Thursday, December 02, 2010

হত্যা মামলার পুনরুজ্জীবনঃ এক নম্বর আসামির নাম বাদ দিলে ন্যায়বিচারের পথ রুদ্ধ হবে

রাজনৈতিক রং চড়িয়ে মিরপুরের আফতাব হত্যা মামলাটি প্রত্যাহার যে সঠিক ছিল না, আদালতের নির্দেশে মামলাটির পুনরুজ্জীবনই তার প্রমাণ। তবে সেটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি মামলার ১৯ আসামির মধ্যে এক নম্বর আসামির নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ায়। গত সোমবার প্রথম আলোয় আফতাব হত্যা মামলা প্রত্যাহারের খবর প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ট মহলে চাঞ্চল্য দেখা যায়। ওই দিনই আইন ও বিচারসংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা করা এবং আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যাখ্যাও চেয়ে পাঠানো হয়।
হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারসংক্রান্ত কমিটির সভাপতি ও আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামও স্বীকার করেছেন, আদালতের ত্রুটিযুক্ত আদেশের কারণে শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম প্রত্যাহার করা হয়েছিল। শুধু কি ত্রুটিযুক্ত আদেশ? মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশের পেছনে অন্য কোনো কারণ ছিল কি না, তা তদন্ত করে দেখা জরুরি। ২০০৫ সালে সংঘটিত এই হত্যার চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে এক নম্বরে ছিলেন ওসমান গনি। তিন নম্বর আসামি ছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদত। ওসমান গনিকে আওয়ামী লীগের কর্মী দাবি করে মামলাটি প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছিলেন স্থানীয় সাংসদ কামাল মজুমদার। তাঁর সুপারিশের ভিত্তিতেই মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, ওসমান গনি আওয়ামী লীগের কর্মী নন।
আইন প্রতিমন্ত্রী আদালতের ত্রুটি সংশোধন করে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। কিন্তু এক নম্বর আসামির নাম বাদ দেওয়ায় ন্যায়বিচার পাবেন না বলে আশঙ্কা করছেন নিহত ব্যক্তির ভাই ও মামলার বাদী। কেউ আওয়ামী লীগের কর্মী হলেই মামলা থেকে রেহাই পেতে পারেন না; দেখতে হবে হত্যার সঙ্গে আসামি জড়িত ছিলেন কি না। মামলার তালিকাভুক্ত ১৯ আসামির বিরুদ্ধেই আইনি প্রক্রিয়া চলতে হবে। আদালতই নির্ধারণ করবেন, কে অপরাধী আর কে নির্দোষ। তার আগেই কোনো আসামির নাম বাদ দিলে সেটি হবে ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদত বিদেশে পলাতক থাকার পরও বাদীকে কে বা কারা ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন, সেটিও আমলে আনতে হবে। সে ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে কোনো আসামির নাম বাদ দেওয়া হলে বিচারের পথই রুদ্ধ হয়ে যাবে।

No comments:

Post a Comment