Tuesday, January 18, 2011

পণ্যের মানোন্নয়ন ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ

ত ১লা জানুয়ারি শনিবার প্রতি বৎসরের ন্যায় এইবারও মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুরু হইয়াছে শেরে বাংলা নগরে। সেখানকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১৬তম এই বাণিজ্য মেলা-২০১১ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বায়ন ও উদারীকরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি, শ্রমিক স্বার্থ সংরক্ষণ ও নূতন নূতন বাজার সম্প্রসারণের তাগিদ দিয়াছেন। দেশ-বিদেশের পণ্য প্রস্তুতকারকদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শনীর সবচাইতে বড় আসর এই মেলায় ভারত, পাকিস্তান, চীন, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, জাপান ও মালয়েশিয়াসহ ১৪টি দেশ অংশগ্রহণ করিয়াছে। মেলার কার্যক্রম রাজধানীর ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও বিভাগীয় শহরগুলিতে অনলাইন ভিডিও মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হইতেছে। মেলার গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা বাড়াইতে এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

এই ধরনের মেলার উদ্দেশ্য বাণিজ্যের দিগন্ত প্রসারিত করা। বিদেশী পণ্যের সাথে দেশীয় ভোক্তাদের পরিচিত করিয়া তোলার পাশাপাশি দেশের পণ্যের প্রচার-প্রসারেও এই মেলা ভূমিকা রাখিয়া থাকে। দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে তো বটেই, বিদেশী আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের সাথে মেলাসূত্রে যোগাযোগ স্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হয়। বলা বাহুল্য, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি দিন দিন বাড়িয়াই চলিয়াছে। আমদানির তুলনায় রফতানির ভলিউম বাড়িতেছে না। ২০০৯-২০১০ অর্থ বৎসরে ২৩৭৩৮ মিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয়ের বিপরীতে রফতানি আয় হইয়াছে ১৬২০৪.৬৫ মিলিয়ন ডলার। ইহাছাড়া অপ্রচলিত পথে যে বাণিজ্য হইতেছে, সেখানেও আমরা বড় ধরনের ঘাটতির মুখে রহিয়াছি। এখন চা বাদ দিলে তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও হিমায়িত খাদ্যই আমাদের প্রধান রফতানি পণ্যের তালিকায় অবশিষ্ট থাকে। এখানে উলেস্নখ্য, এসব রফতানি পণ্যের মধ্যে তৈরি পোশাক ও নিটওয়্যারের অবদানই সর্বাধিক প্রায় ৭৭%। আর এই খাতের যে অন্তহীন সমস্যা বিদ্যমান, তাহাতে সব দিক দিয়া আমরা ঝুঁকির সম্মুখীন। অর্থাৎ অর্থনৈতিক পরনির্ভরশীলতার প্রভাব আমাদের রাজনৈতিক উন্নয়নকেও এখন বাধাগ্রস্ত করিতেছে।

বাংলাদেশ আয়তনের দিক দিয়া ক্ষুদ্র হইতে পারে, তবে এখানকার বাজারটি নেহায়েত ছোট নহে। ১৬ কোটি মানুষের দেশ অনেক সম্ভাবনাময়। কাঁচামাল ও বিশেষত শ্রমিকের সহজলভ্যতা বিভিন্ন শিল্পের বিকাশে সহায়ক। কিন্তু আমরা বাস্তবে ইহার বিপরীত চিত্রই দেখিতে পাইতেছি। আমরা অনেক বৎসর ধরিয়া চা রফতানি করিলেও নিজস্ব কোন ব্র্যান্ড তৈরি করিতে পারি নাই। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি চা অন্য দেশের চায়ের পরিচয়ে বিক্রি হইয়াছে। এতসব হতাশা থাকা সত্ত্বেও আমরা যদি অব্যাহতভাবে চেষ্টা করিয়া যাই, তাহা হইলে বিশ্ববাজারের অভিরুচি অনুযায়ী পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করিতে পারি। জাপান, ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন, কোরিয়া, তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় বাজার সম্প্রসারণ করিতে পারি। ২০০৯ সালের হিসাব অনুযায়ী আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় রফতানি করি মাত্র ৩ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ আমাদের আঞ্চলিক রফতানি বাণিজ্যও জোরদার করিতে হইবে। এ জন্য প্রচলিত পণ্যের পাশাপাশি নানা অপ্রচলিত পণ্য রফতানি এবং ঔষধ, ফার্নিচার ও জাহাজ শিল্পের বিকাশে আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। আমাদের যথাসম্ভব নিজ দেশের বাজারও ধরিয়া রাখার চেষ্টা করিতে হইবে। তাহা না হইলে বাণিজ্যে ভারসাম্য আসিবে না। গ্যাস ও বিদু্যতের সংকট দূর করিতে পারিলে এখানে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ সব রকম শিল্পের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হইতে পারে। পরিশেষে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সফল হউক, ইহাই আমাদের একান্ত প্রত্যাশা।

No comments:

Post a Comment