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

No comments:

Post a Comment