Monday, January 24, 2011

উজবেকিস্তান কাজাখস্তান

তাসখন্দ এক সময় ছিল রাশিয়ায়। এখন উজবেকিস্তানের রাজধানী এই তাসখন্দ। আকাশ পথে লাদাখ উপত্যকা, হিন্দুকুশ পর্বত, কারাকোরাম পর্বতমালা পেরিয়ে এখানে যাওয়া যায়। পথে পড়ে বিরাট পর্বতমালা আর বরফাবৃত চূড়া। বিপুল সাহস আর ইচ্ছা নিয়ে সেই কতকাল আগে শাসক, পরিব্রাজকরা যুগে যুগে এই পথ পেরিয়েছে।

তাসখন্দ থেকে যাওয়া যায় ঐতিহাসিক শহর সমরখন্দ এবং বুখারার দিকে। সমরখন্দ ছিল তৈমুরলঙের রাজধানী। তারও আগে চেঙ্গিস খাঁ এখানে লুটপাট করেন। সমরখন্দ একটা পুরনো মরুদ্যান। এখানে অসংখ্য স্থাপত্য যা দেখতে দু'-তিনদিন লেগে যায়। সমরখন্দের একটা অংশ প্রাচীন রয়ে গেছে।

সমরখন্দ থেকে বুখারায় যাওয়া যায়। বুখারায় রয়ে গেছে অসংখ্য মসজিদ আর মাদ্রাসা। এরমধ্যে বিবিখানা মাদ্রাসা খুব বিখ্যাত। এখানকার স্থাপত্য দেখার জন্য একদিনের প্যাকেজ টু্যরের ব্যবস্থা আছে। বুখারাতে নানা জাতের, নানা ধর্মের লোকের বসবাস। বুখারার বাজার আর চায়খানা অপূর্ব। মোলস্না নাসিরুদ্দীনের জন্মস্থান এই বুখারা। এখানে তার একটা চমৎকার মূর্তি আছে, খচ্চরের পিঠে বসে আছেন তিনি। এই মূর্তির চারপাশে ছোট ছোট চায়খানা। দেখে মনে হবে, এরা সবাই যেন মোলস্না নাসিরুদ্দীনের গল্প বলছে। বুখারা-সমরখন্দের রাস্তায় রাস্তায় ধ্রুপদী সংগীত শোনা যায়। এই সব শিল্পী সারেঙ্গি-দোতারা ব্যবহার করেন। বুখারা হতে তাসখন্দের পথ প্রায় চারশো কি. মি.। এই রাস্তায় একদিকে রুক্ষ-মরু অঞ্চল, তাকে ঘিরে আছে তিয়েনশানের বরফ ঢাকা চূড়া, পামীর মালভূমি। অন্যদিকে মাইলের পর মাইল টিউলিপ ফুটে রয়েছে।

কাজাখস্তানে গেলে প্রথমেই চোখে পড়বে চিমিকেন্ট বলে একটা ছোট শহর। সেখান থেকে ফরঘনায় যাওয়া যায়। তাসখন্দ থেকে ফরঘনা যেতে প্রায় ১২ ঘন্টা সময় লাগে। আকাশ পথে আধঘন্টা। ফরঘনা সুলেমান পর্বত শ্রেণী, পামীর, তিয়েনশান পর্বতমালা দিয়ে ঘেরা। জানা যায়, ফরঘনা ছিল ফুলে ফুলে ভরা আশ্চর্য সুন্দর এক রাজ্য। এখানে বৃষ্টি হয় না। চারদিকের পর্বতের বরফগলা পানি মাটির তলা দিয়ে যাবার ব্যবস্থা ছিল বলে ফরঘনা এত সবুজ। ফরঘনায় আন্দিজান আর ওশ- এই দুটোই বড় শহর। আন্দিজান মোঘল সম্রাট বাবরের জন্মস্থান। এ শহরে সারা বছর ফুলে ভর্তি থাকে। রাস্তায় রাস্তায় গোলাপ ফুলের গাছ। সর্বত্র পানির ব্যবস্থা উন্নত। এই কৃত্রিম পানির ব্যবস্থা না থাকলে ফরঘনা মরুভূমি হয়ে যেতো।

কিরঘিজস্তান পুরোটাই পার্বত্য অঞ্চল। তিয়েনশান পর্বতমালা দিয়ে ঘেরা। এর একদিকে চীন, একদিকে উজবেকিস্তান, একদিকে কাজাখস্তান। কিরঘিজরা যাযাবর উপজাতি। এদের মধ্যে অনেকেই গরমকালে তাঁবুতে থাকে। এগুলোকে ইয়ুর্দ বলে। এখানের মানুষের মধ্যে অদ্ভুত সরলতা। বিসকেক এখানের উলেস্নখযোগ্য শহর। এখানের ওশ বাজার বিখ্যাত। বিসকেক থেকে ইসুকুল লেক ঘন্টা চারেকের পথ। সাড়ে সাত-আট হাজার ফিট ওপরে চলিস্নশ বর্গ কি. মি. জায়গা নিয়ে বিশাল এই ইসুকুল লেক। এর চারদিকে তিয়েনাশান পর্বতমালা। জেনেভা, কানাডার হ্রদ অঞ্চলের চেয়েও নাকি এটি সুন্দর। নোনা পানির হ্রদ। তাই শীতকালে চারদিকে বরফ থাকলেও এই হ্রদের পানি জমে না, আর পানির রঙও তেমনি একেবারে টলটলে নীল। হ্রদের চারপাশে ছোট ছোট কিরঘিজ গ্রাম। ইসুকুল হ্রদে সূর্যোদয়, সূর্যাস্তের দৃশ্যও অকল্পনীয়।

No comments:

Post a Comment