Tuesday, January 18, 2011

রাত যায় দিন আসে by আতিকুল হক চৌধুরী

সুপ্রিয় পাঠক! আপনাদের সবাইকে আজ ৩ জানুয়ারি ইংরেজী নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি বলে আপনারা কী একটু অবাক হচ্ছেন এই কথা মনে করে যে ১ জানুয়ারি নতুন বছরের শুরু। এই দুই দিন পর আবারও "হ্যাপি নিউ ইয়ার" কেন? কিন্তু নয় কেন? আমি তো এই কথা বলছি না যে, হ্যাটি ফাস্ট জানুয়ারি।

বলছি হ্যাপি নিউ ইয়ার। নতুন বছরের সবে তো শুরু। ২/৩ দিন পরও নতুন বছরই তো থাকছে, না কী? না, ঈদে ৩/৪ দিন ছুটি বলে কয়েকদিন ধরেই ঈদ মোবারক বলা যায়? নববর্ষে তেমন ছুটির উপলক্ষ নেই বলেই কী আর শুভ নববর্ষ বলা যাবে না কয়েকদিন ধরে? "শুভ" কথাটা বার বার উচ্চারণ করলে ক্ষতি কী? সুপ্রিয় পাঠক।"হ্যাপি নিউ ইয়ার"। শুরু হল আর একটি নতুন বছর। প্রার্থনা করি নতুন বছর যেন শুধু কতগুলো দিন, হপ্তা আর মাসেরই বদল না হয়। দিন বদলের পালায় আমরা যেন সবসময় নেতিবাচক নয়, একটু ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়েও যেন পথ চলতে পারি। পারি যেন একজন অপর একজনের হাত ধরাধরি করে চলতে। একা নয়, একজন নয়, দু'জনের একসঙ্গে পথ চলার আনন্দই যে আলাদা, একজনে একা হাঁটলে মনে হয় কত পথ যেন আরো বাকী। দু'জনে একসঙ্গে হাঁটলে মনে হয় কতদ্রুত যেন এগিয়ে গেলাম। আমরা একত্রে ওঠাবসা করি কিন্তু আমাদের মধ্যে একতা কম। এটাই দুঃখজনক। দুর্ভাগ্যজনক। কথায় আছে যার শেষ ভাল তার সব ভাল। ইংরেজী ২০১০ সালের শেষ দিনটি আমার খুব আনন্দে কেটেছে। বহুদিন পর আমার একমাত্র মেয়ে নেহার তার জামাতা মাহমুদসহ বিদেশ থেকে আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছে। আমার কাছে, আমার স্ত্রীর কাছে ঈদ ঈদ মনে হচ্ছে। উৎসবের দিন-রাত্রি যেন। মেয়েরা বয়সে যতই বড় হোক না কেন বাবা-মায়ের কাছে তারা আসলে ছোট্টটিই থেকে যায় রবীন্দ্রনাথের সেই কাবুলিওয়ালা গল্পের ছোট্ট মিনির মতো। কাবুলিওয়ালাদের বুক পকেটে সযতনে রক্ষিত ভূসা মাখানো কাগজে ছোট্ট হাতের ছোট্ট ছাপ কোনদিন আর বড় হয় না। মুছেও যায় না। রহমতদের "খোকীদের" খোশুবুর মধ্যে সত্যি খোদার এক রহমত ঝরে পড়ে। যা হোক বছরের শেষ দিনটিতে বেশকিছু ছোট্টমণিদের সাহচর্যে আসার সুযোগ হয়েছিল আমার। আনন্দ আলোর সম্পাদক নাট্যকার ও নাট্যনির্মাতা রেজানূরের আমন্ত্রণে জাতীয় গ্রন্থাগারে ছোট্টমণিদের এক চিত্রাংকন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে। খুব ভাল লাগল। ভাল কাটলো দিনটি। ছোট্ট-মণিদের অাঁকা ছবিতে বাংলাদেশ যেন কথা বলছিল। ছবি গান গেয়েছিল, ছবি নেচেছিল ময়ূরের মতো পাখা মেলে। ছবিতে ফুটে উঠেছিল গ্রামবাংলার অপরূপ রূপ। একা নয়, সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে সবাইকে সাথে নিয়ে কিছু করার একটা আনন্দই আলাদা। এই আনন্দ ছোট্টমণিরা যতটা পায় বোঝে আমরা বড়রা ততটা পাই না। বুঝি না। একসঙ্গে বসে বড়রা ছবি অাঁকছে _এটা কী ভাবা যায়? অথচ বড়রা যদি ছোট্টমণিদের অনুকরণ করে একসঙ্গে একাগ্রচিত্তে কিছু করতে পারতো আমাদের এ দেশটা আরো এগিয়ে যেতো না সামনে? মেরিডিয়ান ও আনন্দ আলোকে ধন্যবাদ।

পৌষের অপরাহ্নে ৩১ ডিসেম্বরের মনোরম সন্ধ্যাটিকে আমার কাছে মনে হয়েছিল বসন্তের মন রাঙানো একটি সন্ধ্যা। মাছরাঙা নদীর বুকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে ভেজা রংধনুর প্রতিফলন যেন দেখে এলাম। চোখ জুড়ালো। মনও ভরে গেল। আনন্দ পেলাম। আলোও দেখলাম। ঘুরে এলাম একটি রংধনুর দেশ থেকে। পরদিন ১ জানুয়ারিও ছিল নিজের সত্যিকার সংস্কৃতিকে, গণমানুষের সংস্কৃতিকে গণসঙ্গীতকে আর একবার প্রাণ ভরে উপলব্ধি করার দিন। দেশের নন্দিত গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর প্রতিষ্ঠিত ঋষিজ-এর ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর একটি জ্বলজ্বলে দিন। উন্মাদনা নয়, উদ্দীপনাময় একটি সুমহান দিন। পতিত অন্ধকারের পথে সূর্যরশ্মির বর্শাফলক হাতে সাহসী অশ্বারোহীর ছুটে চলার দিন। অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয়েছিল বাংলার বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী কলিম শরাফীকে যিনি সারাটা জীবন আমাদের শুনিয়ে গেছেন বিশ্বমানবের চিরন্তনী সংগীত। আমাদের এক প্রিয় মানুষ আমাদের একা ফেলে আমাদের ঘর শূন্য করে চলে গেলেন। কলিম ভাইর নামের আগে প্রয়াত বা মরহুম কথাটা ইচ্ছে করেই সংযুক্ত করলাম না। শিল্পীর অবস্থান মানুষের হূদয়ের অতি কাছে। সত্যিকার শিল্পী কখনো মরহুম হন না। কোনদিন অবসরে যান না। এল.পি.আর-এও যান না। বছরের শুরুতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত গানের সেই দুটো লাইন কলিম ভাইর দরাজ ভরাট গলায় শোনা সেই গান, বহু অনুষ্ঠানে বহুবার শোনা সেই পরিচিত গান কেন যেন আজ আর একবার শুনতে ইচ্ছে করছে 'আছে দুঃখ আছে মৃতু্য, বিরহ দহন লাগে, তবুও শান্তি তবু আনন্দ_তবু অনন্ত জাগেঃ"

No comments:

Post a Comment