Monday, January 24, 2011

এখনো আশাঃ মাশরাফির বিশ্বকাপ-স্বপ্নে নতুন রং

ডেভিড ইয়াং কী বলতে পারেন, সে সম্পর্কে আগাম ধারণা নিয়েই কলম্বো গিয়েছিলেন তিনি। গতকাল সাক্ষাতের পর অস্ট্রেলীয় এ শৈল্যবিদের মূল্যায়নের সঙ্গে পূর্বধারণা মিলে যাওয়ায় কি মাশরাফি বিন মুর্তজার বিশ্বকাপ-স্বপ্ন আরো ডালপালা মেলল?

দল ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় এ স্বপ্ন নিয়ে সরাসরি কিছু বলতে রাজি নন মাশরাফি। তবে আগামী দিন দশেক পর 'নড়াইল এঙ্প্রেস'কে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলতে দেখলে অবাক হবেন না। কারণ মাশরাফির মাঠে ফেরার জন্যই যে অপারেশনের সময় পিছিয়ে দিয়েছেন ইয়াং!
কাল দুপুরে ডেভিড ইয়াংয়ের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও না পেয়ে একটু চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন মাশরাফি। তবে একটু পর হোটেল লবিতে মুত্তিয়া মুরালিধরন ও ফারভিজ মাহরুফের সার্জনের ঠিকানা খুঁজে পান। একই হোটেলে আছেন ডেভিড ইয়াং। তাঁকে দেখাতেই সাতসকালে তাজ সমুদ্রে উপস্থিত লঙ্কান ওই দুই তারকা। মুরালিধরনদের পালা শেষে ডেভিড ইয়াংয়ের রুমে ঢোকেন মাশরাফি। জেনেছেন, যেসব কথা মনে এঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেসব ভুল নয়, 'লিগামেন্ট যে ছিঁড়েছে, সেটা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে পড়ে যাওয়ার সময় হাঁটুর শব্দ শুনেই বুঝেছিলাম। পুরোটা ছিঁড়েনি। অবশ্য পুরোটা ছিঁড়লেও একই ব্যবস্থাপত্র দিতেন ডাক্তার। আজ হোক কাল হোক, দীর্ঘদিন ক্রিকেট খেলতে হলে আমাকে অপারেশন করাতেই হবে।'
দুই হাঁটুতে এরই মধ্যে ছয়বার অস্ত্রোপচার করানো মাশরাফির এ লিগামেন্ট-সংক্রান্ত ধারণাকে অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী বলে উড়িয়ে দেওয়া কঠিন। কারণ নভেম্বরে চোট পাওয়ার পর থেকে মাশরাফির পূর্বধারণার সঙ্গে মিলেছে ডাক্তারি পরীক্ষার ফলও! তাই বলে এখনই সপ্তমবারের মতো অস্ত্রোপচারের টেবিলে শুচ্ছেন না তিনি, 'অপারেশন করালে অন্তত ছয় মাস বসে থাকতে হবে। তবে লিগামেন্ট একটু আর পুরো ছিঁড়ে যাওয়ার মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। সেই অপারেশনই করাতে হবে। ডেভিড বলেছেন, হাতে যেহেতু সময় আছে, সেহেতু আরেকটু অপেক্ষা করাই ভালো।'
বলার অপেক্ষা রাখে না যে মাশরাফিকে অপেক্ষায় রাখছে বিশ্বকাপ-স্বপ্ন। যদি পুরোপুরি সেরে ওঠেন। ফিট মাশরাফি যে বাংলাদেশ দলের সম্পদ, এটা তো প্রধান নির্বাচক-কোচ সবাই স্বীকার করছেন। দল ঘোষণার সময় ম্যাচ ফিটনেসের কথাই বলছিলেন সংশ্লিষ্টরা। কে জানে, তাঁদের একটা বড় চমকই দেন কি না মাশরাফি। কারণ কলম্বোর উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগেই প্রিমিয়ারে নিজের ক্লাব আবাহনীর তাঁবুতে গিয়ে তিনি জানিয়ে গিয়েছেন সুপার লিগের শেষ দুটি ম্যাচ খেলার ইচ্ছার কথা, 'সুপার লিগের শেষ দুটি ম্যাচ খেলার ইচ্ছা আছে। দিন দশেক পর হবে ম্যাচগুলো।'
১০ দিন পর মাশরাফিকে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলতে দেখলে আর যে-ই অবাক হন না কেন, ডেভিড ইয়াং হবেন না। তবে হয়েছিলেন। ২০০৩ সালের মাশরাফি নাকি এখনো ডেভিড ইয়াংয়ের কাছে বিস্ময়। কালও মাশরাফিকে তা মনে করিয়ে দিয়েছেন এ শৈল্যবিদ, 'ঠিক এ রকম চোট নিয়েই পুরো একটা বছর ক্রিকেট খেলেছিলে তুমি।' যা শুনে আশার ভেলায় আরো স্বস্তিতে ভাসছেন মাশরাফি, 'ডেভিড সবসময় মনে করে ফিটনেসটা ভালো বোঝে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটার। তাই সব কিছু আমার ইচ্ছার ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।'
মনের সঙ্গে বোঝাপড়ার জন্যই চোট পাওয়ার পর মাশরাফিকে চার সপ্তাহ সময় দিয়েছিলেন ডেভিড ইয়াং, 'এ ধরনের চোট পেলে বিশ্রাম জরুরি। তাই চার সপ্তাহ সময় দিয়েছিলেন যেন আমি আমার অবস্থা ঠিকমতো বুঝতে পারি। সত্যি বলতে কি, এ সময়ে আমার মনের জোর আরো বেড়েছে।' শুধু মনের জোরই নয়, মাশরাফির চোট পাওয়া হাঁটুর পেশি গঠনকে দারুণ ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন ইয়াং, 'লিগামেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হলে পেশি তৈরিতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু আমার সে সমস্যা হয়নি। যেটাকে সবচেয়ে পজিটিভ দিক বলে মনে করছেন ডেভিড।'
অপারেশন থিয়েটার আর চেম্বারে দেখা করতে করতে ডেভিড ইয়াং যেন মাশরাফির ব্যক্তিগত চিকিৎসক! তাই মাশরাফির কাছে সবচেয়ে ভরসার জায়গাও এ অস্ট্রেলীয়। সেই ডেভিডের সঙ্গে দেখা করার পর দ্রুত মাঠে ফেরার ব্যাপারে আশাবাদী মাশরাফি, 'রিস্ক হয়তো আছে। আছে জেনেই আমি দ্রুত মাঠে ফিরতে চাচ্ছি। সামনে কী আছে, জানি না। শুধু জানি আমি খেলতে চাই!'
তবে মাশরাফি জানেন তাঁর মাঠে ফেরার বিষয়টি নির্ভর করছে অন্য আরেকজনের ওপর, 'দেশে ফিজিও (মাইকেল হেনরি) দেখছেন। দেখি উনি কী বলেন।' জাতীয় দলের এ ফিজিও অপেক্ষা করছেন ডেভিড ইয়াংয়ের লিখিত প্রতিবেদনের, 'এখনো সেটি হাতে পাইনি। সম্ভবত কাল (আজ) জানাতে পারব।' সোয়া ৩টায় মাশরাফি ঢাকায় নেমেই হয়তো ফিজিওর মূল্যায়ন জানতে পারবেন। নির্বাচকদের দাবি অনুযায়ী যাঁর রিপোর্টের কারণে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে রাখা হয়নি মাশরাফিকে।

No comments:

Post a Comment