Sunday, January 23, 2011

একজন ডাকাতের কাল্পনিক সাক্ষাৎকার

সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে ডাকাতি বেশ বেড়েছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা একজন ডাকাতের কাল্পনিক সাক্ষাৎকার পাঠকের জন্য উপস্থাপন করছি।
প্রশ্ন : আপনার নাম?
ডাকাত : আমার নাম হাতকাটা হাবলু।
প্রশ্ন : হাতকাটা হাবলু কেন?
ডাকাত : আমার নাম আসলে হাবিবুর রহমান হাবলু। একবার ডাকাতি করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়েছিলাম। তখন বিক্ষুব্ধ জনতা আমার হাত কেটে দিয়েছিল। সেই থেকে আমার নাম হাতকাটা হাবলু।
প্রশ্ন : এ নামটি আপনার কেমন লাগে?
ডাকাত : খুব ভালো লাগে।
প্রশ্ন : কেন?
ডাকাত : কারণ হাতকাটা হাবলু নাম শুনলেই সবাই ভয় পায়। কোনো বাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়ে যখন বলি, আমি হাতকাটা হাবলু, যা আছে সব দিয়ে দে। অমনি মানুষ সব দিয়ে দেয়।
প্রশ্ন : শুনেছি, আপনি অনেক টাকার মালিক। এর পরও ডাকাতি কেন করছেন?
ডাকাত : ডাকাতি আমার পেশা। দীর্ঘ ৩০ বছরের পেশা। এটা কিভাবে ছাড়ি বলেন।
প্রশ্ন : ৩০ বছর ধরে ডাকাতি করেন?
ডাকাত : জি।
প্রশ্ন : এ পর্যন্ত কয়বার ধরা পড়েছেন?
ডাকাত : একবার। তখনই আমার হাতটা কেটে দিয়েছিল।
প্রশ্ন : মাত্র একবার!
ডাকাত : জি। তখনো ধরা পড়তাম না। সেটা ছিল প্রথম দিকের ঘটনা।
প্রশ্ন : এখন ধরা পড়ছেন না কেন?
ডাকাত : এখন তো আমি অনেক অভিজ্ঞ। তা ছাড়া পুলিশকে ঠিকঠাকমতো টাকা-পয়সা দিচ্ছি। কাজেই কোনো সমস্যা নেই।
প্রশ্ন : প্রথমবার কি পুলিশকে টাকা দেননি?
ডাকাত : এ কাজ করতে গেলে যে পুলিশকে টাকা-পয়সা দিতে হয় তা বুঝতে পারিনি।
প্রশ্ন : পুলিশকে কখন টাকা দেন, ডাকাতির আগে না পরে?
ডাকাত : পুলিশের টাকা কি বাকি রাখা যায়? আগেই দিতে হয়।
প্রশ্ন : যদি ডাকাতি করতে ব্যর্থ হন_
ডাকাত : তার কোনো সুযোগ নেই। কারণ আগে থেকেই ঠিক করে নিই, কোন বাসায় ডাকাতি করব! তারপর পুলিশকে জানাই। পুলিশই তখন আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে।
প্রশ্ন : তাই নাকি!
ডাকাত : জি।
প্রশ্ন : ডাকাতি করতে গিয়ে দেখলেন, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার কিছু পেলেন না। তখন কী করেন?
ডাকাত : আপনি কি মনে করছেন আমরা না জেনে যাই? জেনেশুনেই যাই।
প্রশ্ন : কিভাবে জানেন?
ডাকাত : গোয়েন্দা আছে না! আমার বেতনভুক্ত গোয়েন্দা দল আছে। তারা সারা শহর চষে বেড়াচ্ছে। আগে বাসাবাড়ি টার্গেট করে গোয়েন্দা লাগাই। কী পরিমাণ টাকা-পয়সা, সোনা-গয়না আছে তা জেনে তারপর ডাকাতি করতে যাই।
প্রশ্ন : তার মানে ডাকাতি করেই সংসার চালান?
ডাকাত : জি।
প্রশ্ন : পড়াশোনা কিছু করেছিলেন?
ডাকাত : জি। ডিগ্রি পাস করেছি। এর পর থেকেই ডাকাতি পেশায়।
প্রশ্ন : আপনার কয় ছেলেমেয়ে?
ডাকাত : দুই ছেলে দুই মেয়ে।
প্রশ্ন : তারা কী করে?
ডাকাত : বড় দুই ছেলে আমেরিকায় থাকে। তারা সেখানে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। ওখানেই পড়াশোনা করেছে। ছোট দুই মেয়ে ডাক্তার। তাদের দুজনকেই দুই ডাক্তারের কাছে বিয়ে দিয়েছি। তারা কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছে।
প্রশ্ন : বলেন কী!
ডাকাত : কেন, বিশ্বাস হয় না?
প্রশ্ন : বিশ্বাস কিভাবে হবে? আপনি ডাকাতি করেন, আপনার ছেলেমেয়ে তো সে রকমই হওয়ার কথা।
ডাকাত : জি না। আমি এ ব্যাপারে খুবই কঠোর ছিলাম। আমি জানি, আমার পেশাটা খারাপ। আমার ছেলেমেয়ে এ পেশায় আসুক সেটা আমি চাইনি। তাই তাদের কঠোর অনুশাসনে মানুষ করেছি।
প্রশ্ন : আপনার কথা শুনে আমি অবাক হচ্ছি।
ডাকাত : অবাক হওয়ারই কথা।
প্রশ্ন : আপনার ছেলেমেয়েরা জানে, আপনি ডাকাত?
ডাকাত : আগে জানত না। এখন জানে।
প্রশ্ন : তারা কিছু বলে না?
ডাকাত : বলে। কিন্তু আমি কিছুতেই ছাড়তে পারছি না। আমার তো এখন কোনো কিছুরই অভাব নেই। তার পরও ছাড়তে পারছি না। আমাকে বলতে বলতে ছেলেমেয়েরাও বিরক্ত।
প্রশ্ন : ডাকাতি করতে গিয়ে মারধর কেন করেন?
ডাকাত : আমি কাউকে মারধর করি না। করার প্রয়োজন হয় না। আমার নাম শুনলেই সব কিছু দিয়ে দেয়। তবে অনেকে মারধর করে। এটা খুব খারাপ। মারধর কেন করবে? এ দেশের মানুষ খুব ভালো। ভয় দেখালেই সব দিয়ে দেয়।
প্রশ্ন : ইদানীং ঢাকা শহরে ডাকাতি খুব বেড়েছে। কেন?
ডাকাত : বেকারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ডাকাতি বেড়েছে।
প্রশ্ন : আপনি যেমন পেশা হিসেবে নিয়েছেন। এ রকম অনেকেই হয়তো এটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছে।
ডাকাত : কিছু তো পেশাদার ডাকাত আছেই। আবার অনেকে দায়ে ঠেকে ডাকাতি করছে।
প্রশ্ন : ডাকাতি বন্ধের জন্য কী করা উচিত?
ডাকাত : পুলিশের তদারকি বাড়াতে হবে এবং তাদের বখরা খাওয়া বন্ধ করতে হবে। এটা না করতে পারলে কোনো দিনও ডাকাতি বন্ধ হবে না।
লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক

No comments:

Post a Comment