Sunday, January 16, 2011

৪৫ হাজার চাষি এ বছর লবণ চাষ করছে না

বণের দেশীয় উৎপাদন চাহিদার চেয়েও বেশি। তবুও ভারত থেকে আমদানি করে পথে বসানো হচ্ছে দেশীয় লবণচাষিদের! বছরের পর বছর ধরে লোকসান দিয়েও লবণচাষ টিকিয়ে রেখেছে চাষিরা। কিন্তু চলতি বছর তারা একেবারেই অসহায়।

ক্ষতির আশঙ্কায় দেশের উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারের ৪৫ হাজার লবণচাষি এ বছর লবণ চাষ করছে না। গতকাল শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে লবণচাষিরা এসব কথা জানায়। নিজেদের দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরে তারা ভারত থেকে লবণ আমদানি বন্ধের দাবি করে। পাশাপাশি তারা কৃষকপর্যায়ে লবণের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার দাবিও জানায়। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে কঙ্বাজারের লবণচাষি সমিতি।
লবণ শিল্পকে রক্ষার দাবিতে চাষিরা ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তারা ২২ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও শোভাযাত্রা করারও ঘোষণা দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, কক্সবাজারের ও বাঁশখালিতে কৃষকপর্যায়ে প্রতি কেজি লবণের দাম মাত্র এক টাকা। এই লবণ প্রক্রিয়াজাত করে কম্পানিগুলো ১৮-২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। এতে কম্পানির মালিকরা ফুলেফেঁপে উঠলেও চাষিরা নিঃস্ব হচ্ছে। উচ্চমুনাফার পরও কম্পানিগুলো আরো মুনাফার আশায় ভারত ও মিয়ানমার থেকে ৪৫ পয়সা কেজি দরে লবণ আমদানি করছে। এতে দেশের লবণ অবিক্রীত থাকছে। সংবাদ সম্মেলনে লবণ শিল্পের উন্নয়ন প্রকল্পের উপাত্ত তুলে ধরে বলা হয়, ২০০৫-০৬ অর্থবছর থেকেই বাংলাদেশ লবণ উৎপাদনে সাবলম্বী। গত অর্থবছরে দেশে লবণের চাহিদা ছিল ১৩ দশমিক ৩৩ লাখ টন। ওই বছর প্রকৃত উৎপাদন হয়েছে ১৭ দশমিক ৪০ লাখ টন। আমদানি উন্মুক্ত হওয়ায় গত বছর বিপুল লবণ অবিক্রীত থেকে গেছে। এ কারণে এই বছর লবণ মৌসুম শুরু হলেও প্রায় ৪৫ হাজার চাষি ক্ষতির আশঙ্কায় মাঠে নামছে না।
মূল রচনা উপস্থাপন করেন লবণ চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক এফ এম নুরুল আলম। তিনি বলেন, 'ভারতে লবণের উৎপাদন খরচ খুবই কম। ভারতের কৃষকরা একরপ্রতি মাত্র ৯৫ রুপি খরচে লবণ উৎপাদন করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে এ খরচের পরিমান ১৭-১৮ হাজার টাকা।' তিনি বলেন, 'কৃষকের কাছে লবণের কেজি মাত্র এক টাকা। কিন্তু ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে ১৮-২০ টাকা দরে! পুরো মুনাফাই লুটে নিচ্ছে সিন্ডিকেট।'
যেকোনো অজুহাতে লবণ আমদানি বন্ধ ঘোষণা করা, চোরাইপথে লবণ আমদানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, মাঠপর্যায়ে মূল্যনির্ধারণ করে দেওয়া, লবণ বোর্ড গঠনসহ তিনি সরকারের কাছে লবণচাষিদের ১১টি দাবি উপস্থাপন করেন।
সমিতির সভাপতি এইচ এম শহিদ উল্লাহ চৌধুরী বলেন, 'ভারত এখন আমাদের কমদামে লবণ দিচ্ছে বাজার দখলের জন্য। দেশীয় বাজার ভারতের দখলে চলে গেলে এ দেশের লবণচাষ ধ্বংস হবে। এরপর ভারত দাম বাড়িয়ে দেবে_এটা নিশ্চিত।'
লবণচাষি শরীফ বাদশা বলেন, 'পার্শ্ববর্র্তী রাষ্ট্র ভারতের মতো লবণ শিল্প রক্ষায় প্রকৃত লবণ চাষিদের চিহ্নিত করে পরিচয়পত্র দেওয়া এবং লবণ চাষের উন্নয়নে উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত যাবতীয় কর্মকাণ্ড সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।' সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন কোস্ট ট্রাস্টের মোস্তফা কামাল আখন্দ। এ ছাড়া লবণচাষি কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মোস্তফা কামাল চৌধুরী, লবণচাষি ঐক্য পরিষদের সভাপতি শরীফ বাদশা, একই সংগঠনের সদস্য রহুল কাদের বাবুল, নাজেম উদ্দিন ও হারুনুর রশিদ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

No comments:

Post a Comment