Thursday, December 02, 2010

কোপেনহেগেন হইতে কানকুন

লবায়ু পরিবর্তনের কারণে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের অন্যতম বাংলাদেশ। সোমবার মেক্সিকোর কানকুন জলবায়ু সম্মেলন শুরু হইয়াছে। আমরা বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবগুলি আমরা প্রত্যক্ষ করিতেছি। উহার প্রভাবে তাপমাত্রার ঊধর্্বগতি, হিমবাহ গলনাঙ্কের নিচে নামিয়া আসা হইতে শুরু করিয়া সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও দীর্ঘায়িত খরা মৌসুম উলেস্নখযোগ্য। যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সমস্যা মোকাবিলার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহা হইলে, আমাদের গ্রহে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মারাত্মক বিপর্যয়ের কারণ হইয়া দেখা দিবে।
মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলন একটি সুন্দর ও ইতিবাচক সুযোগ সৃষ্টি করিতেছে বলিয়া আশাবাদ ব্যক্ত করিয়া চলিয়াছেন অনেকে। অভিজ্ঞ মহলের অনেকে আবার হতাশ। তাহারা কোপেনহেগেনের সম্মত প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের ওপরই বেশি গুরুত্ব দিতেছেন।

প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়, গত বৎসর কোপেনহেগেনে যে অগ্রগতি অর্জিত হইয়াছিল উহাকে অবশ্যই অধিকতর আগাইয়া লইয়া যাইতে হইবে কানকুনে। সেই সময়ের মূল বিষয়গুলির অসমাপ্ত আলোচনা। কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, গৃহীত কর্মসূচীর স্বচ্ছতা বজায়, অর্থায়ন, অভিযোজন, প্রযুক্তি ও আমাদের বন সংরক্ষণ সমস্যা বিশেষভাবে উলেস্নখযোগ্য। এইসব বিষয়ে একটি 'ভারসাম্যপূর্ণ' ফলাফল খুঁজিয়া বাহির করিতে হইবে। আমরা অবশ্যই প্রত্যাশা করিব, কোপেনহেগেনের অর্জনটুকুরও গুরুত্ব অনুবাধন করিবেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ।

'কোপেনহেগেন চুক্তি'র সংকল্পটিকে সম্মুখে রাখিয়াই নূতন করিয়া যাত্রা করিতে হইবে সকলের। ঐ চুক্তি হইতে দূরে সরিয়া গিয়া কোনো প্রকার 'বারগেইন' কিংবা দর কষাকষি করিয়া কালক্ষেপণ করা কাহারও জন্য কোনো সুফল বহিয়া আনিতে পারিবে না।

বাংলাদেশসহ পৃথিবীর ১৪০টি দেশ কোপেনহেগেন চুক্তিতে স্বাক্ষর করিয়াছে। বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তিগুলি আন্তর্জাতিক মান ও মাত্রা বজায় রাখিয়া কার্বন নিঃসরণ কমাইয়া আনিবার কর্মকাণ্ডে অঙ্গীকারও করিয়াছে। কোপেনহেগেন চুক্তির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তথ্যাভিজ্ঞমহল বলেন, অর্থনৈতিক সাহায্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির উন্নয়নে, অভিযোজনে ও বন সংরক্ষণে ব্যয় করা হইবে। জলবায়ুর কার্বন দূষণ বন্ধ করিতে না পারিলে সম্ভবত আগামী শতকে শিল্পোন্নত দেশগুলিও বিপন্ন হইবে। তখন পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বও ভয়াবহ সংকটের সম্মুখীন হইবে। আমাদের সবুজ গ্রহটিকে সকলের জন্য বাসযোগ্য করিয়া রাখিতে কোপেনহেগেন চুক্তি ও কানকুনে জলবায়ু পরিবর্তন বৈঠক বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমষ্টিগত প্রয়াস ও প্রচেষ্টাকে সংহত করিবে, এমনটিই প্রত্যাশিত।

No comments:

Post a Comment