Tuesday, January 18, 2011

স্বাগত ২০১১ সাল

প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে দিন যায় ও দিন আসে। কাল-মহাকালের উপর সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কাহারও হাত নাই। দেখিতে দেখিতেই বিদায় নিল সুখ-দুঃখের আরেকটি বৎসর_ ২০১০ সাল।

বিশ্ব জুড়িয়া কত ঘটনা, কত হাসি-কান্না, বিষাদ ও উত্তেজনা। সবকিছুকে ছাপাইয়া আজ নূতনের কেতন উড়ে। বুকে বাঁধে আশা ও স্বপ্নের বাসা। নববর্ষের ঊষার আলোকে সম্পূর্ণ নূতন রঙ্গে শুরু হউক আমাদের পথচলা। তাই নূতন বৎসরের নূতন দিনে সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।

বাংলাদেশে গত বৎসরটি নানা দিক দিয়াই আশার আলো ছড়াইয়াছে। এমন সব সাফল্য অর্জিত হইয়াছে যাহা সহসা ভুলিবার নহে। আইটি খাতের অগ্রগতি, প্রথম বাংলাদেশী নাগরিক হিসাবে মুসা ইব্রাহিমের এভারেস্ট জয় ও গলফে সিদ্দিকুর রহমানের ঈর্ষণীয় সাফল্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জাতি হিসাবে আমাদেরকে গৌরবান্বিত করিয়াছে। সারা বৎসর জুড়িয়া ক্রিকেটের গৌরবময় বিজয়ের সহিত আমরা আনন্দে আত্মহারা হইয়াছি। এ বৎসর সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে সবচাইতে বেশি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখিয়াছে। একটি নূতন শিক্ষানীতি প্রণয়নসহ প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী এবং জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করিয়াছে। বৎসরের শেষপ্রান্তে আসিয়া আমরা সকলেই সেই সাফল্য ভাগাভাগি করিয়া নিয়াছি। পাটের জীবন রহস্য উন্মোচনে গবেষকদের কৃতিত্বের পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রে কৃষকদের ভালভাবে ধরিয়া রাখাও সম্ভব হইয়াছে। ফলে সার্বিকভাবে অর্থনীতির চাকা ছিল সচল। যদিও বৎসরের শেষে আসিয়া কয়েকটি হরতাল হইয়াছে ্এবং রপ্তানির প্রধান খাত গার্মেন্টস সেক্টরে কিছুটা অস্থিরতা ছিল। অন্যদিকে অ্যানথ্রাক্স আতংককে সফলভাবে মুকাবিলা করিতে পারিলে চামড়া শিল্পের বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব হইত। গ্যাস ও বিদু্যতের সংকট দূর করিতে পারিলে আরও ত্বরান্বিত হইত শিল্পোন্নয়ন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সারা বৎসরের আলোচিত বিষয় ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনিদের ফাঁসি, যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ট্রাইবুনাল গঠন, কয়েকজন বিরোধী রাজনীতিকের গ্রেফতার, বিরোধী নেতার মইনুল রোডের বাড়ি ত্যাগ ইত্যাদি। নানা কারণেই এ বৎসর দেশের আদালতপাড়া ছিল সরগরম। ইহাছাড়া নিমতলির ট্রাজেডি, ভূমিকম্প আতংক, কয়েকটি মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনা, শেয়ারবাজারের উত্থান-পতন ও দ্রব্যমূল্যের বাজারে সময়-সময়ান্তরে উত্তাপ প্রভৃতি বিষয়ও ছিল সাধারণের আলোচনার কেন্দ বিন্দুতে।

২০১০ সালে বরাবরের ন্যায় আন্তর্জাতিক অঙ্গন ছিল উত্তাপ ও উত্তেজনায় ভরা। প্রকৃতপক্ষে নাইন ইলেভেনের পর বিশ্ব পরিস্থিতিতে যে অস্থিরতার ছোঁয়া লাগে, তাহা অবসানের কোন লক্ষণ দেখা যাইতেছে না এখনও। বরং দিন দিন ইহা আরও জটিল আকার ধারণ করিতেছে। গত বৎসর বিভিন্ন দেশে আত্মঘাতী বোমা হামলার চাইতেও বড় খবর ছিল জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের প্রতিষ্ঠান উইকিলিকসের চাঞ্চল্যকর তথ্য বিস্ফোরণ। হাইতিতে ভূমিকম্পে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়, পাকিস্তানের এক-পঞ্চমাংশ এলাকায় বন্যা, রাশিয়ায় পোল্যান্ডের বিমান দুর্ঘটনা, চিলির আটকাইয়া পড়া খনি শ্রমিকদের রুদ্ধশ্বাস উদ্ধার, ব্রিটেনের জোট সরকার, ইরাক ও আফগানিস্তানের নির্বাচন, ব্যাংককে লালশার্টের বিক্ষোভ, সোমালিয়ার জলদসু্যদের দৌরাত্ম্য, অমীমাংসিত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া, কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা ইত্যাদি বিষয়ও ছিল আলোচনার পাদপীঠে। তবে বিজ্ঞানীদের আইপ্যাড আবিষ্কারসহ মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির মুক্তিলাভ আমাদেরকে অনেকটা আশান্বিত করিয়াছে।

নূতন বর্ষের শুরুতেই বাংলাদেশ ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের অন্যতম আয়োজকের দায়িত্ব পালন করিবে। আমাদের জাতীয় সম্মান, সুনাম, গৌরব রক্ষায় ইহা সহায়ক হইবে বলিয়া আমরা আশা করি। অন্যদিকে আর কয়েকদিন পরেই বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ করিবে। তাই জাতীয় সংসদ কার্যকরসহ নানা ক্ষেত্রে আগামীর দিনগুলিতে সরকার সাফল্য অর্জন করুক এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি অব্যাহত থাকুক_ ইহাই আমাদের একান্ত প্রত্যাশা। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট ীয়_সকল পর্যায়ে ২০১১ সালের প্রতিটি দিন হউক সুন্দর ও কল্যাণময়। শুভ নববর্ষ।

No comments:

Post a Comment