Thursday, December 02, 2010

পাথরখেকো!

দেশজুড়ে খাওয়া-খাওয়ির অন্ত নেই। যার যেমন ইচ্ছে, তেমনটিই যেন খাওয়ার মহোৎসব চলছে। ইচ্ছে করলেই যেন খেয়ে ফেলা যায়। সব কিছুই যেন ভক্ষণযোগ্য। কোনো কিছুই তো আর বাদ যাচ্ছে না। এখানে বন খাওয়া হয়েছে। বনের গাছ বাদ যায়নি। বাদ যায়নি খাসজমি থেকে শুরু করে প্রতিপক্ষের জমিও। যার যেমনটি ক্ষমতা সে অনুযায়ী খাওয়া হয়েছে। একেকজনের খাওয়ার ধরন একেক রকম। কেউ সাইনবোর্ড টাঙিয়ে খেতে অভ্যস্ত। কেউ কোনো কিছু বুঝতে না দিয়েই গ্রাস করতে দড়।
এ খাদকদের হজমশক্তিও অস্বাভাবিক। হজম করতে না পেরে কাউকে কিছু উগরে দিতে বাধ্য হতে হয়েছে_এমন উদাহরণ খুঁজে পাওয়া বোধ হয় দুষ্কর। খাওয়া-খাওয়ির বিরুদ্ধে নানা কথা বলা হচ্ছে। হর্তাকর্তা যাঁরা, তাঁরাও এ খাওয়া-খাওয়ির বিরুদ্ধে কথা বলছেন। উচ্চারিত হচ্ছে সাবধানবাণী। কিন্তু সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করার সময় নেই খাদকদের। কেবল ভক্ষণেই সুখ এই ভক্ষক বা খাদকদের।
এবার খোঁজ পাওয়া গেল পাথরখেকোদের। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনসে বিনা বাধায় চলছে পাথর উত্তোলন! পাথর তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মাটির নিচ থেকে নির্বিচারে তোলা হচ্ছে পাথর। বাদ যাচ্ছে না ফসলি জমিও। সেই পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে রাস্তা ও বাড়ি নির্মাণের কাজে। কেউ কেউ আবার সীমানা প্রাচীর তৈরি করছে এ পাথর দিয়ে। শুধু পাথর নয়, মাটির নিচ থেকে বালুও তোলা হচ্ছে। এতে দ্বীপের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু পাথরে 'ভাগ্য ফেরাতে' ব্যস্ত যাঁরা, তাঁদের সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার সময় নেই। অথচ এই দ্বীপটিকে ১৯৯৫ সালে 'প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা' ঘোষণা করা হয়েছিল। সেখানে কোনো নির্মাণকাজ করতে হলে অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। সে অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজনও মনে করা হচ্ছে না। মানা হচ্ছে না নিয়ম। এর নেপথ্যের কারণ হচ্ছে প্রভাব। যে মহলটি এ পাথর ও বালু উত্তোলনের পৃষ্ঠপোষক, তাদের প্রভাব আছে। এই প্রভাবশালীদের যে বাগে আনা যাচ্ছে না_সেটা বলাই বাহুল্য। পরিবেশ ছাড়পত্রের তোয়াক্কা না করেই তাই সেন্টমার্টিনসে গড়ে উঠছে ভবন। তৈরি করা হচ্ছে বাণিজ্যিক পর্যটন কটেজ। পরিবেশ অধিদপ্তরের স্থানীয় কর্মকর্তারা বিষয়টি তাঁদের ঊর্ধ্বতন মহলে জানানোর পরও প্রভাবশালী এই পাথরখেকোদের পাথর ভক্ষণ থেমে নেই। থেমে নেই দ্বীপের বালু ও মাটি কাটার কাজ!
এভাবে পাথর তোলা, বালু উত্তোলন ও মাটি কাটার ফলে সেন্টমার্টিনস দ্বীপের পরিবেশ ও ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। সেখানে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। দেশের এই একমাত্র প্রবাল দ্বীপটি সংরক্ষণের দায়িত্ব সবার। কেবল কিছু অর্থলোভী মানুষের লোভের কাছে পরাজিত হবে একটি দ্বীপের পরিবেশ? নষ্ট হবে জীববৈচিত্র্য? নষ্ট হবে দেশের পর্যটনের এমন অনিন্দ্য আকর্ষণ? প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারাবে একটি প্রাকৃতিক দ্বীপ? এটা কি মেনে নেওয়া যায়?

No comments:

Post a Comment