Sunday, January 16, 2011

তবে কি ঘুম ভাঙল আরবদের by ইব্রাহীম বিন হারুন

ণ-আন্দোলন কিভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা শাসককে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে, এর সর্বশেষ নজির তিউনিসিয়া। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এই নজির ঢের থাকলেও তেল-সমৃদ্ধ আরব দেশগুলো কখনোই এমন অভিজ্ঞতার মুখে পড়েনি। সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন জায়িন এল আবিদিন বেন আলী।

উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট জায়িন এল আবিদিন গত শুক্রবার গণ-আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। ২৩ বছর ধরে ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। অথচ তিন সপ্তাহের আন্দোলনেই তাঁর 'ফাঁপা' মসনদ গুঁড়িয়ে গেছে। আর এ ঘটনাই নতুন বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে আরব বিশ্বে। বিশ্লেষকদের ধারণা, তিউনিসিয়া থেকে বিক্ষোভের স্ফুলিঙ্গ আরবের অন্য দেশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তিউনিসিয়া ভৌগোলিকভাবে উত্তর আফ্রিকার অংশ হলেও জাতিগত বিচারে আরব বিশ্বের অংশ। শুধু জাতিতে না, পরম্পরায়ও মিল আছে এসব দেশের মধ্যে। বেশির ভাগ আরব দেশেই আজও জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কয়েকটি দেশ রাজতন্ত্র থেকে সরে এলেও সত্যিকার অর্থে সেখানে গণতন্ত্র আসেনি। একবার ক্ষমতা দখল করা শাসকরা নানা কৌশলে বছরের পর বছর ক্ষমতা আঁকড়ে রাখছেন। প্রকাশ্যেই বিরোধীদের ওপর দমন-নিপীড়ন চালিয়ে মসনদ নিরাপদ রেখেছেন তাঁরা। তিউনিসিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা একনায়করা (লিবিয়ায় গাদ্দাফি ৪১ বছর, মিসরে মোবারক ২৯ বছর, সুদানে বশির ১৮ বছর, আলজেরিয়ায় আজিজ ১২ বছর) এ প্রবণতার প্রমাণ। তবে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকলেও তাঁরা কখনো গণ-আন্দোলনের মুখে পড়েননি। তাই একটি ধারণা সৃষ্টি হয় যে, আন্দোলনের মাধ্যমে আরব বিশ্বে সরকারের পতন ঘটানো যায় না। কিংবা আরবরা বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে না।
গণ-আন্দোলন না ঘটলেও আরব দেশগুলোতে সামরিক অভ্যুত্থান কিংবা বিদেশি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মাঝেমধ্যে ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে। এ ভয় থেকেই প্রতিবেশী একনায়কদের মতো সামরিক বাহিনীর ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল জায়িন এলের। সাদ্দাম হোসেনের মতো ভুল করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকেও খেপিয়ে তোলেননি। যাবতীয় সুরক্ষা-ব্যবস্থা থাকায় ৭৪ বছর বয়সী এ নেতা তিউনিসিয়ায় পরিচিত ছিলেন 'বিন এ ভাই' বা 'আমৃত্যু প্রেসিডেন্ট' হিসেবে। তবে শেষ রক্ষা হলো না। এ ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছেন প্রতিবেশী একনায়করাও। বিশ্লেষকরা এ ঘটনাকে দেখছেন আরব জনগণের 'ঘুম ভাঙা' হিসেবে। প্যারিসের রাজনৈতিক বিশ্লেষক বুরহান ঘালিউন বলেছেন, 'বছরের পর বছর ঘুমিয়ে থাকা আরবদের জাগিয়ে তুলবে তিউনিসিয়া।' এক মিসরীয় তাঁর টুইটার বার্তায় লিখেছেন, 'আরব নেতারা ভয়ে ভয়ে তিউনিসিয়ার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে। আর আরব নাগরিকরা আশা নিয়ে তাকিয়ে আছেন দেশটির দিকে।'
বিশ্লেষকদের মতে, লিবিয়া বা মিসরের মানুষ কখনো অভিন্ন দাবি নিয়ে একনায়কের বিরুদ্ধে আন্দোলনের বিষয়ে একমত হতে পারেনি। যদিও অর্থনৈতিক মন্দা ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এসব দেশের জনগণের জন্য অভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করছে। কারণ, আরব দেশগুলো ধনী হলেও এসব দেশেও সাধারণ মানুষের বেকারত্ব ও দারিদ্র্য ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বেড়েছে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য। এ পরিস্থিতিতে একনায়ক, তাঁদের স্বজন ও কাছের লোকদের দুর্নীতি ও বিপুল অর্থবিত্ত স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ করে তুলছে জনগণকে। তিউনিসিয়ার আন্দোলনও শুরু হয় বেকারত্ব ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে। ইতিমধ্যে আরব বিশ্বের জর্দান, লিবিয়া, মরক্কো, মিসর ও আলজেরিয়ায়ও একই দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা তিউনিসিয়ার ঘটনা থেকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। গতকালই কায়রোতে একটি মিছিল থেকে স্লোগান দেওয়া হয়, 'মোবারকের পতন চাই। জায়িন এলও প্রতারক, মোবারকও প্রতারক, গাদ্দাফিও প্রতারক।' মিছিলেরই একজন চিৎকার করে বলেন, 'জায়িন এল, মোবারককে বলে দিও_তাঁর পালানোর জন্যও একটি বিমান অপেক্ষা করছে।'

No comments:

Post a Comment