Monday, January 24, 2011

পুলিশ সপ্তাহ ও পুলিশের সক্ষমতা

ত ৪ জানুয়ারী হইতে সারা দেশে পালিত হইতেছে পুলিশ সপ্তাহ ২০১১। পুলিশ বাহিনীর দক্ষতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধিই ইহার মূল উদ্দেশ্য। এ উপলক্ষে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন মাঠে উদ্বোধনী বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ সদস্যদের ভয়-ভীতি ও অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী না হইয়া আন্তরিকভাবে কাজ করিয়া যাওয়ার আহ্বান জানাইয়াছেন।

আইনভঙ্গকারী সামাজিকভাবে যতই শক্তিশালী হউক, তাহাদের শাস্তি নিশ্চিত করার কথা বলিয়াছেন তিনি। প্রকৃতপক্ষে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা বিধানে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা সব সময়ই জরুরি ও অনস্বীকার্য।

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম একটি জনবহুল দেশ। বেসরকারি হিসাবে এখানকার জনসংখ্যা ১৬ কোটি ছাড়াইয়া গিয়াছে। একেতো জনবহুল দেশ, তাহার উপর দারিদ্র্যপীড়িত। স্বাভাবিক কারণেই এখানকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। অন্যদিকে, আধুনিক সমাজ জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দিক দিয়া যতই অগ্রসর হইতেছে, ততই অপরাধের গতি-প্রকৃতি বদলাইয়া যাইতেছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী পুলিশ বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি না পাইলে তাহাদের নিকট হইতে কার্যকর ভূমিকা আশা করা যায় না। জানা মতে, পুলিশ বাহিনীর বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১ লক্ষ ২৪ হাজারের অধিক। আর থানার সংখ্যা ছয় শতাধিক। সাম্প্রতিককালে পুলিশের কনস্টেবল হইতে শুরু করিয়া ইন্সপেক্টর পর্যন্ত ১৩ হাজার পদ সৃষ্টি করা হইয়াছে। তাহার পরও জনসংখ্যা অনুপাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা অনেক কম। প্রায় তেরশত মানুষের বিপরীতে রহিয়াছে একজন পুলিশ। এই অবস্থায় থানা ও পুলিশের সংখ্যা আরও বাড়ানো আবশ্যক। বিশেষত রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরাঞ্চলে জনসংখ্যার অনুপাতে এরূপ সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করিয়া দেখা প্রয়োজন। কেহ কেহ মনে করেন, এখন ঢাকা শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডেই থানা স্থাপন করিতে হইবে।

পুলিশ বাহিনীর সক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়ানোর কথা আমরা প্রায়শ বলিয়া থাকি। আসলে দক্ষতার বিষয়টি কেবল প্রশিক্ষণ, দৈহিক সামর্থ্য এবং বুদ্ধিমত্তার উপরই নির্ভর করে না। এজন্য আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদিও প্রয়োজন। আধুনিক বিশ্বে সমাজ ব্যবস্থা যেমন অনেক জটিল হইয়াছে, তেমনি যুদ্ধ-বিগ্রহ ও উত্তাপ-উত্তেজনায় অস্ত্র ব্যবসাও সম্প্রসারিত হইয়াছে। এখন একজন সাধারণ সন্ত্রাসীর কাছে যেই অস্ত্র আছে, তাহা অনেক সময় পুলিশের কাছেও থাকে না। আজকাল পৃথিবীর হতদরিদ্র ও পশ্চাৎপদ দেশেও পুলিশকে রাস্তায় দাঁড়াইয়া বা আইন অমান্যকারী গাড়ির পিছনে পিছনে দৌড়াইয়া দায়িত্ব পালন করিতে দেখা যায় না। অথচ ইহাই আমাদের এখানকার প্রাত্যহিক চিত্র। ইহা পুলিশের জীবনের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। গত এক দশকে দায়িত্ব পালন করিতে গিয়া সাড়ে তিনশতেরও বেশি পুলিশ নিহত হইয়াছেন যাহার ক্ষতি অপূরণীয়।

পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ পৃথিবীর সব দেশেই আছে। তাহার পরও বাস্তবতা হইল, নানা আইনি সহায়তা ও নিরাপত্তার জন্য আমাদের পুলিশের কাছেই যাইতে হয়। আমাদের পুলিশ বাহিনী ১৮৬১ সালের পুরাতন আইন দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কারণে নানা সমস্যাই হইতে পারে। ভারত ও পাকিস্তান ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের বিভিন্ন আইনের সংস্কার করিলেও এ ব্যাপারে আমরা এখনও দ্বিধান্বিত। প্রস্তাবিত পুলিশ অধ্যাদেশের প্রয়োজনীয় রদবদল শেষে নূতন আইন কার্যকর করা জরুরি। পুলিশের যানবাহন, আবাসন ও অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো সংক্রান্ত সমস্যা দূর করিয়া সর্বপ্রকার লজেস্টিক সাপোর্ট বাড়াইতে হইবে। বাড়াইতে হইবে বেতন-ভাতাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা। সেইসঙ্গে পুলিশ বাহিনীকে দায়িত্বশীল, অধিক সক্রিয় ও জনগণের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন হইতে হইবে।

No comments:

Post a Comment