Monday, January 24, 2011

২৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সেনা মোতায়েন অনিশ্চিত

গামী ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ১৩টি পৌরসভা এবং জাতীয় সংসদের হবিগঞ্জ-১ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে উপনির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত ছিল, ১৩ পৌরসভার মধ্যে মাগুরা, ঝালকাঠি, মাধবদী, মাদারীপুর, কঙ্বাজার, চকরিয়া ও টেকনাফে ভোট গ্রহণের দুই দিন আগে থেকে পাঁচ দিনের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে। আর চরফ্যাশন ও মহেশখালীতে মোতায়েন থাকবে নৌবাহিনী। কিন্তু গতকাল রবিবার সে সিদ্ধান্ত পাল্টে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন গতকাল মাগুরা, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, মাধবদী, কঙ্বাজার
ও চকরিয়া পৌরসভার জন্য দুই প্লাটুন করে এবং চরফ্যাশন, মহেশখালী, পার্বতীপুর, জাজিরা, মদন, দাগনভূঞা ও টেকনাফে এক প্লাটুন করে বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি পৌরসভার জন্য এক থেকে দুই কম্পানি/প্লাটুন করে র‌্যাব মোতায়েনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আরো সিদ্ধান্ত, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা ভোট গ্রহণের দুদিন আগে (২৫ জানুয়ারি) থেকে নির্বাচনী এলাকা ও ভোটকেন্দ্র টহল দেবে। আর ভোট গ্রহণের দিন প্রতিটি কেন্দ্রে স্থায়ীভাবে মোতায়েন থাকবে। ভোট গ্রহণ শেষে ভোট গণনা কক্ষের চারপাশে নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করে দায়িত্ব পালন করবে তারা। এ ছাড়া বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল ঘোষণার পর রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে ফলাফল একীভূত করা এবং ফলাফল পরিবেশনের আগে থেকে ওই কার্যালয়ের চারপাশে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে প্রবেশ পথেও দায়িত্ব পালন করবে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (পৌর-১) মো. আবদুল বাতেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এক সপ্তাহ আগে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্ধারিত পৌরসভাগুলোয় সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করার জন্য সশস্ত্রবাহিনী বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সে সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না, আমার জানা নেই।'
তবে কমিশন সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট অপর একজন কর্মকর্তা জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেনা মোতায়েন না করার পক্ষে কিছু যুক্তি উপস্থাপন করায় সেসব যুক্তি গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করে নির্বাচন কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমাদের জানানো হয়েছে, সেনাবাহিনীর ফায়ারিং মহড়া থাকার কারণে নির্বাচনে তাদের দায়িত্ব পালন অসুবিধাজনক হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া নির্বাচন হয়ে যাওয়া পৌরসভার বেশ কয়েকটিতে সেনাবাহিনী নিয়োগ করে তেমন কোনো সুফল মিলেছে বলে মনে হয়নি। সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকার পরও কয়েকটি পৌরসভায় ব্যালট বাঙ্ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। আবার সেনাবাহিনী মোতায়েন না থাকা সত্ত্বেও বিএনপির আশঙ্কার বিপরীতে সেখানে তাদের সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে।'
এদিকে এর আগে এম সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, জাতীয় সংসদের দুই আসনের উপনির্বাচন ও পৌরসভা নির্বাচনেও সেনা মোতায়েন থাকছে। এ ছাড়া তিনি বলেন, সেনাবাহিনীকে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়নি বলে ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাঙ্ ছিনতাইয়ের ঘটনায় তাদের কিছু করার ছিল না। এবারে তারা ভোটকেন্দ্রেও দায়িত্ব পালন করবে এবং এতে আইনগত কোনো বাধা নেই। বিশেষ করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সেনাবাহিনীসহ সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরই অংশ।
উপনির্বাচনে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত বহাল থাকছে কি না_এ প্রশ্নে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, জাতীয় সংসদের নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের পক্ষে আইন নেই। সোমবার (আজ) এ নির্বাচন সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠক রয়েছে। সেখানে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।
গত ১১ জানুয়ারি হবিগঞ্জ-১ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের নির্বাচন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে কমিশন এ নির্বাচনে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় দুই কম্পানি করে সশস্ত্রবাহিনী নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (সংসদ নির্বাচনের আইন) সেনাবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত না রাখা সত্ত্বেও কেন এ দুই উপনির্বাচনে তাদের মোতায়েন করা হচ্ছে_এ প্রশ্নে এম সাখাওয়াত হোসেন এর আগে বলেন, বিশ্ব ইজতেমা দুই দফায় অনুষ্ঠিত হওয়ায় এবং বিশ্বকাপ ক্রিকেটের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ দিতে পারছে না বলেই সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ভিডিও ক্যামেরা : হবিগঞ্জ-১ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের উপনির্বাচনে নির্বাচনী এলাকায় তিনটি করে ভিডিও ক্যামেরা চালু থাকবে। ভোট গ্রহণের দুই দিন আগে থেকে নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনসংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম এবং ভোট গ্রহণের দিনের কার্যক্রম ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করে তা সিডির মাধ্যমে কমিশনের কাছে পাঠনোর জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল কমিশন সচিবালয় থেকে পাঠানো এ নির্দেশনায় আরো বলা হয়, ভিডিও ক্যামেরা ও ক্যামেরাম্যান জেলার বাইরে থেকে নিয়োজিত করতে হবে।

No comments:

Post a Comment