Sunday, January 23, 2011

অভিযোগ অস্বীকার না করলেও সাকার ভাব - কিছুই হবে না

দালতে হাজির করার সময় বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী তাঁর ওপর নির্যাতনের অভিযোগ এনেছিলেন। এমনকি আদালত এলাকায় গাড়ি থেকে নেমে পুলিশের সাহায্য ছাড়া যেন হাঁটতেই পারছিলেন না তিনি।

কিন্তু সেখান থেকে ডিবির হাজতখানায় নেওয়ার পর সাকা চৌধুরী ফিরে যান তাঁর সেই পুরনো চেহারায়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে জবাব দিচ্ছেন কিংবা পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বিব্রত করছেন জিজ্ঞাসাবাদকারীদের। অনেক অভিযোগই স্বীকার করছেন স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে পরিচিত এই নেতা; কিন্তু এমন ভাব দেখাচ্ছেন যেন এতে কিছুই হবে না তাঁর। এমনকি হাজতখানায় থাকা অন্য আসামিদের দিয়ে শরীরও ম্যাসাজ করিয়েছেন তিনি। গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, শুক্রবার রাতে একই হাজতে ছয় গাড়িচোরকে রাখা হয়েছিল সাকা চৌধুরীর সঙ্গে। পরে ওই গাড়িচোরদের দিয়ে রাতভর শরীর ম্যাসাজ করান তিনি। হাজতখানায় থাকা সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, একসঙ্গে ছয়জনই সাকার শরীর ম্যাসাজ করছে। চোরদের কেউ হাত, কেউ পা, আবার কেউ তাঁর শরীর ম্যাসাজ করছিল। এ সময় তিনি (সাকা) শুয়ে শুয়ে সিগারেট টানছিলেন। ডিবি কর্মকর্তারা বিষয়টি জানার পর গতকাল শনিবার সকালে সাকা চৌধুরীকে হাজতখানা থেকে সরিয়ে পাশের ছোট একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই কক্ষে কড়া পাহারা বসানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের সময় ফারুক হত্যা মামলার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী জিজ্ঞাসাবাদকারীদের বলেন, 'আপনারা যদি খেয়াল করেন, দেখবেন হরতালের পক্ষে আমি একটি কথাও বলিনি। এ বিষয়টি আমি এর আগেও বলেছি। বিএনপির মধ্যে কারা হরতালের আগে গাড়ি ভাঙচুর বা অগি্নসংযোগের জন্য লোক ভাড়া করে, কারা টাকা দেয় তা ভালো করেই জানেন আপনারা। তাদের দু-একজনকে আপনারা ধরেছিলেন।'
সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সালাহউদ্দিন কাদেরের কাছে যুদ্ধাপরাধ বা স্বাধীনতাযুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে চট্টগ্রামে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এ সময় তিনি হাসতে হাসতে বলেন, 'এগুলো তো বহু পুরনো অভিযোগ। এসবের মাত্রা কখনো বাড়ে আবার কখনো কমে।' জিজ্ঞাসাবাদকারীরা জানতে চান, তাহলে অভিযোগ কি সত্য? জবাবে সাকা জোরে হাসতে হাসতে বলেন, 'সময়ের সঙ্গে সত্য-মিথ্যার গতি পরিবর্তন হয়।' পরে অভিযোগের বেশ কিছু প্রমাণ হাজির করা হয় তাঁর সামনে। সেসব দেখে সাকা বলেন, 'এগুলোও আগে দেখেছি।'
একটি সূত্র জানায়, ফারুক হত্যার বিষয়টি জানতেন বলে তথ্য দিয়েছেন সাকা। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে আনা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগও পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব বিষয়েই এমন ভাব দেখাচ্ছেন যে এসব অভিযোগে তাঁর কিছুই হবে না।
সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদকারীদের কখনো তুমি, আবার কখনো আপনি বলে সম্বোধন করছেন সাকা। তবে হাজতখানায় গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকতে দেখা যায় তাঁকে।
এদিকে গতকাল সাকা চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ের সামনে যান। পরে তাঁদের পক্ষ থেকে সাকার জন্য জ্যাকেট, মাফলার, চাদরসহ কিছু শীতবস্ত্র তাঁর কাছে পাঠানো হয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি মনিরুল ইসলাম জানান, মানাবাধিকার সমুন্নত রেখে সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।
বুধবার মধ্যরাতে বনানী থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বহুল আলোচিত-সমালোচিত বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে। বৃহস্পতিবার তাঁকে আদালতে হাজির করে রমনা থানায় দায়ের করা ফারুক হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। গত ২৬ জুন বিএনপির ডাকা হরতালের আগের রাতে মগবাজার এলাকায় একটি ট্যাঙ্েিত আগুন দিয়ে ফারুক নামের ওই যাত্রীকে হত্যা করা হয়েছিল।
সালাহউদ্দিন কাদেরকে রিমান্ডে নেওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাত থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

No comments:

Post a Comment