Sunday, January 23, 2011

নদ-নদী দখলমুক্ত হোক

চ্চ আদালত ঢাকার চারপাশের নদীগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করতে নির্বাহী বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সে নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একটি ‘বাস্তব পরিস্থিতি’র সম্মুখীন হয়েছেন।

সেটি এমনই এক পরিস্থিতি যে আদৌ আর নদী দখলমুক্ত হবে কি না, আদালতের নির্দেশ পালিত হবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের জেলা প্রশাসকরা নদী রক্ষা বিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের দশম সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন। সভায় তাঁরা উচ্চ আদালতের নির্দেশ পালন করার ক্ষেত্রে যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়েছেন তা তুলে ধরেছেন। তাঁরা বলেছেন, বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই ওই আদেশ পালন করা যাচ্ছে না। যেমন সিএস রেকর্ড অনুযায়ী আগে বুড়িগঙ্গার তীর যেখানে ছিল সেখানে এখন ঘনবসতি। কোথাও কোথাও মূল তীর যেখানে নির্দেশ করা ছিল সেখান থেকে চার কিলোমিটার নদীর অভ্যন্তরে ঢুকে গেছে। এখন সিএস (ক্যাডেস্ট্রাল সার্ভে) মেনে দখলমুক্ত করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। শুধু ৭০ বছর আগের সিএস রেকর্ড নয়, এখন বিভিন্ন নদীতীরবর্তী আরএস রেকর্ডভুক্ত জমিও বেদখল হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসকদের সে সভায় শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে, নদীর তীরের বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে যেখানে যেখানে সিএস রেকর্ড বাস্তবায়ন সম্ভব সেখানে সিএস অনুসারে এবং যেখানে আরএস অনুসারে কাজ করা সম্ভব সেখানে আরএস ধরে কাজ করতে হবে। তবে তার আগে উচ্চ আদালতের কাছে পরিস্থিতি জানিয়ে নতুন নির্দেশনা চাওয়া হবে।
নদীর তীর দখল এবং রেকর্ড-সংক্রান্ত জটিলতা শুধু ঢাকা এবং তার আশপাশেই নয়, দেশের প্রায় সর্বত্র। জেলা শহরগুলোর ভেতর দিয়ে যেসব নদী বা খাল বহমান ছিল বড় অংশই দখল হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও একসময়ের স্রোতের খালের এখন চিহ্নটুকুও নেই। যাঁরা এসব নদীর দখলে গেছেন তাঁদের প্রায় সবাই রেকর্ড-সংক্রান্ত একটি জটিলতা তৈরি করে নিয়েছেন। সরকার এ নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হলে বছর পেরিয়ে, যুগ-যুগ পেরিয়ে এক জীবন পার হয়ে যাচ্ছে। তা হলে কি এমন অবস্থা চলতেই থাকবে? সরকার অনেক সময় জনপ্রিয়তার কথা বিবেচনায় এ ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে সাহস করে না। কিন্তু একটি দেশে যাচ্ছেতাই তো চলতে পারে না। এ জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব হলো, এ বিষয়ে বিচারকদের সমন্বয়ে একটি কমিশন গঠন করা হোক। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মতো সে কমিশন সারা দেশে সরেজমিনে পরিদর্শন করে সিদ্ধান্ত দিয়ে আসবে। কমিশনের সিদ্ধান্ত রায় হিসেবে বিবেচনা করবেন এবং এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে নাÑএ রকম উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। এমন কোনো বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া এ সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে আমরা মনে করি না।

No comments:

Post a Comment