Tuesday, January 18, 2011

অব্যাহত রাখতে হবে শিক্ষাক্ষেত্রে সূচিত অগ্রগতি

র্তমান সরকারের গত সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছিল সর্বাধিক সক্রিয় ও আলোচিত। শিক্ষাক্ষেত্রে সূচিত হয়েছে অনেক অগ্রগতি।

আধুনিক যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা, মাদ্রাসা শিক্ষাকে কর্মক্ষম নাগরিক তৈরির উপযোগী করা, কারিগরি শিক্ষা সমপ্রসারণের ব্যবস্থা করা, অন-লাইনে ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু করা, লটারির মাধ্যমে প্রথম শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যবস্থা করা, সরকারি স্কুলগুলোতে ডবল শিফট চালু করা, শিক্ষাবর্ষের শুরুর দিন থেকে ক্লাস শুরু করা, সঠিক সময়ে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা, মানসম্পন্ন সহপাঠ বই নির্দিষ্ট করে দেয়া, পাঠ্যবইয়ে দেশ ও জাতির সঠিক ইতিহাস সংযোজন করা, জাতীয় দিবসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে তাৎপর্যপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপন করা, দেশের সকল প্রতিষ্ঠানে একই রুটিনে অভ্যন্তরীণ/ সাময়িক পরীক্ষাগুলো গ্রহণ করে ফলাফল প্রকাশ করা, সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতির প্রবর্তন করা, নোট-গাইড মুখস্থ/নকল করার পরিবর্তে মূল বইভিত্তিক মেধাচর্চা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা, প্রাইভেট টিউশনি ও কোচিংনির্ভর শিক্ষাকে নিরুৎসাহিত করা, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করা, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা প্রবর্তন করে বৃত্তির সংখ্যা বৃদ্ধি করা, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা প্রবর্তন করা, স্বল্প সময়ে বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল তৈরি করে অন-লাইনে প্রকাশ করা, মোবাইল ফোনে এস.এম.এস. এর মাধ্যমে বোর্ড পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা, ভালো স্কুল/ কলেজ বাছাই পদ্ধতি অধিকতর যুক্তিযুক্ত করা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে ১১টি করে কম্পিউটার সরবরাহ করা, আধুনিক পদ্ধতিতে পাঠদানের সুবিধার্থে বিনামূল্যে ল্যাপটপসহ প্রজেক্টার প্রদানের কর্মসূচি গ্রহণ করা, প্রায় দুই হাজার স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এম.পিওভুক্ত করা, তিন শতাধিক দাখিল ও আলিম মাদ্রাসাকে পাঠদানের অনুমতিসহ একাডেমিক স্বীকৃতি প্রদান করা, দেড় শতাধিক মাদ্রাসায় ভোকেশনাল ও অনার্স কোর্স চালু করা, ত্রিশ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান করা, সরকারি কলেজে নতুন পদ সৃষ্টি করে শিক্ষকদের প্রাপ্য পদোন্নতি প্রদান করা, বেসরকারি শিক্ষকদের টাইম-স্কেল প্রদান করা, বিপুল সংখ্যক মাধ্যমিক শিক্ষকসহ প্রায় ৩২ হাজার সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ করা, তিন সহস্রাধিক স্কুল-কলেজের একাডেমিক ভবন নিমর্াণ প্রকল্প গ্রহণ করা, সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় আরো দেড় হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনসহ শতভাগ উপবৃত্তি ও খাদ্য সহায়তা প্রদানের পরিকল্পনা গ্রহণ করা, উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ প্রণয়ন করা, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া, প্রতি বিভাগে একটি করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্র স্থাপনের পদক্ষেপ নেয়া, তিনটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা এবং আরো ছয়টি স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নেয়া, শিক্ষা সংশিস্নষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে দুর্নীতি দূর করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনয়নের চেষ্টা করা ইত্যাদি কার্যক্রমের ফলে দীর্ঘদিন পর আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে সূচিত হয়েছে লক্ষণীয় অনুকূল পরিবর্তনের আবহ। এর জন্য আমাদেরকে আন্দোলন, সংগ্রাম ও অপেক্ষা করতে হয়েছে অনেক। মূলত আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক যুগোপযোগী উৎপাদনসহায়ক একমুখি জাতীয় চেতনাসমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক সত্যাদর্শপূর্ণ একটি শিক্ষানীতির অভাবেই সর্বক্ষেত্রে চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে আমাদের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি। বিনষ্ট হয়েছে বাঙালি জাতির সেই বজ্রকঠিন ঐক্য। তৈরি হয়নি মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার সোনার মানুষ। বৃদ্ধি পেয়েছে পরাজিত শক্তির আস্ফালন। পরিপূর্ণ সফলতা পায়নি আমাদের রক্তে কেনা স্বাধীনতা।

আজো অনেক সাধারণ মানুষ অনুধাবন করতে পারছে না অথবা আমরা তাঁদেরকে অনুধাবন করাতে পারছি না এই বাস্তব সত্য। অথচ আমাদের এই অধোগতির পিছনে বিরামহীন কাজ করেছে যাদের কালো হাত, তারা বোঝে ঠিকই। তারা জানে শিক্ষাক্ষেত্রে সূচিত আজকের এই অনুকূল পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত থাকলে, আরো বেগবান হলে নিশ্চিত হবে দেশের অগ্রগতি, শানিত হবে জাতীয় চেতনা।

বৃদ্ধি পাবে সুশিক্ষিত ও সচ্ছল মানুষ। দ্রুত হ্্রাস পাবে তাদের অপ-রাজনীতির ক্রীড়নক হতদরিদ্র ও সুশিক্ষার আলোবঞ্চিত দূরদৃষ্টিহীন মানুষের সংখ্যা। সেইসাথে হ্্রাস পাবে তাদের ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনা।

শিক্ষা-সংশিস্নষ্ট প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দ্রুত কার্যকর করতে হবে ডিজিটাল ব্যবস্থা। নিশ্চিত করতে হবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। নির্ধারণ করে দিতে হবে সকল স্তরে নিয়োজিত শিক্ষকদের কর্মঘন্টা। সেইসাথে বৃদ্ধি করতে হবে শিক্ষকদের আর্থিক সচ্ছলতা। কেননা দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এই শিক্ষানীতির সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে শিক্ষকদের স্বত:স্ফূর্ত সহযোগিতা।

No comments:

Post a Comment