Wednesday, December 15, 2010

বিদ্যুৎ উৎপাদনে শর্ত

বিদ্যুতের ব্যাপক চাহিদা মেটাতে প্রতিশ্রুতি পূরণের লক্ষ্যে সরকার একের পর এক উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এরই অংশ হিসেবে খুলনায় এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তিপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যায়ে রয়েছে। একই সঙ্গে মেঘনাঘাট ও কেরানীগঞ্জেও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সরকার। এসব উদ্যোগের শুরুতেই আবার জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কিছু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কোনোটির আবার ব্যবহার্য কাঁচামাল নিয়েও কথা উঠেছে। বিশেষ করে খুলনায় প্রস্তাবিত কেন্দ্র দুটির অংশীদার প্রতিষ্ঠান ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কম্পানি যেসব শর্ত জুড়ে দিয়েছে বলে পত্রিকার সংবাদে জানা গেছে, তাতে মনে হয় আরেকটি কাফকো বিতর্ক তৈরির সুযোগ আসছে সামনে।

বাংলাদেশের জন্য এবং বাংলাদেশের অংশীদারে নির্মিত হবে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, অথচ এর একচ্ছত্র আধিপত্য থাকবে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে। এমন শর্ত যে খসড়া চুক্তিতে স্থান পেয়েছে, তাকে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষাকারী হিসেবে বর্ণনা করা যায় কি? শুধু তা-ই নয়, এ খসড়া চুক্তিতে কর সুবিধা, পরবর্তীকালে দেশের ভেতরে বিদ্যুৎ বিক্রির ব্যাপারেও তাদের যে শর্ত তাকেও সহজ এবং দেশের স্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে মনে হয়। যেহেতু অংশীদারির ভিত্তিতে এ প্রকল্প কাজ করবে তাই ভারতের স্বার্থ একচেটিয়া হওয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। সাধারণ শ্রমিক থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের কর্মীর কথা বিবেচনা করলেও দেখা যাবে, বাংলাদেশে তেমন জনশক্তি আছে। কিন্তু সেই খসড়া চুক্তিতে এমন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট জনবলের প্রায় সবাই আসবে ভারত থেকে। চুক্তি সম্পাদনের জন্য যে স্ট্যাম্প লাগবে তা-ও বাংলাদেশকে দিতে হবে_এমন শর্তসহ চুক্তিপত্রটি নিয়ে আরো ভাবা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। স্পষ্টভাবে মনে রাখতে হবে, বিদ্যুৎ উৎপাদন অতি জরুরি বিষয় হলেও দেশের স্বার্থ অগ্রাহ্য করে কোনো কাজ করা হলে তা দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। চুক্তিতে বলা হয়েছে, মেয়াদকালে বাংলাদেশ সরকার নীতি-কৌশলের দিক থেকে প্রতিবন্ধক হতে পারবে না। খসড়া চুক্তিটি যাচাই করার সময় দেশের স্বার্থকে অবশ্যই উচ্চে স্থান দিতে হবে।
এদিকে কেরানীগঞ্জ ও মেঘনাঘাটে প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রে গ্যাস ব্যবহারের যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে তাও অবাস্তব বলে বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে মত দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের যুক্তি উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। কারণ নতুন গ্যাস প্রাপ্তির কোনো নিশ্চয়তা না পেয়ে সরকার যদি গ্যাসনির্ভর কোনো প্রকল্প গ্রহণ করে তাহলে এটি ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কাই প্রকট। আবার কেরানীগঞ্জের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র নির্মাণ করাও সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। দেশের সম্পদ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হলে উৎপাদন ব্যয় কমে আসার পাশাপাশি উৎপাদন ক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কাও কমে আসবে। এ মুহূর্তে দেশের কয়লা উৎপাদন বাড়িয়ে তা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা সবচেয়ে যৌক্তিক বলে আমরা মনে করি।

No comments:

Post a Comment