Thursday, December 02, 2010

চালের দামঃ সরকারকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে

লন পর্যাপ্ত হয়েছে, কিন্তু চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এটা মোটেও স্বাভাবিক নয়। দেশে চালের বাজারের এই অস্বাভাবিক প্রবণতা লক্ষ করে খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির শঙ্কা ও উদ্বেগ প্রকাশ যথার্থ। তবে আমাদের মনে হয়, এই শঙ্কা-উদ্বেগ সরকার তথা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সর্বদা সজাগ থাকলে চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানো অসম্ভব হবে না।
ভালোভাবে খতিয়ে দেখা দরকার, পর্যাপ্ত ফলন হওয়া সত্ত্বেও চালের দাম বাড়ার প্রবণতার কারণগুলো কী। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মঙ্গলবারের সভার পর বলেছেন, এবার ধানের ফলন ভালো হওয়ায় একশ্রেণীর চালকলমালিক অস্বাভাবিক পরিমাণ চাল মজুদ রাখছেন—মূলত এ কারণেই চালের দাম বাড়ছে। আমাদের মনে হয়, এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধানের প্রয়োজন আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গম ও চালের দাম কম নয়; এবং খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়ে বিভিন্ন দেশ বেশ সজাগ রয়েছে, তারা চাল রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করছে নিজ জনগোষ্ঠীর চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়ে। এসব কারণে চালের বাজার নিয়ে দেশে-বিদেশে সতর্কতা রয়েছে। তবু আমাদের চাল আমদানি করার সুযোগ আছে; আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে আট লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি হওয়ার কথা। আর দেশের বিভিন্ন গুদামে সাড়ে সাত লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে বলে সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে।
সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাজার থেকে চাল সংগ্রহ করবে না। এই সিদ্ধান্ত সঠিক বলেই মত দিয়েছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। কারণ, সরকার কৃষকদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করে কৃষকদের ফসলের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিশ্চিত করতে। এবার এমনিতেই বাজারে দাম বেশি, কৃষকেরা ধান-চালের ন্যায্যমূল্যই পাচ্ছেন। অবশ্য, যদি দেখা যায়, কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না, তখন সরকার হস্তক্ষেপ করে। বর্তমান পরিস্থিতিতে চালের দাম নির্ধারিত হবে বাজারের নিজস্ব পদ্ধতিতেই এবং দৈনন্দিন পরিস্থিতির ওপর দাম কিছুটা ওঠানামা করবে। সরকারের কর্তব্য হবে এই দৈনন্দিন গতিবিধির ওপর গভীরভাবে লক্ষ রাখা, যাতে কোনো ধরনের কারসাজি বা অসদুপায়ের সুযোগ কেউ নিতে না পারে। সংসদীয় কমিটি সুপারিশ করেছে ‘অসাধু’ চাতালমালিকদের মজুদদারি ঠেকাতে তাঁদের ঋণের সীমা মিলের মোট উৎপাদনক্ষমতার সমমূল্যের অর্ধেকে নামিয়ে আনার। কিন্তু এর ফল উল্টো হতে পারে বলে মন্তব্য করলেন একজন বিশেষজ্ঞ। বরং ঋণগ্রহীতা চাতালমালিকদের ঋণ সমন্বয় করার সময়সীমা কমিয়ে দেওয়ার যে নির্দেশনা গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংক দিয়েছিল, তাতে সুফল পাওয়ার কথা। কারণ, দ্রুত ঋণ সমন্বয় করতে হলে দীর্ঘ সময় চাল মজুদ করে রাখার সুযোগ থাকে না। এই ব্যবস্থা কতটা ফলপ্রসূ হয়েছিল তার মূল্যায়ন সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখে এ রকম সিদ্ধান্ত গ্রহণই অধিকতর ফলপ্রসূ হতে পারে।
এ ছাড়া অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যায্যমূল্যে চাল বিক্রি কার্যক্রমের সুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা ও নাজুক জনগোষ্ঠীর মৌলিক খাদ্যচাহিদা মেটানোর ব্যবস্থাগুলোর আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

No comments:

Post a Comment