Sunday, January 16, 2011

বিচার বিভাগ শুধু সৃষ্টিকর্তা ও জনগণের কাছে দায়বদ্ধ

প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেছেন, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ সংসদ, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ কেউ কারো কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়। এ তিনটি অঙ্গসহ সবাই জবাবদিহি করবে জনগণের কাছে। কারণ সংবিধান অনুযায়ী সব ক্ষমতার মালিক জনগণ। তিনি বলেন, বিচার বিভাগও কারোর কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়। তারা শুধু সৃষ্টিকর্তা ও জনগণের কাছে দায়বদ্ধ।

হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. ইমান আলীর লেখা শিশুবিষয়ক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে গতকাল শনিবার প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক এ কথা বলেন। বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এ মোড়ক উন্মোাচন অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, ইউনিসেফের প্রতিনিধি ক্যারেল ডি রয় ও বিচারপতি মো. ইমান আলী বক্তব্য দেন।
এ সময় হাইকোর্ট বিভাগের একাধিক বিচারপতি, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার, বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার মো. আশরাফুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ‘টুয়ার্ডস জাস্টিস ডেলিভারি সিস্টেম ফর চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে ৬০৯ পৃষ্ঠার বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধান বিচারপতি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ (সংসদ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ) একে অপরের পরিপূরক। কেউ কারোর ঊর্ধ্বে নয়। চাঁদ যেমন সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়, তেমনি রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভ জনগণের ক্ষমতার আলোকে আলোকিত হয়। বিচার বিভাগও জনগণের ক্ষমতায় আলোকিত। তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগ কারো ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করছে না। তাই আমরাও অন্য কাউকে বিচার বিভাগের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করতে দেব না।’
প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, বিচার বিভাগেরও একটি জবাবদিহিতা রয়েছে। বিচার বিভাগ কখনোই দাবি করেনি তারা সার্বভৌম। বিচার বিভাগ জনগণের কাছে এবং কৃতকর্মের মাধ্যমে দায়বদ্ধ। বিচারকরা রায় ও আদেশের মাধ্যমে যুক্তি দিয়ে জবাবদিহিতা প্রকাশ করেন।
বিচার বিভাগ নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) জরিপ প্রতিবেদন প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, টিআইবি বিচার বিভাগের ওপর কালিমা লেপন করে দিয়েছে। বিচার বিভাগকে সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত উল্লেখ করে টিআইবি যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেটি তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও প্রধান বিচারপতি জানান। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করতেই কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি দুর্নীতিপরায়ণদের খুঁজে বের করতে কাজ করছে।
শিশুদের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, কোনো শিশুই অপরাধী হয়ে জন্মায় না। পরিস্থিতি তাদের অপরাধী হতে বাধ্য করে। ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে’-এ কথা মনে রাখলে অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যাবে। তিনি বলেন, জাতিকে শিশুদের উন্নয়নের জন্য আরো বেশি কাজ করতে হবে। শিশুদের উন্নতি না হলে জাতির উন্নয়ন হবে না। তিনি শিশুবিষয়ক মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরিচালনা করার জন্য বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানান।
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, শিশুদের বিষয়ে যে আইন আছে, তা সম্পর্কে আইন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবহিত হতে হবে। শিশুরা যেন কোনো অবিচার ও অন্যায়ের শিকার না হয় সে বিষয়ে সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে।
বিচারপতি ইমান আলী বলেন, শিশুদের রক্ষার বিষয়ে আইনের বিধান যা আছে, সে ব্যাপারে পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট বা আইনজীবীরা পুরোপুরি সচেতন নন। তাঁদের এ বিষয়ে আরো সচেতন হতে হবে। শিশুদের অধিকার রক্ষা করতে হবে।
গত ২১ ডিসেম্বর কয়েকটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচার বিভাগ কার কাছে জবাবদিহি করবে সে বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও বিচার বিভাগের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এরপর গত ৩ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় বিচারপতিরা মত প্রকাশ করেন, বাংলাদেশের সংসদ সার্বভৌম নয়। তাই সংসদীয় কমিটির কাছে জবাবদিহি করতে সুপ্রিম কোর্ট বাধ্য নয়।
এ বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তখন বলেছিলেন, সংসদই রাষ্ট্রপতি, স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে। ওই রাষ্ট্রপতিই প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দেন। তাহলে বলা যায়, সবাইকে নিয়োগ দেয় সংসদ।

No comments:

Post a Comment