Sunday, January 23, 2011

রপ্তানি বাণিজ্যে সুবাতাস

বাংলাদেশ মানেই নেতিবাচক সংবাদ নয়। বাংলাদেশ এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নিশ্চয়ই এখন তেমন ভাবনা বদলে যেতে শুরু করবে। কারণ দেশের অর্থনীতিতে সুবাতাস লাগতে শুরু করেছে। রপ্তানি বাণিজ্যে বাংলাদেশের অর্জন সেই অনুভূতির মূল কারণ।
বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ইতিবাচক বাণিজ্য দৃশ্যমান। চলতি পঞ্জিকাবর্ষের জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে বাংলাদেশ যে পরিমাণ মার্কিন দ্রব্য আমদানি করেছে তার চেয়ে অনেক বেশি রপ্তানি করেছে সে দেশে। এর তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে গেলে দেখা যাবে, আগের বছর একই সময় বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৩১৮ কোটি ৮৬ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য। আর এবার তা বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে_৩৫১ কোটি ৮১ লাখ ডলারে। তবে এই অর্জনের পেছনে তৈরি পোশাক শিল্পের অবদানই বেশি। তাই বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বড় খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত তৈরি পোশাক শিল্পের পাশাপাশি অন্যান্য দ্রব্যও যদি সেখানে রপ্তানি করা যেত তাহলে এই প্রবৃদ্ধি অনেক বেড়ে যেত। কিন্তু বাংলাদেশের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় যেভাবে উচ্চহারে শুল্ক পরিশোধ করতে হয় তাও বাংলাদেশের বাণিজ্য কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পেঁৗছাতে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডেমোক্রেটিক লিডারশিপ কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৫ দশমিক ৩০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আদায় করেছে। এই শুল্ক হারকে শূন্য মাত্রায় নামিয়ে আনার ব্যাপারে বাংলাদেশের তদবির এখনো সফল হয়নি। শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানিতে যদি বাংলাদেশ সুবিধা পেয়ে যায়, তাহলে অন্য কিছু উন্নত দেশেও বাংলাদেশ সেই সুবিধাপ্রাপ্তিকে উদাহরণ হিসেবে দেখাতে পারবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের অর্জনও হবে আশানুরূপ।
যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি সামগ্রিক রপ্তানি চিত্রও আশাব্যঞ্জক। একটি হিসাবে দেখা যায়, গত জুলাই-অক্টোবর মাসে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। আর শুধু অক্টোবর মাসে এ খাতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬৪ শতাংশ। সংগত কারণেই রপ্তানি বাণিজ্য আমাদের অদূর ভবিষ্যতের দৃঢ় অর্থনীতির মাত্রাকে চিহ্নিত করবে। কিন্তু ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার যে স্বপ্ন দেখছে, তা বাস্তবায়ন করতে হলে বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নয়ন অপরিহার্য। কিন্তু বাংলাদেশের সে দিকটি এখনো ঋণাত্মক চিত্রকেই ফুটিয়ে তোলে। বিনিয়োগ পরিস্থিতিকে অনুকূলে আনার জন্য যেসব আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক সেগুলো পরিপূর্ণ না হলে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হওয়া সম্ভব হবে না। বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির নিশ্চয়তা দিতে না পারলে বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা ক্ষীণই থেকে যাবে। আবার রপ্তানি বৃদ্ধির সূত্রেও বিনিয়োগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, ইউরোপ-আমেরিকাসহ যেসব দেশে আমাদের বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে সেসব দেশে আমাদের ব্যবসায়িক যোগাযোগ বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের কূটনৈতিক মিশনগুলোর ভূমিকা হতে পারে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। অর্থনৈতিক কূটনীতির মাধ্যমে আমাদের রপ্তানি-বাণিজ্যকে আরো বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হতে পারে। একই সঙ্গে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রয়োজনে বহির্বিশ্বে আমাদের কূটনৈতিক মিশনগুলো যদি যথার্থ ভূমিকা পালন করে, তাহলে আমাদের অর্থনীতিতে নতুন যুগের সূচনা হতে পারে।

No comments:

Post a Comment