Monday, January 24, 2011

মহাদেশে মহাপস্নাবন

কল বিচারেই ভয়াবহ আকার ধারণ করিয়াছে অস্ট্রেলিয়ার বন্যা পরিস্থিতি। চরমে পেঁৗছিয়াছে বন্যাকবলিত হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ। সংকটাপন্ন হইয়া পড়িয়াছে দেশটির অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ।

সেইসাথে ইহাও স্পষ্ট হইয়া গিয়াছে যে, গত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বাপেক্ষা ভয়াবহ বলিয়া বিবেচিত এই বন্যার অভিঘাত শুধু অস্ট্রেলিয়ার অভ্যন্তরেই সীমাবদ্ধ থাকিবে না; বিশ্ব অর্থনীতিতেও ইহার নেতিবাচক প্রভাব অনিবার্যই বলা চলে। খাদ্যশস্য, বিশেষ করিয়া গমের বাজারে ইতিমধ্যে সেই আলামতও স্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে। কারণ বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ গম রফতানিকারী এই দেশটি আদৌ তাহাদের গম রফতানির প্রতিশ্রুতি পূরণ করিতে পারিবে কিনা তাহা লইয়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে যথেষ্ট সংশয় রহিয়াছে। অস্ট্রেলিয়ার কয়লার উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল অর্থনৈতিক পরাশক্তি_জাপান, ভারত, ইউরোপ ও চীনসহ সংশিস্নষ্ট দেশগুলির উদ্বেগ আরও বেশি। কয়লা সরবরাহে বর্তমান অচলাবস্থা অব্যাহত থাকিলে ইহার প্রভাব সর্বব্যাপী হইতে বাধ্য। অতএব, এই উদ্বেগকে হালকা করিয়া দেখার কোনো অবকাশ নাই।

উলেস্নখ্য, ক্রিসমাসের ঠিক পূর্বক্ষণে শুরু হওয়া নজিরবিহীন এই বন্যায় ইতিমধ্যে ফ্রান্স ও জার্মানির আয়তনের সমপরিমাণ এলাকা তলাইয়া গিয়াছে। কৃষি খামার ও কয়লা খনিসমৃদ্ধ অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য কুইন্সল্যান্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা এখন পানির নীচে। সর্বাপেক্ষা উদ্বেগের বিষয় হইল, বন্যার তাণ্ডবে দেশটির সুবৃহৎ কয়লাশিল্পে উৎপাদন প্রায় বন্ধ হইয়া গিয়াছে। রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হইয়া পড়ার কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হইতেছে কয়লা ও খাদ্যশস্যসহ সামগ্রিক রফতানি বাণিজ্য। এমনকি দেশের অভ্যন্তরেও খাদ্যশস্য পরিবহন করা কঠিন হইয়া পড়িয়াছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হইতে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত লাগিয়া যাইতে পারে বলিয়া সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তারা মনে করেন। শুধু কৃষি খাতেই ক্ষতির পরিমাণ এক বিলিয়ন ডলার ছাড়াইয়া যাইতে পারে বলিয়া প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হইতেছে। অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাও কল্পনাকে হার মানাইতে পারে বলিয়া তাহাদের আশঙ্কা।

প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন যে, দীর্ঘদিন যাবৎ কারণে-অকারণে বাংলাদেশকে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার দেশ বলিয়া পরিহাস করা হইত। অবস্থানগত কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যে আমাদের নিত্যসঙ্গী তাহাতে দ্বিমত করিবার কিছু নাই। তবে আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশগুলিও যে অনুরূপ বা আরও ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হইতে পারে_ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে ইতিমধ্যে তাহা বিশ্ববাসীর ভালোভাবেই জানা হইয়া গিয়াছে। অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে এই মহাপস্নাবনের প্রধান শিক্ষাটি হইল, প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত হইতে কাহারও নিস্তার নাই। ধনী-গরিব এবং উন্নত-অনুন্নত কোনো দেশই দুর্যোগের ঝুঁকি হইতে মুক্ত নহে। আমেরিকায় উপর্যুপরি ঘূর্ণিঝড়ের ছোবল এবং সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ার বন্যার ভয়াবহতা বিশ্ববাসীকে তাহা আবারও মনে করাইয়া দিয়াছে মাত্র। দুর্যোগের চিত্র সর্বত্রই অভিন্ন। তফাত শুধু এইটুকু যে, দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি সামাল দেওয়ার জন্য উন্নত দেশগুলিকে কাহারও দ্বারস্থ হইতে হয় না। কারণ নিজেদের সমস্যা বা সংকট মোকাবিলার মতো সম্পদ ও প্রযুক্তি তাহাদের আছে। অস্ট্রেলিয়াও ব্যতিক্রম নহে। প্রধানত নিজেদের সম্পদ দিয়াই তাহারা বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছে। আমরা সেই উদ্যোগের সর্বাত্মক সফলতা কামনা করি। অস্ট্রেলিয়ার সরকার ও বন্যাদুর্গত জনগণের প্রতি রইল আমাদের গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা।

No comments:

Post a Comment