Tuesday, January 18, 2011

এই সাফল্য উৎসাহব্যঞ্জক

প্রথম শ্রেণী হইতে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের মধ্য দিয়া শনিবার সারাদেশে 'পাঠ্যপুস্তক উৎসব' পালিত হইয়াছে।

এ উপলক্ষে ঢাকার মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল ও কলেজে আয়োজিত পাঠ্যপুস্তক উৎসবের কেন্দ্রীয় কর্মসূচীতে শিক্ষামন্ত্রী বলিয়াছেন, বইয়ের অভাবে যাহাতে আর কোন শিক্ষার্থী বিদ্যালয় হইতে ঝরিয়া না পড়ে, সে লক্ষ্যে চলতি বৎসর ৩ কোটি ২২ লক্ষ পাঠ্যপুস্তক বিতরণের ব্যবস্থা করা হইয়াছে। উলেস্নখ্য, ২০০৯ সাল হইতে বর্তমান সরকার প্রথম হইতে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে। বই ছাপাইবার প্রযুক্তির দিক দিয়া বাংলাদেশ উন্নত বিশ্ব হইতে পিছাইয়া থাকিলেও এই অসাধ্য কাজটি সম্পন্ন করায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে সকলের নিকট শ্রদ্ধা ও ধন্যবাদ পাইতে পারে উহাতো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রথম দিনে সারাদেশে সকল স্কুল ও মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীরা নূতন বই হাতে পাইয়া আনন্দে উদ্বেল হইয়াছে। অবশ্যি সকল স্থানে সকলেই পূর্ণাঙ্গ সেট বই পাইয়াছে এমন নহে; তবে মন্ত্রী স্পষ্টভাবে জানাইয়াছেন যে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই সারা দেশের প্রতিটি স্কুল ছাত্র-ছাত্রীর নিকট নূতন বই পেঁৗছিয়া যাইবে। শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ তাঁহার উদ্যম, নিষ্ঠা এবং কর্মতৎপরতা দিয়া প্রমাণ করিলেন যে, 'ইচ্ছা থাকিলেই উপায় হয়।'

দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল শিশুই যাহাতে একই ধরনের শিক্ষা লাভ করে সেজন্য বর্তমান সরকার দৃঢ়তার সহিত কাজ করিয়া যাইতেছে। ইহা অত্যন্ত আশার কথা। কেননা, চারিদিকে যখন অব্যবস্থা, নীতিহীনতা, পরিকল্পনার অভাব, নিষ্ঠা ও কর্মোদ্যমের একান্তই ঘাট্তির কারণে সম্ভাবনা ও সাফল্য মুখ থুবড়াইয়া পড়ে তখন শিক্ষামন্ত্রীর এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রত্যয়দৃঢ় অবস্থান সকলের মনে নূতন আশার বীজ বপন করিয়াছে বৈ কি! শিক্ষামন্ত্রী শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদেরকে তাহাদের পাঠ ভাল করিয়া বুঝাইবার এবং নোট বইয়ের পরিবর্তে পাঠ্যপুস্তক অনুসরণপূর্বক শিশুদের প্রস্তুত করিবার জন্য যে তাগিদ দিয়াছেন উহা এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। একটি সুশিক্ষিত জাতি গড়িয়া তুলিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মনে শিক্ষার প্রতি গভীর আগ্রহ সৃষ্টি করা একান্তই আবশ্যক। শিক্ষকরা নিজ পেশাকে ব্রত হিসাবে গ্রহণ করিলে শিশু মনে এই আগ্রহ সঞ্চার কোন কঠিন ব্যাপার নহে। সময়মতো বই ও শিক্ষার উপকরণাদি ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে পেঁৗছাইতে পারিলে এ কাজটি সহজতর হইতে পারে নিশ্চয়ই। সে লক্ষ্যেই সরকার এই বিশাল কার্যক্রমটি হাতে লইয়া ছাত্র-ছাত্রী ও তাহাদের অভিভাবকদের নিকট প্রদত্ত ওয়াদা পূরণ করিয়াছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে শৃংখলা এবং শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ গড়িয়া তোলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজ। এক্ষেত্রে বিদ্যমান বা বিরাজমান যে কোন অব্যবস্থা, সংকট কিংবা সমস্যা দূরীভূত করিয়া শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মাঝে সেতুবন্ধন রচনার উপরই শিক্ষার সাফল্য বহুলাংশে নির্ভর করে।

ইতোপূর্বে সরকারী প্রকাশনা সংস্থার গুদামে অগি্নকাণ্ড, কালোবাজারে পুস্তক বিক্রয়ের জন্য সিন্ডিকেটের অপতৎপরতাসহ শিক্ষা-বিনাশী নানান অপকীর্তি সাহসিকতা এবং অত্যন্ত দৃঢ়তার সহিত মোকাবেলা করা হইয়াছে। ইহার মাধ্যমে দেশে অনুকরণীয় দৃষ্টান্তও স্থাপিত হইয়াছে। আর তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সাধুবাদ জানাইতে কেহই কোন প্রকার দ্বিধা করিবেন না নিশ্চয়ই। আমরাও সাধুবাদ জানাই। বই লইয়া কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রী আর তাহাদের অভিভাবকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করার এই সাফল্য আগামী বৎসরগুলিতে অব্যাহত থাকিবে ইহাই সকলের কামনা।

No comments:

Post a Comment