Thursday, May 31, 2012

কক্সবাজার জেলা বিএনপির শহীদ জিয়ার ৩১ তম শাহাদৎ বার্ষিকী পালন

বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহান স্বাধীনতার ঘোষক, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩১ তম শাহাদৎ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি কক্সবাজার জেলা শাখা যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনব্যাপী কর্মসূচী পালন করে। ভোরে কালো পতাকা উত্তোলন, দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করণ, কালো ব্যাজ ধারণ, সকাল ১০ টায় পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স এর মোটেল উপল-এ আলোচনা সভা ও বিশেষ দোয়া মাহফিল এবং দুপুর ১২ টায় মেজবানের আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, সহ-সভাপতি সিরাজুল হক বিএ, সরওয়ার কামাল চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক আবু ছিদ্দিক ওসমানী, প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক আকতার চৌধুরী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম, সহ দপ্তর সম্পাদক ভাইস চেয়ারম্যান নাছিমা আক্তার বকুল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি অধ্যাপক আজিজুর রহমান, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এম. মোকতার আহমদ প্রমুখ।

কক্সবাজার শহরের ঐতিহ্যবাহি লালদিঘী দখল

এবার কক্সবাজার শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহি লালদিঘীর জমিও দখল হয়ে গেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অফিস নির্মাণের জন্য লালদিঘীর দক্ষিণ পাড়ে রাতারাতি গড়ে উঠছে পাকা দালান।

এদিকে সংক্ষুব্ধ কিছু যুবক ‘ভূমিদস্যু গ্রুপের কার্যালয়’ শীর্ষক একটি সাইনবোর্ড শহরবাসীর মধ্যে কৌতুকের জন্ম দিয়েছে। আজ (বুধবার) সকাল ১১টার দিকে কিছু সংখ্যক যুবক বাংলাদেশ আাওয়ামী লীগ, কক্সবাজার জেলা শাখা, জাসদ, যুব জাসদ, কক্সবাজার জেলা কার্যালয়, জাতীয় পার্টি ও অঙ্গ সংগঠনের জেলা কার্যালয়ের পাশাপাশি ‘ভূমিদস্যু গ্রুপের কার্যালয়’ শীর্ষক সাইনবোর্ডটি টাঙ্গানো হয়।
প্রায় আড়াই‘শ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহি কক্সবাজার শহরের প্রাণ কেন্দ্রে লালদিঘী অবস্থিত। শহরবাসীর পানির সমস্যার দিকে দৃষ্টি রেখেই লালদিঘী নির্মাণ করা হয়েছিণ। বিগত সাত বছর পূর্বে কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র সরওয়ার কামাল লালদিঘীর দক্ষিণ পাড় ভরাট করে পরিবেশ সম্মত গাছ এবং ফুল গাছ লাগাবার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিকদের কাছে বিষয়টি ভাল ঠেকেনি। এতে করে জেলা আওয়ামী লীগ লালদিঘীর দক্ষিণ পাড়ের গাছ কেটে নির্মাণ কাজ শুরু করে দলীয় কার্যালয়। তাদের দেখা দেখি জাতীয় পার্টি, জাসদও লালদিঘীর পাড়ের জমি দখল করে তাদের দলীয় কার্যালয় নির্মাণ ক্জা শুরু করে। লালদিঘী দখলের প্রতিবাদে স্থানীয় সংক্ষুদ্ধ যুবকেরা আজ সকালে এই ব্যতিক্রমধর্মী সাইনবোর্ডটি টাঙ্গিয়ে দেয়।
লালদিঘীর দক্ষিণ পাড় দখল এবং এখানে অবৈধভাবে দলীয় কার্যালয় নির্মাণের ব্যাপারে কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র রাজবিহারী দাশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কোন রাজনৈতিক দলকে লালদিঘী পাড়ের জমি দখলের অনুমতি দেওয়া হয়নি এবং জমি লিজ দেওয়া হয়নি। তারা পৌরসভাকে পাশ কাটিয়ে, এমনকি পৌরসভাকে অবজ্ঞা করে পৌরসভার মালিকানাধীন জমি দখল করে দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করছে। তিনি আরো দাবী করেন পৌরসভার জমি দখল করার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে।
এব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ জয়নুল বারী বলেছেন, ‘কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র লালদিঘীর দক্ষিণপাড়ের জমি দখল করে রাজনৈতিক দলের অফিস নির্মাণের বিষয়টি আমাকে মোবাইলে অবহিত করেছেন। আমি তাঁকে বলেছি লালদিঘীর সম্পত্তি আপনার সম্পত্তি। তার রক্ষার ব্যবস্থা আপনাকে করতে হবে। নিজেরা উচ্ছেদ করতে না পারলে পৌরকর্তৃপক্ষকে আমাদেরকে অফিসিয়ালি উচ্ছেদের চিঠি দিতে হবে। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ এখনো পর্যন্ত কোন চিঠি আমাদেরকে দেননি।’

তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে সরকারের পতন ঘটানো হবেঃ সালাহউদ্দিন আহমদ

“১০ জুনের মধ্যে তত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি মেনে না নিলে তীব্র গণ আন্দোলনের মুখে এ স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদ সরকারের পতন ঘটানো হবে।

কেননা আওয়ামীলীগের দু:শ্বাসনের বিরুদ্ধে এ দেশের সাধারণ মানুষ ফুঁসে উঠেছে। আজ দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন, অর্থনীতি বিপর্যস্থ। এভাবে দেশ চলতে পারেনা। শুধুমাত্র ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য বাকশালী এ সরকার বিরোধী রাজনীতি নিশ্চিহ্ন করার অংশ হিসেবে বিরোধী দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দদেরকে কারাগারে নিক্ষিপ্ত করছে। কিন্তু বাংলাদেশের কারাগারের ধারণ ক্ষমতার বেশী নেতা কর্মীকে কারাগারে নিক্ষিপ্ত করা হলেও বিএনপির রাজনীতি থেমে থাকবে না।”
গতকাল ৩০ মে কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সফর উপলক্ষ্যে কক্সবাজার জেলা বিএনপি আয়োজিত বিশেষ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ একথা বলেন। তিনি আরো বলেন, যাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে এ সরকার ক্ষমতায় এসেছে তাদের সেসব বিদেশী প্রভুরাও আজ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আর তাই গণতন্ত্রকে বিকিয়ে দিয়ে দেশে হত্যা, খুন, গুম আর লাশের রাজনীতি শুরু করেছে আওয়ামীলীগ। তিনি আরো বলেন, এ সরকার যেভাবে দেশ চালাচ্ছে তাতে তাদের পরিণতি সাবেক স্বৈরশাসকদের চেয়ে ভয়াবহ হবে। এ সরকারের বিরুদ্ধে এমন আন্দোলন করতে হবে যাতে আওয়ামীলীগের শিকড পর্যন্ত উপড়ে যায়। কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কনফারেন্স হলে জেলা বিএনপি আয়োজিত এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন, জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরী। এসময় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শামিম আরা স্বপ্না, সহ-সভাপতি সিরাজুল হক বিএ, সরওয়ার কামাল চৌধুরী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম, সহ-দপ্তর সম্পাদক ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আক্তার বকুল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি অধ্যাপক আজিজুল হক, জেলা মৎস্যজীবি দল সভাপতি হামিদ উদ্দিন ইউছুপ গুন্নু, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোখতার আহমদ, জেলা ছাত্রদল সভাপতি সৈয়দ আহমদ উজ্জল, কুতুবদিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন, টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো: আবদুল্লাহ, উখিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার জাহান চৌধুরী, জেলা বিএনপির সদস্য শাহাব উদ্দিন চৌধুরী, সৌদি আরব কক্সবাজার প্রবাসী বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মহিউদ্দিন চৌধুরী,কুতুবদিয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম কুতুবি, রামু উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মো: আবদুশ শুক্কুর, মহিলাদল নেত্রী ফরিদা ইয়াসমিন, তাহেরা বেগম, ছাত্রদল নেতা আমীর আলী, রাশেদুল হক রাসেল, শাহ মোশারফ হোসেন, জামাল মাহমুদ, মোহাম্মদ আলী, আবদুস সালাম প্রমূখ। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আবু ছিদ্দিক ওসমানী ও প্রচার সম্পাদক অধ্যাপক আকতার চৌধুরী। মূল অনুষ্ঠানস্থলে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত নেতা-কর্মীদের অভ্যর্থনা জানান জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী।

কক্সবাজারে নোংরা পানির রমরমা বাণিজ্য

পর্যটন শহর কক্সবাজারে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের নামে নোংরা পানি বাজারজাত করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী।

শহরে বে, দারুচিনি ও হিমছড়ি নামের তিনটি পানীয় জলের (ড্রিংকিং ওয়াটার) কম্পানি অবৈধভাবে পানি বাজারজাতকরণে জড়িত বলে অভিযোগ ওঠেছে। এসব কম্পানি দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার শহরের পর্যটন জোনে শত শত হোটেল, রেস্টুরেন্ট, অফিস ও বাসা-বাড়িতে বিশুদ্ধ পানির নামে জারের নোংরা পানি সরবরাহ করে আসছে। এমনকি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে দুটি কারখানায় এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় ও কারখানা সিলগালা করা হলেও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা শহর জুড়ে অবৈধভাবে জারভর্তি পানি বাজারজাত করছে। ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকেও কম্পানিগুলোকে নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
সরেজমিন দেখা যায়, কক্সবাজারে হিমছড়ি ড্রিংকিং ওয়াটার, বে ড্রিংকিং ওয়াটার ও দারুচিনি ড্রিংকিং ওয়াটার নামের তিনটি কম্পানি জারভর্তি পানি বাজারজাত করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বে ও দারুচিনি ড্রিংকিং ওয়াটার কম্পানির বিএসটিআই লাইসেন্স নেই। তারা অবৈধভাবে বিএসটিআই এর মানচিহ্ন ব্যবহার করে কার্যক্রম চালাচ্ছে। অপরদিকে, হিমছড়ি ড্রিংকিং ওয়াটার কম্পানিটির বিএসটিআই লাইসেন্স থাকলেও তা নবায়ন করা হয়নি। এছাড়া অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন, পর্যাপ্ত খোলামেলা জায়গার অভাব ও সরাসরি মোটর পাম্প থেকে নলের মাধ্যমে জারে পানি ভর্তি করাসহ নানা অনিয়মের কারণে কম্পানিটি লাইসেন্সের শর্তও ভঙ্গ করেছে। শহরের কয়েকটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে জারের মধ্যে পানি ভর্তি করা হয়। জারে ভর্তি করার পর পিকআপ ভ্যান এ করে শহরের বিভিন্ন হোটেল- রেস্তোঁরা, অফিস ও বাসা-বাড়িতে বিশুদ্ধ পানির নামে নোংরা পানি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ইতোপূর্বে দুই দফা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হয়েছে পানির এসব কারখানায়।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খালেদ মাহমুদ ও নায়েরুজ্জামান অবৈধ পন্থায় নোংরা পানি বাজারজাত করার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে দুই দফা জরিমানা আদায় করে। সর্বশেষ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি র‌্যাব-৭ এর সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে কারখানা সিলগালা করে দেওয়া হয়। কিন্তু এর পরও বিএসটিআই এর অনুমোদন ছাড়া নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানির নামে নোংরা পানি বাজারজাত করে আসছে তারা।
এ বিষয়ে 'বে ড্রিংকিং ওয়াটার' এর ম্যানেজার সরওয়ার জানান, বিএসটিআই এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের পানি বাজারজাত করতে বলা হয়েছে। কিন্তু অবৈধভাবে পানি বাজারজাত করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এটি আমাদের অপরাধ নয়-আমরা যোগাযোগ করলেও বিএসটিআই কর্মকর্তারা লাইসেন্স দিচ্ছেন না।'
কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া এলাকায় 'পাহাড়িকা' নামক একটি ভবনের নিচতলায় 'হিমছড়ি ড্রিংকিং ওয়াটার' এর নামে জারভর্তি করে বিশুদ্ধ পানির নামে নোংরা পানি বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। 'হিমছড়ি' ব্র্যান্ডের এ জারের পানি বাজারজাত করতে শহরের প্রধান সড়কের তারাবনিয়ারছড়া এলাকায় আল-মোস্তফা কর্পোরেশন নামের একটি দোকানও রয়েছে। বিশুদ্ধ পানির নামে সাধারণ পানি জারে ভর্তি করে বিক্রি করা হচ্ছে। 'পাহাড়িকা' ভবনের নিচতলায় জারে পানিভর্তির কারখানায় গিয়ে দেখা যায় সেখানে পানি বিশুদ্ধ করার যন্ত্রপাতি ও মান যাচাইয়ের জন্য কেমিস্ট এবং প্রয়োজনীয় কোনো ল্যাবরেটরি নেই। এমনকি কারখানার পরিবেশও নোংরা। রয়েছে নানা অব্যবস্থাপনা। সরাসরি মোটর পাম্প থেকে নলের সাহায্যে জারে পানি ভর্তি করা হয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে এ কারখানার বিরুদ্ধে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ওই কম্পানির কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে।
এছাড়া কক্সবাজার শহরের আলিরজাঁহাল এলাকায় সাইফুল কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন 'গ্রিন প্যালেস' নামের ভবনের নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে কারখানা স্থাপন করে 'দারুচিনি ড্রিংকিং ওয়াটার' নামে পানি বাজারজাত করা হচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এর অনুমোদন না নিয়েই বিএসটিআই এর মানচিহ্ন ব্যবহার করা হয়। এ বিষয়ে মেসার্স মাজেদ এন্টারপ্রাইজ এর মালিক মাজেদ বলেন, 'আমরা দু বন্ধু মিলে সেবামূলক একটি ব্যবসায় নেমেছি। বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকবার তার কারখানা পরিদর্শন করেছে। তাদের নির্দেশনামতো কারখানা তৈরি করা হচ্ছে।' এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, গত তিনমাস আগে পানির কম্পানিগুলোকে নোটিশ ইস্যু করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও তারা নোটিশের কোনো জবাব দেননি। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, 'শিগ্গিরই এসব পানির কারখানায় অভিযান পরিচালনা করা হবে।'

ফিশিং বোটের অবৈধ কারখানা উচ্ছেদ

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় গতকাল সোমবার বিকেলে অবৈধ ফিশিং বোট তৈরির একটি কারখানা উচ্ছেদ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এ সময় ওই কারখানা থেকে সংরক্ষিত বনের বিপুল পরিমাণ কাঠসহ দুটি বোট জব্দ করা হয়।

বন বিভাগের মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ বজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বিকেল তিনটার দিকে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম কাউসার হোসেনের নেতৃত্বে বনকর্মীরা অভিযান চালিয়ে কুতুবজোম ইউনিয়নের তাজিয়াকাটা এলাকায় সাব্বির ফিশিং ইন্ডাস্ট্রিজ নামের একটি অবৈধ ফিশিং বোট তৈরির কারখানা উচ্ছেদ করেন।
এ সময় ওই কারখানা থেকে সংরক্ষিত বনের বিপুল পরিমাণ কাঠসহ নির্মাণাধীন দুটি ফিশিং বোট জব্দ করেন।

মহেশখালীর সংরক্ষিত বনে ১০ হাজার অবৈধ বসতি

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় সংরক্ষিত বনের ভেতরে অন্তত ১০ হাজার অবৈধ বসতি স্থাপন করা হয়েছে। এসব বসতিতে প্রায় ৫০ হাজার লোক বসবাস করছে।

সংরক্ষিত বনে এভাবে বসতি গড়ায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এসব বসতি উচ্ছেদের ব্যাপারে বন বিভাগ কার্যকর কোনো ভূমিকা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
বন বিভাগের মহেশখালী রেঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৬০ সালের পর থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে সংরক্ষিত বনে অবৈধভাবে বসতি স্থাপন করে বসবাস করছে। বনকর্মীদের হাত করে স্থানীয় লোকজন সংরক্ষিত বনের পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিয়ে উপকূলীয় মাতারবাড়ি, ধলঘাট, বাঁশখালী ও কুতুবদিয়ার লোকজন এসব পাহাড়ে বসতি স্থাপন করে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছে।
গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কালামারছড়া, হোয়ানক, বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী ও শাপলাপুর এলাকায় লোকজন সংরক্ষিত বনে বসতি স্থাপন করে বসবাস করছে। আর কালারমারছড়া ইউনিয়নের চালিয়াতলি এলাকায় পাহাড় কেটে অবৈধভাবে বসতি স্থাপনের প্রস্তুতি চলছে।
চালিয়াতলি এলাকার বাসিন্দারা জানান, বনকর্মীদের হাত করে স্থানীয় লোকজন রাতে সংরক্ষিত বনের পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করছে। এ নিয়ে বনকর্মীদের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো কাজ হয় না। শাপলাপুর বিট কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, কয়েক যুগ ধরে এলাকার লোকজন সংরক্ষিত বনভূমিতে অবৈধভাবে বসতি স্থাপন করে বসবাস করে আসছে। তাদের সেখান থেকে সরে যেতে বলা হলেও তারা সরছে না। তবে বনের ভেতরে নতুন করে বসতি স্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বনকর্মীদের বাধার মুখে স্থানীয় লোকজন নতুন করে বসতি স্থাপন করতে পারছে না।
কালারমারছড়ার আঁধারঘোনা পূর্ব পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত নুরুল ইসলাম, মনির হোসেন ও রহিমা বেগম জানান, দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ি বনভূমিতে কোনো রকম বসতঘর নির্মাণ করে তাঁরা বসবাস করে আসছেন। অন্যত্র গিয়ে বসতবাড়ি নির্মাণ করার মতো সামর্থ্য তাঁদের নেই। একই কথা বললেন শাপলাপুর ইউনিয়নের জেএম ঘাট পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত নুরুল কাদের, ইকবাল হোসেন ও জয়নাল আবেদিন।
বন বিভাগের মহেশখালী রেঞ্জ কার্যালয় সূত্র জানায়, কালারমারছড়া, হোয়ানক, বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী ও শাপলাপুর এলাকায় বন বিভাগের ১৮ হাজার ২৮৬ একর সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার একর পাহাড়ি বনভূমি অবৈধ দখলে রয়েছে। উপকূলীয় বন বিভাগের মহেশখালীর রেঞ্জ কর্মকর্তা বজলুর রহমান বলেন, ১০ হাজার একর সংরক্ষিত পাহাড়ি বনভূমিতে অন্তত ১০ হাজার অবৈধ বসতি স্থাপন করে লোকজন বসবাস করছে। ইতিমধ্যে শাপলাপুর ও ছোট মহেশখালী এলাকায় সংরক্ষিত পাহাড়ের বনভূমিতে বসবাসরত অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে বেশ কয়েকবার আবেদন করেও কোনো কাজ হয়নি। তবে পাহাড় কাটা বন্ধ করার জন্য বনকর্মীরা চেষ্টা করছেন বলে তিনি দাবি করেন।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম কাউসার হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় কেটে সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে লোকজন অবৈধভাবে বসতি স্থাপন করায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।

দুই জেলায় তামাকচুল্লি বানাতে দেড় লাখ গাছ

কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার আট উপজেলায় এ বছর ৪৫ হাজার একর জমিতে তামাকের চাষ হয়েছে। প্রতি আড়াই একর বা এক হেক্টর জমির তামাকপাতা শুকাতে একটি চুল্লি লাগে।

সেই হিসাবে এই দুই জেলায় প্রায় ১৮ হাজার চুল্লি বানাতে হয়েছে। একটি চুল্লি তৈরিতে মাঝারি আকৃতির আটটি ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছ লাগে। সেই হিসাবে এবার শুধু তামাকচুল্লি তৈরির জন্য এক লাখ ৪৪ হাজার গাছ কাটা পড়েছে।
প্রতিটি চুল্লিতে মৌসুমে গড়ে ৫০০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। সেই হিসাবে ১৮ হাজার চুল্লিতে এবার ৯০ লাখ মণ কাঠ পুড়ছে। এই গাছ ও কাঠ সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও সামাজিক বনায়ন থেকে এসেছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় তামাক চাষি ও কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার সদর, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা ও আলীকদম উপজেলায় প্রায় ৪৫ হাজার একর জমিতে তামাকের চাষ হয়েছে। বর্তমানে এ দুই জেলার ৭০ শতাংশ জমির তামাকপাতা তোলা হয়ে গেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর, কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, তামাকচুল্লি থেকে ছড়িয়ে পড়া বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যহানি যেমন বাড়ছে, তেমনি বায়ুদূষণও হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর বায়ুদূষণকারী এসব চুল্লির মালিকদের তালিকা তৈরির কাজ চালাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ দুই জেলায় ১৮ হাজার তামাকচুল্লি রয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, শিল্পকারখানা ও ইটভাটা স্থাপনের আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের যেমন ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক, তামাকচুল্লির ক্ষেত্রেও পরিবেশের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কক্সবাজারের উপপরিচালক নরেশচন্দ্র বারই জানান, তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করার জন্য কৃষি বিভাগ নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। তার পরও তামাক চাষ বন্ধ করা যাচ্ছে না। তামাক চাষের জমির প্রকৃত হিসাব কৃষি বিভাগে নেই।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল, গর্জনিয়া, রাজারকুল, কচ্ছপিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার আদর্শগ্রাম, সদর, বাইশারী, ঘুমধুমসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে চুল্লি তৈরি করে শুকানো হচ্ছে তামাকপাতা। অধিকাংশ চুল্লিতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বনের কাঠ। বেশির ভাগ চুল্লি বাঁকখালী নদীর দুই তীরে স্থাপন করা হয়েছে।
ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসেরচর গ্রামের একটি চুল্লিতে তামাকপাতা শুকাচ্ছিলেন মমতাজ আহমদ। চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ায় কাশছিলেন তিনি। মমতাজ বলেন, ‘বেশি লাভের আশায় ফসলের মাঠে কয়েক বছর ধরে তামাকের চাষ করছি। তামাকের ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। তামাকের আবাদ আর করব না বলে ঠিক করেছি।’ একটি চুল্লি তৈরিতে কমপক্ষে আটটি গাছ লাগে বলে জানান এই তামাক চাষি।
কক্সবাজার (উত্তর) বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) এম খালেক খান জানান, কাঠ পুড়িয়েই চুল্লিতে তামাক উৎপাদন করা হচ্ছে। সংরক্ষিত বনাঞ্চল রক্ষার জন্য বনপ্রহরীদের রাত-দিন ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে।
নাইক্ষ্যংছড়ির আদর্শ গ্রামের তামাক চাষি আবুল মনজুর জানান, দশ ফুট দীর্ঘ, আট ফুট প্রস্থের মাটির ছোট ও উঁচু একটি ঘরকে তামাকচুল্লি বানানো হয়। ওই আকৃতির একেকটি চুল্লি বানাতে আটটি গাছ লাগে। সাধারণত মাঝারি আকৃতির ইউক্যালিপটাস, আকাশমণিগাছ চুল্লি বানানোর কাজে ব্যবহূত হয়। তবে অনেকে সংরক্ষিত বন থেকে গাছ কেটে এনেও চুল্লি বানায়।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা জানান, দুই জেলার প্রধান দুই নদী মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর দুই তীরে কম করে হলেও ৩০ হাজার একর জমিতে আগে ধানসহ মৌসুমি রবিশস্যের চাষ হতো। কয়েক বছর ধরে সেখানে তামাকের চাষ হচ্ছে।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন কাজল কান্তি বড়ুয়া জানান, তামাক চাষের কারণে বিভিন্ন এলাকায় মানুষের শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, শিশুদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাসহ নানা ধরনের রোগ দেখা দিচ্ছে। ইটভাটার মতো তামাকচুল্লি তৈরির আগে পরিবেশ ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক করা হলে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি বনও রক্ষা পাবে বলে মত দেন তিনি।

Saturday, May 26, 2012

চকরিয়ায় সেনাবাহিনীর পরিত্যক্ত জমিতে কোটি টাকার মার্কেট নির্মাণ

কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরশহরে সেনাবাহিনীর মালিকানাধীন পরিত্যক্ত জমিতে প্রভাবশালীরা স্থাপনা নির্মাণ করে কোটি টাকার মার্কেট বাণিজ্য চালাচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

এ জমি উদ্ধারে চট্টগ্রাম প্রতিরক্ষা বিভাগের (এমইএস) ইস্টার্ন সার্কেল কার্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা মামলার পর উচ্ছেদ অভিযান জোরদার করবে এমন হুংকার ছাড়লেও গত ৬ মাসে তারা জমিটি উদ্ধারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অভিযোগ উঠেছে, উল্টো প্রতিরক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্টরা মোটা অঙ্কের ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রভাবশালী দখলবাজ চক্রকে সরকারি জমিতে মার্কেট নির্মাণের সুযোগ দিয়েছে। অভিযোগে জানা গেছে, পৌরশহরের জনতা মার্কেট সাব রেজিস্ট্রার অফিস মরহুম মোজাহের আহমদ কোম্পানির বাড়ির পুকুর লাগোয়া প্রতিরক্ষা বিভাগের ১০ শতক জমি অবৈধভাবে দখলে নিয়ে একটি প্রভাবশালী চক্র প্রকাশ্যে স্থাপনা (মার্কেট) নির্মাণ শুরু করে প্রায় ৬ মাস আগে। চট্টগ্রাম প্রতিরক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানায়, ওই জমি লিজ পেতে আবেদন করেন স্থানীয় শামসুল আলম নামের একব্যক্তি। কিন্তু এমইএস কর্তৃপক্ষ তার আবেদন বাতিল করে দেন। এমনকি ওই জমি কাউকে লিজ দেননি। অভিযোগ উঠেছে, শামসুল আলম গং এরপরও তার ভাই এক সহকারী সচিবের দাপট দেখিয়ে প্রতিরক্ষা বিভাগের ওই জমিতে অবৈধভাবে স্থাপনা (মার্কেট) নির্মাণ করেন। বর্তমানে মার্কেটের একেকটি দোকান ৫ থেকে ১০ লাখ টাকায় ভাড়া দিয়ে তারা কোটি টাকার বাণিজ্য শুরু করেছে।
এমইএস সূত্র জানায়, তাদের জমি দখল ও স্থাপনা নির্মাণের ঘটনায় তারা শামশুল আলম ও তার ভাই কাউছার আলম, মোরশেদ আলম, ফাইচার আলম ও এরশাদ আলমকে আসামি করে একটি উচ্ছেদ মামলা (নং ৬২৮/১১) করেছেন। মামলার আদেশে অভিযুক্তদের একাধিকবার নোটিশ দেয়া হলেও তারা এসবের তোয়াক্কা না করে মার্কেট নির্মাণ অব্যাহত রাখে।
স্থানীয়রা জানান, মামলার নোটিশ নিয়ে চট্টগ্রাম প্রতিরক্ষা বিভাগের (ইস্টার্ন সার্কেল) মিলিটারি এস্টেট কর্মকর্তার কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা এলাকা পরিদর্শন করে অভিযুক্তদের স্থাপনা নির্মাণে বাধা দিয়েছেন। তবে জড়িতরা ওই কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের উপটোকন (ঘুষ) ধরিয়ে দিলে তারা বিগত ৬ মাসেও সরকারি কোটি টাকার এ জমি উদ্ধারে আর কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ সুযোগে জড়িতরা বর্তমানে মার্কেটটি দোকান আকারে প্লট করে লোকজনকে ভাড়া দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে চট্টগ্রাম প্রতিরক্ষা বিভাগের (মিলিটারি এস্টেট কর্মকর্তার কার্যালয়ের) সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে, তারা সরকারি ওই জমি উদ্ধারে এরই মধ্যে উচ্ছেদ মামলা করেছে জড়িতদের বিরুদ্ধে। কয়েকবার নোটিশও দেয়া হয়েছে। আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে জমিটি উদ্ধারে একটু বিলম্ব হচ্ছে। তবে জড়িতরা যতবড় প্রভাবশালী হোক অবশ্যই তাদের দখল থেকে সরকারি জমি উদ্ধার করা হবে।

উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সঃ ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের কাজ চলছে ঢিমেতালে

উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের কাজ চলছে ঢিমেতালে। ২০১০ সালের মে মাসে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে উখিয়া উপজেলা

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে পরবর্তী ১৮ মাসের মধ্যে শেষ করে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ওই হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম কখন থেকে শুরু হবে তা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল প্রকৌশলীও বলতে পারেননি।
দ্বিতীয় দফা সময় বর্ধিত করার পরও হাসপাতাল ও অন্যান্য ভবন নির্মাণ, বিদ্যুতায়ন এবং অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জার কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করছে।
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আধুনিকায়ন ও জনগণের স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ২০১০ সালের মে মাসে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে আধুনিক হাসপাতাল ভবন, চিকিৎসক ও কর্মচারীদের আবাসিক ভবন, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও পুরনো হাসপাতাল ভবনের আনুষঙ্গিক মেরামত প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে স্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদফতর চট্টগ্রাম নির্বাহী প্রকৌশলীর দফতর থেকে দরপত্র আহ্বান পূর্বক ২০১০ সালের মে মাসে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স উন্নীতকরণের কাজ শুরু করে। চট্টগ্রামের জুবলি রোডের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফ্রেন্ডস ইন্টারন্যাশনাল ওই নির্মাণ কাজ ১৮ মাস সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন করার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি।
নির্মাণ কাজ তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত স্বাস্থ্য প্রকৌশলীর অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মোর্শেদ বলেন, অবশ্যই নির্মাণ কাজ প্রথমদিকে কিছুটা নিম্নমানের হলেও পরে কাজের মান রক্ষা করে কাজ চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, ঠিকাদারের নির্ধারিত সময়ের পরও দ্বিতীয় দফা সময় বর্ধিত করা হয়েছে এরপরও কাজ সম্পন্ন করা যায়নি। এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের অপেক্ষাই। তবে তিনি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পাদন হবে বলে আশা করেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফ্রেন্ডস ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে নির্মাণ কাজে ঠিকাদারের নিয়োজিত লোকজন এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হয়নি। উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এসএ আবু সাঈদ বলেন, সব মিলিয়ে এখনও প্রায় ২০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে। হাসপাতাল ভবন, ডক্টর্স ভবন, নার্স ভবন ও স্টাফ ভবন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলেও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ফিটিংস ফিক্সিংসের কাজ অনেক বাকি রয়েছে। নতুন ভবনে বিদ্যুতায়নের কাজও বাকি রয়েছে।

বাংলাদেশের হয়ে খেলতেই আমার জন্মঃ সাকিব

ব্যাট-বলে দারুণ পারফরমেন্স করে টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও (আইপিএল) কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ধারাবাহিক পারফর্ম করছেন।

আগামীতে তিনি ছাড়াও আরও অনেক বাংলাদেশি ক্রিকেটার প্রতিযোগিতায় আসার জন্য প্রস্তুত বলে ‘উইজডেন ইন্ডিয়াকে’ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন বাঁহাতি এই ক্রিকেটার।
এশিয়া কাপে অসাধারণ খেলেছে বাংলাদেশ। পারফরমেন্সের এমন রূপান্তর কিভাবে ঘটেছিলো। এমন প্রশ্নের জবাবে সাকিব, ‘দারুণ টুর্নামেন্ট (এশিয়া কাপ) হয়েছে। যদি আপনি ফলাফল দেখেন। তাহলে আমরা সত্যি ভালো করেছি। আমি এখনো অনুভরি করি, আমাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়া উচিৎ ছিলো। যাই হোক, খেলায় আমাদের মনোভাবে আমি সন্তুষ্ট ছিলাম।’

মজার বিষয় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) পরপর শুরু হয় এশিয়া কাপ। প্রথম বারের মতো আয়োজিত বিপিএল কি বাংলাদেশের পারফরমেন্সের উন্নতিতে ভূমিকা রেখেছে? সাকিব, ‘হ্যাঁ, প্রতিযোগিতায় বিশাল টার্গেট তাড়া করেছি আমরা। এর আগে ১৫০-১৬০ রান ধাওয়া করে জেতার বিষয়টি কখনো চিন্তা করিনি। কিন্তু বিপিএলের পর আমরা জেনেছি কিভাবে তা করতে হয়। এটাই আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়েছে।’

আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। তার মতো আরও অনেক ক্রিকেটার কি বাংলাদেশ দলে ডাক পাওয়ার অপেক্ষায় আছে। এবিষয়ে সাকিবের মন্তব্য, ‘এমন আরও বেশকয়েকজন ক্রিকেটার পাইপলাইনে রয়েছে। বিপিএলে কয়েকজন ক্রিকেটার ভালো খেলেছে। এমুহূর্তে তাদের নাম বলতে চাইছি না আমি। কারণ ঠিক কাজ হবে না। আশা করি, বিসিবি তাদের সন্ধান করবে।’

অনেকে বলে ছোট পুকুরের বড় মাছ আপনি। আপনার মত কি? এমন প্রশ্নের জবাবে সাকিব, ‘বিষয়টি ঠিক নয়। কেননা আমার জন্ম হয়েছে বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেট খেলার জন্য। এ মুহূর্তে যে অবস্থায় আছি, তাতে আমি খুবই খুশি। কারণ এ পথেই উন্নতি হচ্ছে আমার ক্রিকেটের।’

বাংলাদেশের জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নেতৃত্বের হাতবদল হওয়ায় দলে আপনার বর্তমান  ভূমিকা। এ প্রশ্নের জবাবে সাকিবের ভাষ্য, ‘আমার মনে হয়, মাঠের ভেতরে ব্যাট ও বল হাতে দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ আমি। আর বাইরেও আমার কিছু দায়িত্ব আছে। বিশেষ করে, তরুণদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা।’

আগামী বছরে আপনি কি আরও বাংলাদেশি ক্রিকেটার আইপিএলে দেখতে চান? এবিষয়ে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘বেশকয়েকজন ক্রিকেটার রয়েছে যারা আগামী মৌসুমে ডাক পেতে পারে প্রতিযোগিতায়। এরই মধ্যে তামিম ইকবাল চুক্তিবদ্ধ হয়েছে পুনে ওয়ারিয়র্সে। যদিও কোনো ম্যাচ খেলেনি। কিন্তু আমরা জানি, সে অসাধারণ ক্রিকেটার।’

ফাইনালে নাইট রাইডার্সের সঙ্গী চেন্নাই

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) মুরালি বিজয়ের ঝড়ো শতকে টানা তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে চেন্নাই সুপার কিংস।

শুক্রবার লিগের দ্বিতীয় কোয়ালিফাইং ম্যাচে তারা ৮৬ রানে উড়িয়ে দিয়েছে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসকে।
স্কোর-
চেন্নাই সুপার কিংস: ২২২/৫
দিল্লি ডেয়ারডেভিলস: ১৩৬ (১৬.৫ ওভার)
ফল: চেন্নাই ৮৬ রানে জয়ী।

চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরাম স্টেডিয়ামে টস জিতে স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানান দিল্লি ডেয়ারডেভিলস অধিনায়ক বীরেন্দ্র শেবাগ। উদ্বোধনী জুটিতে মুরালি বিজয় ও মাইকেল হাসি উড়ন্ত সূচনা এনে দেন চেন্নাইকে। দলীয় ৬৮ রানে বরুণ অ্যারনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন মাইকেল হাসি (২০)। দ্বিতীয় উইকেটে সুরেশ রায়নাকে নিয়ে ব্যাটিং তান্ডবে মেতে ওঠেন মুরালি। ১৭ বলে ২৭ রান করে রায়না বিদায় নিলেও থামানো যায়নি মুরালিকে। পরবর্তীতে ধোনি ও ডোয়াইন ব্রাভোকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলেন লিগের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। ইনিংসের শেষ বলে ওয়ার্নার ও ওঝার রান আউটের ফাঁদে পড়লেও দলকে ২২২ রানের সংগ্রহ এনে দেন মুরালি। মাত্র ৫৮ বলে ১৫টি চার ও চার ছক্কায় ১১৩ রানের ইনিংস খেলেন এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। এছাড়া ধোনি দশ বলে ২৩ ও ব্রাভো ১২ বলে তিনটি চার ও দুই ছ’য়ে করেন ৩৩ রান।

৬৩ রানে দুটি উইকেট নেন বরুণ অ্যারন। এছাড়া একটি করে পেয়েছেন উমেশ যাদব ও পাওয়ান নেগি।

বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২২ রানেই ডেভিড ওয়ার্নার (৩) ও অধিনায়ক শেবাগের (১) উইকেট দুটি হারিয়ে বিপাকে পড়ে দিল্লী। পরবর্তী ব্যাটসম্যানরা নিয়মিত উইকেট বিলিয়ে আসায় ১৩৬ রানেই মুখ থুবড়ে পড়ে ডেয়ারডেভিলসদের ইনিংস।

মাহেলা জয়াবর্ধনের ব্যাট থেকে সর্বোচ্চ ৫৫ রান আসে। তার ইনিংসে ছিল চারটি চার ও দুটি ছক্কা। এছাড়া রস টেলর ২৪ ও আন্দ্রে রাসেল ১৬ রান করেন।

২৩ রানে তিনটি উইকেট নিয়ে ডেয়ারডেভিলস ইনিংসে ধস নামান রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এছাড়া শাদাব জাকাতি দুই উইকেট দখল করেন।

অনবদ্য ব্যাটিংয়ের জন্য ম্যাচ সেরা হন মুরালি বিজয়।

২৭ মে ফাইনালে নিজেদের মাঠে চেন্নাই সুপার কিংস মুখোমুখি হবে কলকাতা নাইট রাইডার্সের।

মধুর প্রতিশোধ মোহামেডানের

লিগের প্রথম পর্বে শেখ রাসেল ৩-০ গোলে হারিয়েছিলো মোহামেডানকে। দ্বিতীয় সাক্ষাতে শুক্রবার রাসেলকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে সাদা-কালোরা।

আগের ম্যাচে আবাহনীর বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলা মোহামেডান শেখ রাসেলের বিপক্ষে নিজেদের সেভাবে মেলে ধরতে পারেনি। বল দখলের লড়াইয়ে সাদা-কালোদের চেয়ে এগিয়েই ছিলো শেখ রাসেল।
১২ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যায় মোহামেডান। ফরোয়ার্ড ওয়াহেদ ও মিডফিল্ডার মোবারক বল আদান-প্রদান করে বক্সে ঢুকে পড়েন। মোবারকের প্রথম প্রচেষ্টা গোলরক্ষক বিপ্লব ভট্টাচার্য ঠেকিয়ে দিলেও দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় নিশানাভেদ করেন এই মিডফিল্ডার। এই অর্ধে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় কোচ এমেকা ইউজিগোর দল।

৬১ মিনিটে বুকোলার প্রচেষ্টা নস্যাৎ করেন মোহামেডান গোলরক্ষক তিতুমীর চৌধুরী টিটু। ৭৯ মিনিটে শেখ রাসেল মিডফিল্ডার ইউসুফের জোরালো শট প্রতিহত করে দলকে আবারও বিপদ থেকে রক্ষা করেন এই গোলরক্ষক। ৮৬ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় সাদা-কালোরা। শেখ রাসেল ডিফেন্ডার আমিনুল মোহামেডানের নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড অগাস্টিন চিজোবাকে বক্সে ফেলে দিলে রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। স্পট কিক থেকে নিশানাভেদ করেন বেনিনের মিডফিল্ডার ওকালাওন। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ হলেও বাকি সময় ব্যবধানে হেরফের ঘটাতে পারেনি কোনো পক্ষই।

এ জয়ে ১৩ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে একধাপ এগিয়ে পঞ্চমস্থানে মোহামেডান। এক ম্যাচ বেশি খেলে ২১ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয়স্থান ধরে রেখেছে শেখ রাসেল।

তিন পয়েন্ট পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে মাহামেডান কোচ এমেকা ইউজিগো বলেন, ‘যেভাবে চেয়েছি ছেলেরা সেভাবে খেলতে পারেনি। তবে তিন পয়েন্ট পেয়েছি এটাই বড় বিষয়।’

শেখ রাসেল কোচ মারুফুল হক তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘আমাদের শিরোপা স্বপ্ন আগেই শেষ হয়ে গেছে। এই ম্যাচে অনেকগুলো আক্রমণ গড়লেও ফিনিশিংয়ের অভাবে গোল পাইনি। লিগে আমাদের আর কোনো আশা নেই। সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ছেলেরা যে পারফরমেন্স দেখিয়েছে তাতে খুশি আমি।’

বিদ্যুৎ-পরিস্থিতি আরও অসহনীয় হতে পারেঃ ক্ষোভ সামাল দিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা চেয়ে চিঠি

সারা দেশে লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থাগুলো। এ কারণে বিদ্যুৎ বিতরণের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বিতরণকারী সংস্থাগুলো বলছে, সেচ মৌসুম শেষ হওয়ার পরও দিন-রাতনির্বিশেষে এক ঘণ্টা পর পর লোডশেডিং চলছে। এ অবস্থায় তাদের পক্ষে মানুষের ক্ষোভ সামলানো কঠিন হবে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান এ এস এম আলমগীর কবির গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, জেলা প্রশাসকদেরও সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ সঞ্চালন ও বিতরণব্যবস্থার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে।
এদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসা এবং কয়েকটি পৌরসভার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, লোডশেডিং না কমলে এবং গরম আরও দুই সপ্তাহ অব্যাহত থাকলে পানি সরবরাহে আরও সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ইতিমধ্যেই পানিসংকট তীব্র হয়েছে।
ফলে গ্রীষ্মের এই দহনে বিদ্যুৎ ও পানির সংকট সারা দেশের জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শুধু বিদ্যুৎ-পরিস্থিতির উন্নতি হলেই এই বিপর্যয়কর অবস্থার অবসান হতে পারে।
লোডশেডিং কত বাড়বে: প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কথায় আস্থা রেখে শহর-নগরবাসী মানুষ আশা করেছিল যে সেচ মৌসুম শেষ হলে লোডশেডিং কমবে। কিন্তু সে আশা এখন হতাশায় পরিণত হয়েছে।
লালবাগের ডুরিআঙ্গুল লেনের বাসিন্দা নূর মুহাম্মদ গতকাল শুক্রবার ফোনে প্রথম আলোর কাছে জানতে চান, ‘সেচ মৌসুম শেষ হলেও গভীর রাতে লোডশেডিং বন্ধ হচ্ছে না কেন?’ লোডশেডিং কমবে না, বরং আরও বাড়তে পারে—এ কথা শুনে তিনি হতবাক।
বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থার নিরাপত্তা চেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চাওয়া অন্যতম প্রতিষ্ঠান ডিপিডিসি। এর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে নূর মুহাম্মদের প্রশ্নটি করা হলে তিনি বলেন, গরমের তীব্রতা বাড়লে এবং বিদ্যুতের সরবরাহ বর্তমানের চেয়ে না বাড়লে প্রতিবার লোডশেডিংয়ের মধ্যকার ব্যবধান এক ঘণ্টার চেয়ে কমিয়ে আনতে হতে পারে।
আরও দুটি প্রধান সরবরাহকারী কোম্পানি পল্লী বিদ্যুৎ (আরইবি) এবং ডেসকোর কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ বর্তমানের মতো থাকলেও গরম বাড়লে সব ক্ষেত্রেই চাহিদা আরও বাড়বে। সে কারণেও লোডশেডিং বেশি করতে হতে পারে।
পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাস ও জ্বালানি তেল বরাদ্দের যে হিসাব পাওয়া যায়, তাতে এ বছর বিদ্যুতের উৎপাদন বর্তমানের তুলনায় বাড়বে না বলে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। পেট্রোবাংলা বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে পরিমাণ গ্যাস দিচ্ছে (গড়ে দৈনিক ৮০ কোটি ঘনফুট), তার চেয়ে আর বাড়ানো সম্ভব হবে না বলে সংস্থাটির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়া পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) আগামী জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য তেল আমদানির যে পরিমাণ নির্ধারণ করেছে, তাতে বর্তমানের তুলনায় বেশি জ্বালানি তেল বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে না।
পিডিবির হিসাবেই দেশে এখন প্রতিদিন বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা সাড়ে সাত হাজার মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ উৎপাদন পাঁচ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। নতুন স্থাপিত তেলচালিত ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর কোনো কোনোটি গড়ে প্রতিদিন চার ঘণ্টা চালানো হচ্ছে। অনেকগুলো একবারেই বন্ধ রাখা হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলো করা হয়েছে দেশের বিদ্যুৎ-ঘাটতি পূরণের আশু পদক্ষেপ হিসেবে।
বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা বেহাল: চাহিদার তুলনায় উৎপাদন-ঘাটতির সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থায় যুক্ত হয়েছে অব্যবস্থাপনা। কোথাও একটানা কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকলেও গ্রাহক এর কারণ জানতে পারেন না। সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে ফোন করলে ভালো ব্যবহার মেলে না। শ্যামলীর রিং রোডের আজিজুর রহমান বলেন, ‘গ্রাহকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও অভিযোগকেন্দ্রে টেলিফোন না ধরার প্রবণতা গত কয়েক বছরে অনেকটাই কমেছিল। এখন আবার তা বাড়ছে।’
সরবরাহব্যবস্থায় সামান্য সমস্যা দেখা দিলেও তার সমাধান কতক্ষণে হবে তা কেউ বলতে পারেন না। মিরপুর থেকে রানী বেগম জানান, তাঁদের এলাকায় (সেকশন-৬, ব্লক-বি) একটি ট্রান্সফরমারে সমস্যা দেখা দেয় গত বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে। ডেসকো সেখানে অন্য একটি ট্রান্সফরমার পুনঃস্থাপন করে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে রাত ১১টা ৫০ মিনিটে। এই সময়ের মধ্যে অনেক গ্রাহক এবং তাঁদের অনুরোধে অনেক সংবাদকর্মীও ডেসকোর একাধিক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার টেলিফোনে ফোন করে সমস্যাটির মাত্রা জানার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কেউ ফোন ধরেননি। রানী বেগম বলেন, ‘অথচ ডেসকো আমাদের মতো গ্রাহকের অর্থে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হয়েছে। ওই কর্মকর্তাদের পরিবার-পরিজন যে আমাদের অর্থে প্রতিপালিত, তা তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন।’
গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ একটানা কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকলেও কোনো গ্রাহক চেষ্টা করেও জানতে পারেন না যে সমস্যাটা কী এবং বিদ্যুৎ কখন আসবে। ঝালকাঠি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একজন গ্রাহক আবদুল কাদের বলেন, ‘আমাদের তো বিদ্যুতের আশায় একটানা কয়েক দিন পর্যন্তও চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করতে হয়।’
পানির পরিস্থিতি: ঢাকা ওয়াসা সূত্র জানায়, একদিকে গ্রীষ্মে পানির চাহিদা ও ব্যবহার বেড়েছে, অপরদিকে লোডশেডিং পানির স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত করছে। জেনারেটর দিয়ে পাম্প চালিয়ে পূর্ণ ক্ষমতায় পানি তোলা যায় না। তা ছাড়া ঢাকার কয়েকটি এলাকায় গত দুই মাসে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এতটা নেমে গেছে যে সেখানকার পাম্পগুলোতে পানি ওঠার পরিমাণ কমে গেছে।
তার পরও দৈনিক ২৩০ কোটি লিটার চাহিদার বিপরীতে বর্তমানে ২১০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে লোডশেডিং না কমলে এবং গ্রীষ্মের বাড়তি চাহিদা একটানা আরও কিছুদিন চললে পানির সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এভারেস্ট চূড়ায় ওয়াসফিয়া

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত-শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট চূড়ায় লাল-সবুজ পতাকা ওড়ালেন বাংলাদেশের আরেক নারী পর্বতারোহী ওয়াসফিয়া নাজরীন।

আজ শনিবার সকাল ছয়টা ৪১ মিনিটে হিমালয়ের দক্ষিণ দিক দিয়ে তিনি এভারেস্ট চূড়ায় আরোহণ করেন। এভারেস্ট জয়ের পরপরই তিনি তাঁর ‘বাংলাদেশ অন সেভেন সামিট’ কর্মসূচির মুখপাত্র করভী রাখসান্দকে স্যাটেলাইট ফোনে এ খবর দেন। রাখসান্দ প্রথম আলো ডটকমকে জানান, ‘ওয়াসফিয়া আমার সঙ্গে ৩০ সেকেন্ড কথা বলেছে এবং এভারেস্ট জয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।’
ওয়াসফিয়ার এভারেস্ট অভিযানের আয়োজক এক্সপিডিশন হিমালয়া ডটকমও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নবীন ত্রিতাল প্রথম আলো ডটকমকে জানান, ওয়াসফিয়া নাজরীন এবং তাঁর সহযোগী তিনজন শেরপা এভারেস্ট চূড়ায় আরোহণ করেছেন। তাঁরা এখন সাউথ কোলের দিকে নেমে আসছেন। আজ রাতে তাঁরা সাউথ কোলে অবস্থান করবেন। আগামী পরশু তাঁরা বেস ক্যাম্পে ফিরে আসবেন। ওয়াসফিয়াসহ সবাই নিরাপদ রয়েছেন বলে তিনি জানান।
ওয়াসফিয়া নাজরীন গত বছর পৃথিবীর সাত মহাদেশের সাতটি চূড়া আরোহণের ‘বাংলাদেশ অন সেভেন সামিট’ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এভারেস্ট জয়ের মধ্য দিয়ে সাতটি পর্বত শৃঙ্গের মধ্যে তিনটি জয় করলেন ওয়াসফিয়া। এর আগে গত বছরের ২ অক্টোবর তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ পর্বত-শৃঙ্গ কিলিমানজারো এবং ১৬ ডিসেম্বর দক্ষিণ আমেরিকার সর্বোচ্চ পর্বত-শৃৃঙ্গ একঙ্কাগুয়া জয় করেন।
১৯ মে বাংলাদেশের প্রথম নারী হিসেবে নিশাত মজুমদার এভারেস্ট জয় করেন। ২০১০ সালে ২৩ মে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে মুসা ইব্রাহীম এভারেস্ট চূড়ায় লাল-সবুজ পতাকা ওড়ান।

উখিয়ায় সন্ত্রাসী হামলায় সেনা কর্মকর্তাসহ আহত ৪

কক্সবাজারের উখিয়ার তুতুরবিল গ্রামে একদল সন্ত্রাসী বসতভিটায় হামলা চালিয়ে বাড়িঘরে লুটপাট করে গৃহবধূ ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাসহ ৪ জনকে গুরুতর আহত করেছে।

আহতদের উখিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ব্যাপারে সাবেক সেনা কর্মকর্তা বাদী হয়ে উখিয়া থানায় একটি এজাহার করেছেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের তুতুরবিল গ্রামের সন্ত্রাসী ছৈয়দুজ্জামান মুন্সি ও আবদুর রহিম সেলিমের নেতৃত্বে একদল বহিরাগত সন্ত্রাসী পূর্বশত্রুতার জের ধরে শুক্রবার সকাল ১০টায় সাবেক সেনা সার্জেন্ট কবির আহমদ বাবুলের বসতভিটায় হামলা চালায়। তারা বাড়িতে ঢুকে মালপত্র লুট করতে থাকে। এ সময় বাধা দিতে গিয়ে সাবেক সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী পিয়ারা পারভীন (৪০), ছেলে মাসুদ পারভেজ সোহাগ ও মোস্তাফা কামালকে আহত করা হয়। তাদের চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এসে সন্ত্রাসীদের কবল থেকে উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল উখিয়া পুলিশ পরিদর্শন করেছে।

উখিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ৫

কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে বাস-মাইক্রোর মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে ৫ যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছে। উখিয়া থানা পুলিশ বাস দুটি আটক করেছে।

গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় কুতুপালং এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, কক্সবাজারগামী মাইক্রোবাসের চালক মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টেকনাফগামী একটি মিনিবাসকে ধাক্কা দেয়। ওই সময় হোয়াইক্যংয়ের রাসেলসহ ৫ যাত্রী গুরুতর আহত হয়। আহতদের উখিয়া ও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

Friday, May 25, 2012

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদনঃ বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ভয়াবহ

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির তীব্র সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বলেছে- নিখোঁজ, নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু, খেয়ালখুশি মতো গ্রেফতার ও আটক রাখার জন্য দায়ী নিরাপত্তা বাহিনী।

তারা মানবাধিকারের বড় সমস্যা। বিচার বিভাগকে অতিমাত্রায় রাজনীতিকরণ করা হয়েছে । এতে সমস্যা বেড়েছে। বিরোধী দলের সদস্যদের ন্যায় বিচার পাওয়ার পথকে সঙ্কুচিত করা হয়েছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমিত করেছে সরকার। এক্ষেত্রে সেলফ সেন্সর চলছেই। নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা সাংবাদিকদের হয়রানি করছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক মানবাধিকার বিষয়ক রিপোর্টে এসব কথা বলা হয়েছে।
ঢাকাস্থ আমেরিকান দূতাবাস জানায়, বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন সময় সকাল সাড়ে ১১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টা) যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দফতরের বাৎসরিক মানবাধিকার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

২০১১ সালের ওপর করা ওই রিপোর্টে বাংলাদেশ চ্যাপ্টারে বলা হয়েছে, সরকার সমাবেশ করার স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে। এছাড়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ সহিংসতা সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকারি পর্যায়ে দুর্নীতি মারাত্মক এক সমস্যা। শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতাও বড় একটি সমস্যা। শ্রমিকদের অধিকার সীমিত করা, শিশু শ্রম, কর্মক্ষেত্রে অনিরাপত্তা রয়েই গেছে। অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ ক্ষমা মারাত্মক এক সমস্যা। নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশির ভাগ সদস্য সাধারণ ক্ষমার অধীনে কাজ করেন। এক্ষেত্রে র‌্যাব’র কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তদন্তে সরকার সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়নি। সরকারি দুর্নীতি ও তার সঙ্গে সম্পৃক্ত সাধারণ ক্ষমা অব্যাহত রয়েছে।

নিখোঁজ হওয়া সম্পর্কে বলা হয়, পুরো বছরে যেসব নিখোঁজ ও অপহরণের ঘটনারঅভিযোগ আছে তা ঘটিয়েছে বেশির ভাগই নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। ২০১১ সাল জুড়ে তা বেড়ে যায়। কিন্তু এর সঠিক সংখ্যা পাওয়া যায়নি। কতগুলো অপহরণ ঘটেছে রাজনৈতিক উদ্দেশে। কিছু অপহরণ ঘটেছে টাকার জন্য। আবার কিছু অপহরণ ঘটেছে স্থানীয় শত্রুতা থেকে। মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা অধিকার-এর মতে, নিরাপত্তা বাহিনী জড়িত এমন অভিযোগ আছে ৩০টি নিখোঁজের ঘটনায়। ২০১০ সালে এই সংখ্যা ছিল ৯। র‌্যাব বলছে, যেসব নিখোঁজের ঘটনায় তাদেরকে দায়ী করা হচ্ছে, সেসব ঘটনা র‌্যাব বা পুলিশ সেজে অন্যরা ঘটিয়েছে। অধিকার উদাহরণ দিয়ে বলেছে, ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি র‌্যাব ঢাকা শহরের উত্তর শাহজাহানপুর থেকে একজন ইমাম ও বিক্রয়কর্মী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে আটক করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন এবং রফিকুলের জামাই পুলিশে গিয়ে অভিযোগ করেছেন যে- র‌্যাব অফিসাররা আটক করেছে রফিকুলকে। তাকে জোর করে একটি কাভার্ড ভ্যানে তুলে নিয়েছে। এ সময় র‌্যাব সদস্যদের কেউ কেউ ছিলেন সাধারণ পোশাকে। কিন্তু র‌্যাব এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বছর শেষে রফিকুল কোথায় তা অজ্ঞাতই রয়ে যায়। ওদিকে ২০১০ সালের জুনে র‌্যাব সদস্যরা ঢাকা সিটি কমিশনার চৌধুরী আলমকে আটক করে বলে অভিযোগ আছে। কিন্তু ২০১১ সাল শেষ হয়ে গেলেও জানা যায়নি চৌধুরী আলম কোথায় আছেন।

বিচার বিভাগ সম্পর্কে ওই রিপোর্টে অতিমাত্রায় দলীয়করণের কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, আইনে আছে বিচারবিভাগ স্বাধীন। কিন্তু সংবিধানের দীর্ঘদিনের একটি অস্থায়ী বিধানের কারণে নির্বাহীরা নিম্ন আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত। তারা বিচার বিভাগের নিয়োগ দেন। আইনের মাধ্যমে ২০০৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারবিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করা হয়েছে। বছরজুড়েই তা অব্যাহত ছিল। বিচারবিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করা সত্ত্বেও উচ্চ আদালতে নিয়োগ দিয়েছে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব। অভিযোগ আছে, রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর অনেক মামলায় তারা বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেন। এতে সমস্যা বেড়েছে। বিরোধী দলের সদস্যদের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ সঙ্কুচিত করা হয়েছে।

রাজনৈতিক অধিকারের প্রতি সম্মান: মানবাধিকার রিপোর্টে ২০১১ সালের বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিশদ বর্ণনা রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সংবিধানে জনগণের ভোটে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তনে অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। গত বছর ৩০ জুন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার সংবিধানে একটি সংশোধনী আনে। ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে বর্তমান সরকারের অধীনেই ২০১৩ সালের নির্বাচন হওয়ার কথা। ওই সংশোধনীতে স্বাধীন ইলেকশন কমিশন প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এর বিরোধিতা করছে। তারা বলছে, বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা এখনও ভঙ্গুর। যেকোনো রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করার আশঙ্কা রয়েছে। গত বছরজুড়ে সরকার ও বিরোধী দলের মুখোমুখি অবস্থানে আগামী নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে তা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের শীর্ষ বিতর্কিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে বলে রিপোর্টে উলেস্নখ করা হয়েছে।

বিরোধী দলের জাতীয় সংসদ বর্জনের বিষয়ে রিপোর্টে বলা হয়, বিরোধীরা স্পিকার নিরপেক্ষ নয় বলে বারবার অভিযোগ করছে। তারা সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলোর কার্যক্রমে বিভিন্নভাবে অংশ নিলেও সংসদ অধিবেশন নিয়মিত হচ্ছেন না।

সরকারের দুর্নীতি প্রসঙ্গ: সরকারি কার্যক্রমের অনিয়ম-দুর্নীতি বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মানবাধিকার রিপোর্টে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী আইন ও বিধিবিধান থাকলেও সরকার তার যথাযথ প্রয়োগ করে না। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকেই দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এখানে দুর্নীতি করলেও শাস্তি হয় না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) ‘দন্তহীন বাঘ’ আখ্যা দিয়েছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার আগে শাসক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যেসব মামলা হয়েছিল কোনো আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে নির্বাহী আদেশের বলে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। অথচ খালেদা জিয়া কিংবা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা খুব কম মামলাই প্রত্যাহার করা হয়েছে।

চকরিয়া-পেকুয়া মহাসড়কে গণডাকাতি, ব্যবসায়ী নিহত

কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়া সড়কে গণ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ওই সময় ডাকাতের ছুরিকাঘাতে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয় হন আরো ১০ যাত্রী।

পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের বহদ্দার হাট থেকে এস আলম পরিবহণের একটি বাস পেকুয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। রাত ১০টার দিকে বাসটি চকরিয়া-পেকুয়া সড়কের মচইন্যাকাটা এলাকায় পৌঁছলে ডাকাতরা ড্রাইভারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গাড়ি থামাতে বলে। একপর্যায়ে গণডাকাতি শুরু হয়।

ডাকাতরা যাত্রীদের মোবাইল ফোন, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ যাবতীয় জিনিসপত্র লুট করে নেয়। ওই সময় প্রতিবাদ করলে পেকুয়া বাজারের সবুজ দাশ নামে এক ব্যবসায়ী ডাকাতের ছুরিকাঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এসময় গাড়ির হেলপার, চালকসহ ১০ যাত্রী ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়। আহতদের চকরিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ, নির্জন ও পাহাড়ি এলাকায় হওয়ায় ডাকাতরা ওই স্থানটি ডাকাতির জন্য বেছে নেয়। আর চকরিয়া-পেকুয়ার সীমান্ত এলাকা হওয়ায় দুই থানার টানাটানিতে পুলিশ টহলও কমে গেছে।

উখিয়ায় অভাবের তাড়ণায় কিশোরীর আত্মহত্যা

কক্সবাজারের উখিয়ায় অভাবের তাড়নায় কহিনুর আক্তার (১৪) বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। সে থাইংখালী গৌজ গোনা গ্রামের দিন মজুর বাবুল মিয়ার কন্যা।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দিন মজুর বাবুলের দুই ছেলে দুই মেয়েসহ ছয় সদস্যের সংসারে চরম অভাব অনটন ছিল। গত কয়েকদিন ধরে নিহত কহিনুর আক্তার পেটের ব্যাথা সহ নানা রোগে বিনা চিকিৎসায় ঘরে গড়াগড়ি খায়। একদিকে ঘরে অভাব অন্যদিকে বিনা চিকিৎসার যন্ত্রণা সইতে না পেরে মঙ্গলবার সকালে পানের বরজের জন্য আনা কীঠনাশক পান করে। পরিবারের সদস্যরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করালে বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় তার মৃত্যু হয়।

উল্লেখ্য বুধবার বিকাল তিনটায় পূর্ব হলদিয়া গ্রামের দরিদ্র বৃদ্ধা হাবিবুর রহমানও (৭৪) চিকিৎসার টাকা যোগার করতে না পেরে বাড়িতে থাকা কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করেন।

কঠোর সাধনার পর মন্দিরে প্রত্যাবর্তন করছেন শীলানন্দ স্থবির

বাংলাদেশী বৌদ্ধদের অন্যতম ধর্মীয় গুরু ও ধুতাঙ্গ সাধক আর্য্যশ্রাবক শ্রীমৎ শীলানন্দ স্থবির (ধুতাঙ্গভান্তে) গহীন জঙ্গলে খোলা আকাশের নীচে প্রায় সাড়ে ৩ বৎসর যাবৎ কঠোর ধ্যান সাধনা শেষ করে মন্দিরে প্রত্যাবর্তন করছেন।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, তিনি আগামী ৬ জুন পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার উল্টাছড়ির মাইচছড়িতে নির্মিত আর্য্যপুরষ শীলানন্দ ধমোদয় বিহারে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রত্যাবর্তন করবেন। তাঁর এই মহাপ্রত্যাবর্তনের খবর ছড়িয়ে পড়লে লাখো ভক্তের মাঝে আনন্দের জোয়ার বইছে। প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত তাঁকে দেখতে এবং আশীর্বাদ নিতে ভিড় জমাচ্ছেন। উল্লেখ্য, তিনি ২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী হতে এখনো পর্যন্ত কঠোর সাধনায় ব্রত আছেন। তিনি আগামী ২০১২ সালের ৬ জুন কুঠিরে কঠোর সাধনা শেষ করে মন্দিরে প্রবেশ করবেন। এক সময় গহীন জঙ্গলের একটি কুঠিরে তাঁকে নিবিষ্ট ধ্যানে মগ্ন দেখে সবাই বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। সেই সময় থেকে ‘ধুতাঙ্গ ভান্তে’’ নামে পরিচিতি লাভ করেন তিনি। তিনি যখন ধ্যান মগ্ন থাকতেন, কখনও আহার, পানি কিছুই খেতেন না, এমনকি টয়লেটেও যেতেন না এবং ঘুমাতেন না। কোন আধ্যাত্মিক শক্তি না থাকলে তা কখনো সম্ভব নয়। তিনি এখন ‘‘ধুতাঙ্গ ভান্তে’’ নামে পরিচিত। উল্লেখ্য, তিনি রাঙ্গুনিয়ার সোনাইছড়ি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ৪ ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। তাঁর মায়ের নাম নিলুপ্রভা বডুয়া ও বাবার নাম মৃত হেমরঞ্জন বডুয়া। ছোট বেলায় শ্রামন হয়েছিলেন। তাঁর গৃহী নাম ছিল- বিকাশ বডুয়া। ধুতাঙ্গ ভান্তের ভক্ত খাগড়াছড়ির সুব্রত বডুয়া ও বিন্দু বড়–য়া এ প্রতিবেদককে জানান, পরমপূজ্য ভান্তে দীর্ঘদিন ধরে একটি কুঠিরে কঠোর ধ্যান সাধনায় নিবিষ্ট ছিলেন। ধুতাঙ্গ ভান্তে ৬ জুন মন্দিরে প্রত্যাবর্তন করবেন, এই জন্য পুরো খাগড়াছড়ির বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

কক্সবাজার-দোহাজারী রেললাইন সম্প্রসারণে বাজেট বরাদ্দের দাবীতে মানববন্ধন

২৪ মে ২০১২ তারিখ সকাল ১০ টায় কক্সবাজার শহরের দশটি সংগঠন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে কক্সবাজার-দোহাজারী রেল লাইন সম্প্রসারণের জন্য বাজেট বরাদ্দের দাবিতে এক মাবনববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করে।

বাপা কক্সবাজার, কোস্ট ট্রাস্ট, গ্রীন কক্সবাজার, শব্দায়ন আবৃত্তি একাডেমী, পাল্স বাংলাদেশ, এক্সপাউরুল সহায় ফাউন্ডেশন, এপেক্স ক্লাব, ডিসিআরডিস, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি প্রভৃতি দশটি সংগঠনের উদ্যোগে কক্সবাজার-দোহাজারী রেললাইন সম্প্রসারণের জন্য আসন্ন বাজেটে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের দাবিতে এই মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত বছর ৩ রা এপ্রিল ২০১১ তারিখ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার জেলা সদরের ঝিলংজা কৃষি অফিস সংলগ্ন এলাকায় প্রধান সড়কের পাশে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এবং একই দিনে বিকাল ৪টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার শহরের বিমান বন্দর সংলগ্ন জেলে-পার্ক ময়দানে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে কক্সবাজার রেললাইন সম্প্রসারণের উপর গুরুত্ব দিয়ে বক্তব্য রাখেন। মানব বন্ধনে বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারের সেই জনসভায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে চট্রগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার রেল পথ সম্প্রসারণ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও সরকারের পক্ষ থেকে গত অর্থ বছরে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন সম্প্রসারণের জন্য কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায় নি এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন স্থাপনের জন্য বাজেটে অর্থ বরাদ্ধ হয় নি।

বক্তারা বলেন, নতুন রেল মন্ত্রী রেল পরিবহনকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। বক্তারা বলেন, সংবাদ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে সরকার রেল যোগাযোগ উন্নয়নের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবেন বলে ঘোষণা দিচ্ছেন এবং আমরা আশা করছি এ অর্থ বছরে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন সম্প্রসারণের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ করা হবে। এতে সারাদেশের লক্ষ লক্ষ পর্যটক ও কক্সবাজারবাসীর সরাসরি ঢাকা-কক্সবাজার যাতায়াতের রেলপথ তৈরির কাজ ত্বরান্বিত ও সুগম হবে।

মানব বন্ধনে বক্তারা বলেন, সারাদেশের লক্ষ লক্ষ পর্যটক, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন পেশাজীবী ও কক্সবাজারবাসীর পক্ষ থেকে আমরা দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন সম্প্রসারণ কার্যক্রমটি বর্তমান সরকারের রেল উন্নয়ন ভাবনা ও পরিকল্পনায় দেখতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক গত বছর ভিত্তিপ্রস্তরকৃত ও প্রতিশ্রুত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন সম্প্রসারণ কার্যক্রমটি রেলমন্ত্রীর রেল উন্নয়ন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্র“তি বাস্তবায়নের জন্য বাজেট বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি।

মানব বন্ধন ও সমাবেশে বক্তৃতা করেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কক্সবাজার শাখার আহবায়ক মোহাম্মদ ইদ্রিস, কোস্ট ট্রাস্ট-এর কক্সবাজার অঞ্চলের টিম লিডার মকবুল আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ শাহজাহান, বিশিষ্ট ব্যাংকার এম নাজের সিদ্দিকী, শব্দায়ন আবৃত্তি একাডেমীর সভাপতি জসিমউদ্দিন বকুল, পাল্স বাংলাদেশ-এর নির্বাহী প্রধান সাইফুল ইসলাম চৌধুরী কলিম, জাসদের যুব নেতা মিজানুর রহমান বাহাদুর, ডিসিএরডিসি-র নির্বাহী প্রধান নুরুল আমিন সিকদার, সিটি প্রেস ক্লাবের সাংবাদিক আজাদ

মানব বন্ধন ও সমাবেশ শেষে দশ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কক্সবাজারের জন্য রেল বাজেট বরাদ্দের দাবি জানিয়ে রেল মন্ত্রীর বরাবরে দেয়া একটি স্মারকলিপি কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের হাতে হস্তান্তর করেন।

দ্রোহ ও প্রেমের কবি নজরুলের জন্মবার্ষিকী আজ

‘মহাবিদ্রোহী রণক্লান্ত/আমি সেই দিন হব শান্ত,/ যবে উত্পীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না-/অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না’ বলেছিলেন সাম্য, দ্রোহ ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ তাঁর ১১৩তম জন্মজয়ন্তী। এ বছর তাঁর কালজয়ী কবিতা ‘বিদ্রোহী’র প্রকাশনার ৯০ বছর পূর্তি হচ্ছে। এ বিষয়টি জন্মজয়ন্তীতে যোগ করেছে বিশেষ মাত্রা।
বরাবরের মতোই সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি উদ্যাপিত হবে। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় জাতি স্মরণ করবে জাতীয় কবিকে।
কাজী নজরুল বাংলা ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ (১৮৯৯ সালের ২৪ মে) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যেমন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শোষণের শৃঙ্খল ভাঙার আহ্বান জানিয়ে কবিতা ও গান লিখেছেন, তেমনি লিখেছেন প্রেম-সাম্যের গান ও কবিতা। তাঁর কবিতা ও গান আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামেও অনুপ্রেরণা জুুগিয়েছে। তাঁর লেখা ‘চল চল চল’ বাংলাদেশের রণসংগীত। গান ও কবিতার মতো তাঁর রচিত গল্প, নাটক, উপন্যাসও বাঙালির অনন্ত প্রেরণার উৎস হয়ে আছে।
বাংলায় সর্বোচ্চসংখ্যক তিন সহস্রাধিক গানের স্রষ্টা কাজী নজরুল ইসলাম। নিজস্ব ধারার সংগীত রচনা করেছেন তিনি। প্রকৃত অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্ভাসিত কবি মানুষের সংকীর্ণতা, দীনতা, মূঢ়তা, নিচতাকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করেছেন।
‘দুখু মিয়া’ বাংলার দামাল ছেলের প্রতীক। তিনি বিদ্রোহী, তিনি সংগ্রামী, তিনি প্রেমিক, তিনিই শান্তির বর্তাবাহক। কবি নজরুল তাঁর প্রত্যয়ী ও বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে এ দেশের মানুষকে মুক্তিসংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছেন, জাগ্রত করেছেন জাতীয়তাবোধ। কবির কলম শাসকের অস্ত্রের চেয়ে বেশি শক্তিমান ছিল।
স্বাধীনতার পর সৃষ্টিশীল এই মহান কবির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর প্রতি সম্মান জানাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবি ও তাঁর পরিবারকে কলকাতা থেকে ঢাকায় এনে স্থায়ীভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করেন। তাঁকে এ দেশের জাতীয় কবির মর্যাদায় ভূষিত করা হয়। বাংলা ১৩৮৩ সালের ১২ই ভাদ্র কবি মৃত্যুবরণ করেন। ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই’ তাঁর গানের কথা স্মরণে রেখে তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়। আজ তাঁর সেই অন্তিম শয্যা ছেয়ে যাবে অগণিত অনুরাগীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ফুলে ফুলে।
কাজী নজরুল ইসলামের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান তাঁর বাণীতে বলেন, ‘সাম্য ও মানবতার কবি নজরুল বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাসে একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন ও সৃজনশীল কর্ম আমাদের অন্তহীন অনুপ্রেরণার উৎস। কবির ক্ষুরধার অগ্নিঝরা লেখনী শোষিত-নির্যাতিত ও বঞ্চিত ব্যক্তিদের অধিকার আদায়ে আমাদের সোচ্চার করে, শিক্ষা দেয় অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যে কবি কাজী নজরুল ইসলাম এক অবিস্মরণীয় নাম। কালজয়ী প্রতিভার অধিকারী নজরুল ছিলেন সাম্য, মানবতা, তারুণ্য ও দ্রোহের কবি। তিনি ছিলেন বাংলা গানের বুলবুল।’
বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া বলেন, ‘জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের অবিসংবাদিত প্রাণপুরুষ। লেখনীর মাধ্যমে তিনি জুলুম-অত্যাচার-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।’

জন্মজয়ন্তী উদ্যাপনে বিভিন্ন কর্মসূচি
নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষে আজ সকাল সাড়ে ছয়টায় কবির মাজারে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ আয়োজনের পাশাপাশি রাজধানীতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন নজরুলজয়ন্তী পালন করবে।
বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানমালা আজ সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আইন ও বিচার এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়বিষয়ক মন্ত্রী সালমান খুরশিদ। তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে এতে নজরুলবিষয়ক স্মারক বক্তৃতা দেবেন নজরুল গবেষক ও অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
বিকেলে দুই দিনের নজরুলজয়ন্তীর অনুষ্ঠান শুরু হবে শিল্পকলা একাডেমীতে। এতে রয়েছে গান, নৃত্য, কবিতা আবৃত্তি ও নাটক মঞ্চায়ন। এ ছাড়া দুই দিনই শিল্পকলা একাডেমী লবিতে নজরুল ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে নজরুলসংক্রান্ত পুস্তক প্রদর্শনীর আয়োজন রাখা হয়েছে।
নজরুলজয়ন্তীতে দুই দিনব্যাপী বর্ণিল অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে ছায়ানট। নৃত্য-গীত, কবিতাপাঠ ও বক্তৃতা দিয়ে সাজানো হয়েছে এসব অনুষ্ঠান।
প্রতিবছরের মতো এবারও চ্যানেল আই নিজম্ব প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নজরুল মেলা। মেলার খোলা মঞ্চ থেকে পরিবেশিত হবে নবীন-প্রবীণ শিল্পীদের পরিবেশনায় নজরুলসংগীত, নৃত্যনাট্য, শিশুনৃত্য ইত্যাদি। থাকবে নজরুলের কবিতা থেকে চিত্রশিল্পীদের চিত্রাঙ্কন।
তিন দিনব্যাপী নজরুলজয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে নজরুল একাডেমী। আজ এর শেষ দিন। আজ বিকেলে মগবাজারে একাডেমী প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিতব্য অনুষ্ঠানের মধ্যে থাকবে একাডেমীর শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নমূলক অনুষ্ঠান ও উন্মুক্ত নজরুল মঞ্চ। এতে অভ্যাগত ব্যক্তিরা নজরুলবিষয়ক পাঠ কিংবা পরিবেশনা উপস্থাপন করবেন। প্রায় শতবর্ষ আগের কবি নজরুলের সঞ্চৃতি নিয়ে এ বছর ত্রিশালের চারটি স্থানে পালিত হবে নজরুলজয়ন্তী উৎসব। ইতিমধ্যে অনুষ্ঠান শুরুর এক দিন আগেই জমে উঠেছে নজরুল মেলা। এ বছর কবির সঞ্চৃতিবিজরিত দরিরামপুর নজরুল মঞ্চে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগের ছড়াছড়ি

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হাটবাজারগুলোতে প্রকাশ্যে পরিবেশদূষণকারী নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ বিক্রি ও ব্যবহার করা হচ্ছে। একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী মিয়ানমার থেকে এসব পলিথিন ব্যাগ এনে মজুদ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০০২ সালের ৮ এপ্রিল পরিবেশ অধিদপ্তর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুদ ও বিতরণ নিষিদ্ধ করে।
উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ বাজার, নয়াপাড়া বাজার, সাবরাং বাজার, পুরাতন বাসস্টেশন বাজার, হ্নীলা বাজার, হোয়াইক্যং বাজার, সেন্ট মার্টিন বাজারসহ সব কটি বাজারেই নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ প্রকাশ্যে বিক্রি ও ব্যবহার করা হচ্ছে। উপজেলার অন্তত ২৩টি সীমান্ত এলাকা দিয়ে এসব পলিথিন ব্যাগ পাচার হয়ে দেশে আসছে বলে জানা গেছে।
বাসস্টেশন বাজারের ব্যবসায়ী সৈয়দ আলম জানান, বাজারে চটের ব্যাগ পাওয়া গেলেও সেগুলোর দাম বেশি থাকায় পলিথিন ব্যাগের চাহিদা বেড়ে গেছে। মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন টেকনাফের বাজারে পলিথিন ব্যাগ আসছে। অধিকাংশ সময় পলিথিন ছাড়া ক্রেতারা মাল কিনতে চান না। এ কারণে তাঁরা পলিথিন রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিয়মিত অভিযান না চালানোয় পলিথিনের ব্যবহার বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন।
এ প্রসঙ্গে ৪২ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. জাহিদ হাসান প্রথম আলোকে জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে পাচারকালে দুই লাখ ১৩ হাজার ৭৮৯টি পলিথিন ব্যাগ জব্দ করা হয়েছে।
টেকনাফ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাইদ আল শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধ করতে উপজেলার হাটবাজারে আবারও অভিযান চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ ন ম নাজিম উদ্দিন প্রথম আলোকে জানান, টেকনাফের কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মিয়ানমারের পলিথিন ব্যাগ এনে মজুদ করছেন। তাঁদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

টেকনাফের বাহারছড়ায় নির্মাণাধীন পর্যটন রিসোর্ট ভাঙচুর

টেকনাফের বাহার ছড়ায় নির্মাণাধীন পর্যটন রিসোর্টের ওয়াল ভাঙচুর করেছে সন্ত্রাসীরা। ২২ মে রাতে টেকনাফ উপজেলার সমুদ্র উপকূলবর্তী ইউনিয়ন

বাহারছড়ার বড় ডেইল-নোয়াখালী পাড়ায় শতাধিক সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী অভিযান চালিয়ে একটি নির্মাণাধীন ফাইভ স্টার হোটেলের বাউন্ডারী ওয়াল গুড়িয়ে দিয়েছে।
শুধু তাই নয়  দেয়াল ভাঙচুরের আগে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তিন কর্মচারীকে অপহরণ করে। পরে রাত একটায় স্থান ছাড়ার শর্তে ছেড়ে দেয়া হয়।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০০৯ সালে বাহারছড়ার বড় ডেইল মৌজায় পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগ করতে ১৪ কানি নিষ্কণ্টক জায়গা কিনে নেয় চট্টগ্রামের বেলাল আহমদ গং। পরে এর আমমোক্তার দেখা শোনার দায়িত্ব নেন উখিয়া-টেকনাফের  খোরশেদ আলম রাজা।
ধনাঢ্য খোরশেদ রাজাকে বিপাকে ফেলতে স্থানীয় দুই-তিনটি চাঁদাবাজ চক্র উখিয়া-টেকনাফের এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার ইন্ধনে খোরশেদ রাজাকে জিম্মি করে তিন দফায় লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে। এছাড়া ৪৮ শতক জায়গাও ছেড়ে দেন।

তবুও মন গলেনি দুর্বত্তদের। অধিক চাঁদার দাবিতে চক্রটি জনৈক দিদারকে সামনে এনে ভুয়া দলিলের দোহাই দিয়ে ২২ মে রাতের আঁধারে শতাধিক চিহ্নিত সন্ত্রাসী জড়ো করে পুরো সীমানা ওয়াল ও কর্মচারী শেডে ভাঙচুর চালায়।

এর আগে সন্ত্রাসীরা তিন কর্মচারী আবদুল্লাহ, শাহ আলম ও আবু তাহেরকে অপহরণ করে। পরে অপহৃত তিন কর্মচারীকে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার চুক্তিতে ছেড়ে দেয়।

স্থানীয় সাবেক মেম্বার ফজলুল করিম জানান, আগে প্রশস্ত আট ফুট রাস্তা থাকলেও খোরশেদ রাজা নিজে জায়গা ছেড়ে ১৮ ফুটে রূপান্তর করেছে। এ অন্যায় মেনে নেয়া যায় না। আরেক সাবেক মেম্বার কবির আহমদ জানান, সন্ত্রাসীরা এভাবে চাঁদাবাজি ও ভাঙচুর চালালে বাইরের বিনিয়োগকারীরা এলাকা ছেড়ে পালাবে।

Thursday, May 24, 2012

কক্সবাজারে সংঘর্ষে ছাত্র-পুলিশসহ আহত ৫০, সড়ক অবরোধ

কক্সবাজার পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সড়ক অবরোধ করে। সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে। তারা অন্তত ৭টি গাড়ি ভাঙচুর করে।

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লিংক রোড এলাকায় শিক্ষার্থীরা এ অবরোধ করে। এ সময় সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। দুপুর ১২টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলেও উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ এ পর্যন্ত ৫ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে।
সূত্র বাংলানিউজকে জানিয়েছে, কক্সবাজার পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ার কোর্সের নাম ডিপ্লোমা ইন টেকনিশিয়ান করে পদ মর্যাদা হ্রাসের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় কক্সবাজার পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা মিছিল সহকারে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নেয়।

তারা মূর্হুতের মধ্যে সড়কের মাঝখানে টায়ারে আগুন দিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে। এ সময় উভয় পাশে যানবাহন আটকা পড়ে যায়। শিক্ষার্থীরা দুটি ট্রাক ও ৫টি চেয়ার কোচ ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ সময় কক্সবাজার সরকারি কলেজের পাশ থেকে একদল শিবির কর্মী পুলিশের ওপর চড়াও হয়। এতে উভয়পক্ষে ব্যাপক সংঘর্ষ
বাঁধে।

কয়েকজন শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে জানিয়েছে, পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ার কোর্সের নাম ডিপ্লোমা ইন টেকনিশিয়ান করে পদ মর্যাদা কমানো হয়েছে। এতে শিক্ষার মান দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণি নেমে গেছে।

এর প্রতিবাদে তারা লিংক রোড এলাকায় মানববন্ধন করলে পুলিশ-র‌্যাব সদস্যরা তাদের লাঠিচার্জ করে। এতে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে ২ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধসহ  ৩০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি) কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেছেন, সকাল ১০ টায় সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ছাত্ররা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাবুল আজাদসহ ২০ জন পথচারী আহত হয়েছে। দুপুর ১২ টায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে এবং এ ঘটনায় জড়িত ৫ জনকে আটক করেছে।

কক্সবাজার পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট-এর অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ খোরশেদ আলম বাংলানিউজকে বলেছেন, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ার কোর্সের নাম ডিপ্লোমা ইন টেকনিশিয়ান করে পদ মর্যাদা কমানোর বিষয়ে কোন নির্দেশনা তারা পাননি।

বিষয়টি পত্রিকার সূত্রে শিক্ষার্থীরা জেনে এ আন্দোলন শুরু করে। শিক্ষার্থীদের সরকারের নিদের্শনা না পাওয়ার আগে আন্দোলন করতে নিষেধ করা হয়েছিল।

কক্সবাজারে পর্যটকের আকাল

তাপদাহ চলছে বাংলাদেশ জুড়ে। মাঝে-মধ্যে দু’-এক ফোটা বৃষ্টি হলেও খরতাপ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ। একই সঙ্গে চলছে বিদ্যুতের তীব্র লোডশেডিং।
তাপদাহ আর লোডশেডিংয়ের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারেও। কক্সবাজারে পর্যটকের দেখা মিলছে না তেমন।
স্থানীয়রা বলছেন, কক্সবাজারে পর্যটকের আকাল চলছে। আবাসিক হোটেল মালিক থেকে শুরু করে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। অবশ্য প্রতিবছরই এসময়টায় পর্যটকের আকাল চলে। কারণ, সমুদ্রের লোনা বাতাসে তাপদাহের হলকাটা বেশি থাকে। ফলে পর্যটকরা এসময়টায় এখানে এসে স্বস্তি পান না।

তবে কিছুটা হলেও এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠা যেত- যদি লোডশেডিং না থাকতো। পর্যটকরা সমুদ্রে গোসল বা সমুদ্র তীরে শুয়ে বসে সময় কাটান। এরপর রুমে ফিরে আহার করেন বা বিশ্রাম নেন। সেসময় যদি পাখা না চলে, তাহলে গরমের হাত থেকে কীভাবে রেহাই পাবেন।

তাই ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, তাপদাহ ও লোডশেডিংয়ের কারণে পর্যটন ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতাও পর্যটনের কিছুটা হলেও ক্ষতি করেছে। যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল না করলে পর্যটকরা এখানে কীভাবে আসবেন। কীভাবেই বা তারা নিজ গন্তব্যে ফিরে যাবেন।

এসব কারণে এখানে পর্যটকের দেখা মিলছে না। পর্যটক না আসায় বিলাসবহুল চেয়ারকোচ থেকে সাধারণ যাত্রীবাহী বাস--সবারই একই অবস্থা বিরাজ করছে। 

এছাড়া কক্সবাজারে এখন যে তাপমাত্রা তা পর্যটকদের জন্য অসহনীয়। একারণে কেউ আর কক্সবাজারমুখি হতে চাইছেন না। তবে লোডশেডিং না থাকলে পর্যটকদের ভিড় দেখা যেত। সবাই চান অবসর সময় বসে থাকলেও যাতে গরমের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস বাংলানিউজকে জানিয়েছে, কক্সবাজারে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার তাপদাহের তীব্রতা বেড়েছে। গত ১৯ মে থেকে তাপদাহ শুরু হয়েছে। এখন গড়ে সর্বোচ্চ ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে সর্বনিম্ন ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্র চলছে।

আর এ তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিংও বেড়েছে। কক্সবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, তাপদাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের ঘাটতিও বেড়েছে। চাহিদার পরিমাণ আরও এক মেগাওয়াট বাড়লেও জাতীয় গ্রিড থেকে এক ইউনিট বিদ্যুৎও বেশি পাওয়া যায়নি। তাই বিদ্যুৎ সংকট আরো ঘনিভূত হয়েছে।

পিক আওয়ারে জেলাব্যাপী ৩৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকে। ৫৯ মেগাওয়াট চাহিদার মধ্যে সর্বোচ্চ পাওয়া যায় ২২ মেগাওয়াট ও সর্বনিম্ন অফপিক আওয়ারে মাত্র ১৫ মেগাওয়াট। এরমধ্যে পল্লী বিদ্যুৎকে পিক আওয়ারে ১০ মেগাওয়াট ও অফপিক আওয়ারে ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

কক্সবাজারের বিশিষ্ট হোটেল ব্যবসায়ী ডায়মন্ড প্যালেস গেস্ট হাউসের মালিক ও হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বাংলানিউজকে জানান, অন্যান্য বছর কক্সবাজারে পর্যটক আগমনের ক্ষেত্রে সিজন বা অফ সিজন বলে তেমন কোনো ফারাক ছিল না। স্বাভাবিকভাবে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পর্যটকের আগমন বেশি হলেও পুরো বছর জুড়েই পর্যটক থাকতো কমবেশি।

২০১১ সালের মে মাসের পরিসংখ্যান মতে এখন ৮৫ শতাংশ পর্যটক কম আসছেন। এর পেছনে চারটি কারণ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আবুল কাসেম সিকদার জানান, তাপদাহ ও লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি অপর ২টি কারণও পর্যটক বিমুখ হওয়ার অন্যতম কারণ। দেশে এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। কখনও হরতাল, কখনও অবরোধ নিয়ে মানুষ স্বস্তিতে নেই। একই সঙ্গে কক্সবাজার শহরের ভেতর যাত্রীবাহী চেয়ারকোচ প্রবেশ করতে না দেওয়ায় পর্যটকদের ব্যয় ও ভোগান্তি বেড়েছে।

তিনি জানান, বাস টার্মিনালে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়। এসময় বাস টার্মিনাল কেন্দ্রিক একটি সংঘবদ্ধ দালাল চক্রের লোকজন যাত্রীদের নিয়ে টানাটানি শুরু করে। পর্যটকদের প্রলোভন দেখিয়ে নানাভাবে হয়রানি করছে তারা। যানবাহন কেন্দ্রিক ভোগান্তির কারণেও পর্যটকরা কক্সবাজার আসতে অনিচ্ছা প্রকাশ করছেন।

হোটেল মালিক সমিতির নেতা আবুল কাসেম সিকদার বাংলানিউজকে জানান, পর্যটকের খরা চলার কারণে এখন দেড় হাজার টাকার একটি কক্ষ ৩০০ টাকায় প্রতিরাত হিসেবে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে।

কক্সবাজারের আবাসিক হোটেল সী কুইনের জিএম স্বপন ভট্টাচার্য্য বাংলানিউজকে জানান, তাপদাহ ও লোডশেডিংয়ের কারণে পর্যটক এখন নেই বললেই চলে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এখন পর্যটক ৯০ শতাংশ কম। ১০ শতাংশ পর্যটক কক্সবাজার এলেও তারা স্বস্তি পাচ্ছে না। তিনি জানান, এখন কক্সবাজারের আবাসিক হোটেলের কক্ষ ভাড়াও ৫০ শতাংশ কম।

অপর একটি আবাসিক হোটেলের ম্যানেজার করিম উল্লাহ বাংলানিউজকে জানান, কক্সবাজারে পর্যটকের আগমন শূন্যের কোঠায় নেমেছে বললেই চলে। এ পরিস্থিতির কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা দুর্দিনে আছেন।

কক্সবাজারে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ রাখাইন তরুণীদের ব্যবস্থাপনায় শহরের টেকপাড়ার বার্মিজ মার্কেট। বার্মিজ মাকের্টের ব্যবসায়ী রাখাইন তরুণী মিন মং বাংলানিউজকে জানান, বার্মিজ মাকের্টের ব্যবসা হলো পর্যটককেন্দ্রিক। পর্যটক না আসায় তাদের ব্যবসায় মন্দা চলছে।

পর্যটক না আসার কারণে বিলাস বহুল চেয়ারকোচ থেকে সাধারণ যাত্রীবাহী বাস সমূহের কক্সবাজারে যাতায়াত কমেছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন শ্যামলী পরিবহনের ইনচার্জ খোরশেদ আলম শামীম। তিনি জানান, অন্য সময় প্রতিদিন এখানে ৫টি করে বাস আসতো। এখন তা নেমেছে ২টিতে।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোন এলাকার রোদেলা রেস্তোরাঁর মালিক আবদুল কাদের বাংলানিউজকে জানান, পর্যটক না আসার কারণে তাদের খাবার বেচা-বিক্রি একেবারেই কম।

কক্সবাজারে প্রতিদিন ১২টি দৈনিক পত্রিকা বের হয়। কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত দৈনিক ইনানীর নির্বাহী সম্পাদক সাঈদ মু. আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, পর্যটক না আসায় পত্রিকা ব্যবসায়ও ধ্বস নেমেছে। পর্যটক আগমন বাড়লে ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিষ্ঠানের আকর্ষণ বাড়াতে ও পণ্যের বিক্রি বাড়াতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন। একই সঙ্গে পর্যটকরা কক্সবাজারে এসে জাতীয় পত্রিকার সঙ্গে স্থানীয় পত্রিকাও পড়েন।

Wednesday, May 23, 2012

খুলে দেওয়া হল বিশ্বের সর্বোচ্চ টাওয়ার ‘টোকিও স্কাই ট্রি’

বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু টাওয়ার ‘টোকিও স্কাই ট্রি’ দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। জাপানের এই যুগান্তকারী স্থাপনার উদ্বোধনের প্রথম দিনেই প্রায় ৮ হাজার দর্শনার্থী সমাগমের প্রত্যাশা করা হলেও তাতে বাগড়া দিয়েছে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ।

ইতিমধ্যেই গিনেজ বুকে নাম লেখানো এই স্থাপনাটির উচ্চতা ২ হাজার ৮০ ফুট (৬৩৪ মিটার)। উচ্চতায় এটি টপকে গেছে চীনের ক্যান্টন টাওয়ারকে। এতদিন ক্যান্টন টাওয়ারকেই বিশ্বের সর্বোচ্চ টাওয়ার হিসেবে অভিহিত করা হতো। উল্লেখ্য, ক্যান্টন টাওয়ারের উচ্চতা ১ হাজার ৯ শ ৬৮ দশমিক ৫০ ফুট (৬০০ মিটার)।
তবে একই সঙ্গে বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থাপনা ও বহুতল ভবনের রেকর্ড এখনও দুবাইর বুর্জ খলিফার দখলে।  ক্যান্টন টাওয়ার বা টোকিও স্কাই ট্রি মূলত টাওয়ার, বহুতল ভবন বা স্কাইস্ক্রাপার নয়। বুর্জ খলিফার উচ্চতা ৮২৮ মিটার।

টোকিও স্কাইট্রি টাওয়ারটি মূলত টেলিভিশন এবং রেডিও সম্প্রচারের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে। তবে এতে বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে থাকছে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এর শীর্ষে উঠে আশপাশের সবকিছু অবলোকন করার সুযোগ।

টোকিওর প্রতীকরূপে দাঁড়িয়ে থাকা ‘টোকিও টাওয়ার’কে প্রতিস্থাপিত করে নির্মাণ করা হয়েছে আজকের টোকিও স্কাইট্রি। উল্লেখ্য, ১৯৫৮ সালে নির্মিত টোকিও টাওয়ারের উচ্চতা ছিল ১ হাজার ৯২ দশমিক ৫০ ফুট।

জোট নেতাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর

হরতালে গাড়ি পোড়ানোর মামালায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলীয় জোটের ৩৩ নেতার জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. জহুরুল হকের আদালতে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয়ে বেলা ১১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত জামিন আবেদনের শুনানি চলে।

এরপর দুপুরে আদালত তার আদেশে জামিন আবেদন নামঞ্জুরের ঘোষণা দেন। বুধবার আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে জামিন শুনানিতে অংশ নেন ব্যারিস্টার রফিক উল হক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী।
তবে ঢাকা বারের নেতাদের নামে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের হওয়ায় তাদের কাউকে আদালতে উপস্থিত হতে দেখা যায়নি।

গত বুধবার মির্জা ফখরুলসহ জোটের নেতারা ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে আত্মসর্মপণ করে জামিন চাইলে শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মো. এরফান উল্লাহ জামিন আবেদন নাকচ করে সবাইকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

ওইদিন জামিন নাকচের পর আসামিদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ও অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম বিকাশ কুমার সাহার কাছে জামিন আবেদন পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে বিচারক তাও নাকচ করে দেন।

গত ২৯ এপ্রিল বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের ডাকা হরতালের পর রাত ৯টা ৫ মিনিটে তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে একটি গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে হরতালকারীরা। এ ঘটনায় তেজগাঁও থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক ইসমাইল মজুমদার বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় দ্রুত বিচার আইনের ৪ ও ৫ ধারায় এ মামলা দায়ের করেন।

মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলীয় জোটের ৪৪ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।

৫০ হাজার লবণ চাষি শঙ্কায়

টেকনাফে বৈরী আবহাওয়ায় লবণ উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রাকৃতিক এ বাধা উপেক্ষা করে চাষিরা মাঠে রয়েছেন। তবে আশানুরূপ উৎপাদন করতে পারবে না এমন শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

গত ১৫ দিন থেকে অবস্থার পরির্বতন ঘটছে না আকাশের। লবণ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ৫০ হাজার চাষি-শ্রমিকসহ লবণ চাষের ওপর নির্ভরশীল দেশের লক্ষাধিক মানুষ শঙ্কায় রয়েছে। প্রাকৃতির বৈরী অবস্থা যদি লবণ উৎপাদনের ভরা মৌসুমে বিরাজ থাকে তবে লবণ শ্রমিকদের পরিবার-পরিজনদের দু'বেলা খাবার জুটবে কি-না এ দুশ্চিন্তা থেকেই গেল।
খবর পাওয়া গেছে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ, কতুবদিয়া, মহেশখালী, পুকখালী, মাদারবাড়ি, ধলঘাটা, চকরিয়া ও চট্টগ্রাম বাঁশখালীর লবণ মাঠে বৃষ্টির পানি জমেছিল। বৃষ্টির পানিতে লবণ ভেসে গিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লবণ চাষি ও শ্রমিকদের। যেহেতু লবণ চাষের নিয়ম অনুযায়ী জমিতে যে পরিমাণ লবণ উৎপাদন হবে তার অর্ধেক লবণ পাবে জমির মালিক বা চাষি আর অর্ধেক পাবে শ্রমিক। টেকনাফ আলীখালীর লবণ শ্রমিক জাফর আলম জানান, আকাশে অবস্থা ভালো না হলে লবণ উৎপাদন সম্ভব নয়, এতে জমিদারের কি আসে যায়; ভাতে মরব তো আমরা শ্রমিকরা।
কক্সবাজার বিসিক অফিস সূত্রে জানা যায়, জাতীয় লবণনীতি ২০১১ অনুযায়ী ২০১২ সালে দেশে লবণের বার্ষিক চাহিদা ১৪ দশমিক ৩৬ লাখ টন। এ লবণ মনুষ্য খাদ্যে ৯ দশমিক ২৫ লাখ টন, মৎস্য ও প্রাণী খাতে ২ দশমিক ২৭ লাখ টন ও শিল্পখাতে ২ দশমিক ৮৪ লাখ টন প্রয়োজন হবে।
চলতি মৌসুমে কর্তৃপক্ষ লবণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ১৪ দশমিক ৫০ টন। ওই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ৭০ হাজার একর জমিকে লবণ মাঠে পরিণত করেছেন ৪৫ হাজার লবণ শ্রমিক। তারা মাঠে পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছে চাহিদা পূরণ ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে।
২০১১ সালে দেশে লবণের চাহিদা ছিল ১৩ দশমিক ৬৮ লাখ টন। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৯০ লাখ টন। সেখানে ৩৮ হাজার ৫৮২ লবণ শ্রমিক ৫৫ হাজার ৬৩৭ একর লবণ মাঠে সারা মৌসুম লবণ উৎপাদন করেছিল ৯ দশমিক ৫৬ লাখ টন, যা চাহিদার চেয়ে ৪ লাখ ১২ টন কম। ফলে গত ২০১১ সালে লবণের চাহিদা পূরণে সরকারকে বিদেশ থেকে কিনতে হয়েছে।
চলতি মৌসুমে প্রারম্ভিক মজুদ (মার্চ পর্যন্ত) ৬ দশমিক ৯ লাখ টন ধরা হলেও বৈরী আবহাওয়া ও অসময়ে বৃষ্টি তা সম্ভব হয়নি। সেখানে চলতি মার্চ মাস পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে ১ দশমিক ৫৭ লাখ টনসহ এ পর্যন্ত মজুদ করা হয়েছে ৩ দশমিক ৭৪ লাখ টন।
মনুষ্য খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত, শিল্প-কারখানায়, মৎস্য ও পশুখাদ্যসহ দেশে মাসিক লবণের গড় চাহিদা ১ দশমিক ২০ লাখ টন।
লবণ উপাদন ও মজুদদার মোঃ শফিক মিয়া জানান, লবণ উৎপাদনের দিক থেকে দেশে সবচেয়ে অধিক লবণ উৎপাদন হয় টেকনাফে। তবে টেকনাফের পূর্বপাশের বেড়িবাঁধ দুই বছর থেকে বিধ্বস্ত হওয়ায় বিশাল আবাদি জমিতে লবণ চাষ সম্ভব হয়নি। বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকছে। ফলে বহু চাষি মাঠে নামতে পারেননি।
অন্যদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি সমকালকে বলেন, টেকনাফের পূর্ব পাশের পাউবো বেড়িবাঁধটি বিধ্বস্ত হয়েছে দু'বছর আগে। গত বছর ভরা বর্ষাকালে মেরামত করা সম্ভব হয়নি। চলতি বছর সেই বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য প্রথমবারে ৪২ লাখ টাকা দেওয়া হয়। ওই কাজের দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ শফিক মিয়া। চলতি লবণ মৌসুমে কেন চাষিরা লবণ উৎপাদন করতে পারছে না। এ প্রশ্ন তার কাছে করা উচিত।
বর্তমানে লবণের বাজার দরের ওপর শ্রমিক খুশি নন। অতি কষ্টে উৎপাদিত প্রতি টন কালো লবণে দর ২ হাজার টাকা, সাদা লবণের দর ৩ হাজার টাকা ও পলিথিন পদ্ধতিতে উৎপাদিত লবণের দাম সাড়ে তিন হাজার টাকা।
লবণ উৎপাদনকারীরা সরকারের প্রতি দেশে উৎপাদিত লবণের দর স্থিতিশীল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

উখিয়ায় ট্রলারসহ মদ জব্দ

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার উপকূলবর্তী রূপপতি এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার একটি মাছ ধরার ট্রলারসহ বিপুল পরিমাণ মদ জব্দ করেছে নৌবাহিনীর টহল দল। তবে নৌবাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, ধাওয়া করে ওই ট্রলারটি আটক করার আগে এলাকাবাসী ট্রলারে হানা দিয়ে অনেক মদ লুট করে নিয়েছে।

নৌবাহিনী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে টহলরত নৌবাহিনীর বানৌজা মেঘনা জাহাজের একটি দল গতকাল সকালে সেন্ট মার্টিন পয়েন্ট থেকে এমভি সামি নামের ট্রলারটি ধাওয়া করে। ধাওয়া খেয়ে মাদকভর্তি ট্রলারটি উখিয়ার উপকূলীয় এলাকা রূপপতি চ্যানেলে ভিড়িয়ে ট্রলারের মাঝিমাল্লারা পালিয়ে যায়। এ সময় নৌবাহিনীর টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই স্থানীয় লোকজন ট্রলারটিতে হানা দিয়ে লুটপাট করে। পরে টহল দল সেখানে পৌঁছে ট্রলার থেকে বস্তাভর্তি দুই হাজার ১৩৫ ক্যান বিয়ার, লেভেল ফাইভ ব্র্যান্ডের ১৪২ বোতল হুইস্কি ও প্রায় ১০০ বোতল রাম উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা মদ ও ট্রলারটি উখিয়া থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে নৌবাহিনী।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপ্পেলা রাজু নাহা জানান, এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে। নৌবাহিনীর জব্দ করা তালিকা ও পুলিশের কাছে দেওয়া মামলার এজাহারে এই মদ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন হিসেবে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকার ছৈয়দ নূর (২৮), পাকড়িবাজার এলাকার মোহামঞ্চদ জয়নাল (৩৫), একই এলাকার দিল মোহামঞ্চদ (২৭), কর্ণফুলী বহদ্দারপাড়া এলাকার সালাহ উদ্দিন (৩৫) ও টেকনাফের জাফর আলমের (৫০) নাম রয়েছে।

রামুতে গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ

কক্সবাজারের রামু উপজেলার পূর্বদ্বীপ ফতেখাঁরকুল গ্রামে রুবি আক্তার (২২) নামের এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার রুবির মা নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। রুবি উপজেলার রাজারকুল গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের মেয়ে।

রুবির মামা মো. ইব্রাহীম অভিযোগ করেন, শুক্রবার রাতে রুবিকে তাঁর স্বামী দিলদার মিয়া বেদম মারধর করেন। রুবি গুরুতর আহত হয়ে পড়লে একপর্যায়ে পানি চান। এ সময় পানির পরিবর্তে তাঁকে বিষ খাওয়ানো হয়। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রুবিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত শনিবার রাতে হাসপাতালে রুবির মৃত্যু হলে দিলদার তাঁর লাশ ফেলে পালিয়ে যান। হাসপাতালের বারান্দায় দুই দিন পড়ে থাকার পর খবর পেয়ে সোমবার দুপুরে তাঁরা রুবির লাশ উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে আসেন। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন এলাকায় প্রচারণা চালায় রুবি বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
তবে ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য নুরুল হক জানান, এলাকার বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে তিনি জেনেছেন স্বামীর মারধর সহ্য করতে না পেরে ওই গৃহবধূ নিজেই বিষ খেয়েছেন।
রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে নজিবুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে গতকাল বিকেলে তিনি দিলদারের বাড়িতে যান। কিন্তু বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি। লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে মামলা নেওয়া হবে।

পেকুয়ায় বেকারত্ব বাড়ছে

কক্সবাজারের উপকূলীয় উপজেলা পেকুয়ায় সরকারি-বেসরকারি কোনো কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র না থাকায় দিন দিন বেড়েই চলেছে বেকারের সংখ্যা। কর্মসংস্থানের সুযোগের অভাবে এখনকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।

গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে পেকুয়া মডেল উপজেলায় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে বলে সচেতন মহল অভিমত প্রকাশ করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলাভিত্তিক উৎপাদনশীল ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের প্রসারের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং গ্রামীণ অর্থনীতি সমৃদ্ধ করতে সরকার দেশে ১৯৯৯ সালে উপজেলা বিসিক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন নীতিমালা প্রবর্তন করে। এ প্রকল্পের আওতায় ১০ শতাংশ সুদে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদানের নিয়ম হয় সে সময়। সারাদেশে প্রায় ৩৫ হাজার ৪৩৭ জনকে প্রশিক্ষণ এবং ৫৩ হাজার ১৮২ জন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উদ্যোক্তাকে ঋণ সুবিধা দেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রকল্প শুরু করার দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও মডেল উপজেলায় এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেনি বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। এর ফলে একটি স্বাবলম্বী উপজেলা হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পেকুয়া।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, ২০০১ সালে সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমদ বহু চেষ্টা করেও পেকুয়ায় বিসিক শিল্প প্রকল্প ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাস্তবায়ন করতে পারেননি। বর্তমান সরকারের তিন বছর মেয়াদপূর্তি হলেও গ্রামীণ অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে না ওঠায় পেকুয়ার প্রায় ৪ লাখ মানুষের মাঝে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, পেকুয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম পাহাড়িয়াখালীর রাখাইন সম্প্রদায় চাড়াই, পাটি, মোড়া, বেতের চেয়ার, কুলা ও নানা কুটিরশিল্প সামগ্রী তৈরি করে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারিভাবে কোনো সহায়তা না পাওয়ায় এখানকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় রাখাইন সম্প্রদায়ের নারী নেত্রী সা সুং প্রু বলেন, পেকুয়ায় কারিগরি শিল্প প্রতিষ্ঠানের অভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে পিছিয়ে পড়েছে অনেকে। অবিলম্বে এখানে একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।
পেকুয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম উজানটিয়ার শিক্ষিত বেকার যুবক মোঃ শাহআলম বেপারী জানান, সরকারি মাধ্যম বা যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কারিগরী শিক্ষা লাভ করতে পারলে আমরা আর বেকার থাকতাম না।
এ বিষয়ে পেকুয়া-চকরিয়া সংরক্ষিত আসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংসদ সাফিয়া খাতুন বলেন, বর্তমান সরকার গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা ও জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি পেকুয়ায় বিভিন্ন এলাকায় বিসিক শিল্প প্রকল্প ও বেকার যুবকদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে সমস্যা দূর করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলে জানিয়েছেন।

Tuesday, May 22, 2012

কক্সবাজারে খেলার মাঠ রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন

কক্সবাজার শহরের বাহারছড়ায় সর্বসাধারণের ব্যবহার করা প্রাচীন গোলচক্কর মাঠ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে ইজারা দেওয়ার প্রতিবাদে এবং মাঠটি রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

‘কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলন’-এর ব্যানারে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় গোল চক্কর মাঠে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, কর্তৃপক্ষের মাঠ ইজারা দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত উদ্ভট। দীর্ঘদিন ধরে খেলাধুলা, জানাজাসহ সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত মাঠ ইজারা বাতিলের দাবি জানান তারা।

বক্তারা বলেন, কক্সবাজারের বিপুল জমি থাকতে অন্যতম একটি খেলার মাঠ ইজারা দিয়ে বৃহৎ সামাজিক প্রয়োজনে এর ব্যবহারকারী সর্বসাধারণকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বাতিল করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন বক্তারা।

কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকার সভাপতিত্বে ও কক্সবাজার জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট তাপস রক্ষিতের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন, নারী নেত্রী খোরশেদ আরা হক, কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমান, পরিবেশবিদ সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী, দৈনিক কক্সবাজারের পরিচালনা সম্পাদক আলহাজ মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান, উন্নয়নকর্মী ইঞ্জিনিয়ার কানন পাল, জাসদ নেতা মোহাম্মদ হোসেন মাসু, জাপা নেতা কামাল উদ্দিন, সাংস্কৃতিক সংগঠক জসীম উদ্দিন বকুল, অধ্যক্ষ ওমর ফারুক, নজরুল ইসলাম, ডা. চন্দন কান্তি দাশ, জাহেদুল ইসলাম, মহি উদ্দিন, আবছার, হারুন অর রশিদ, নাজিম উদ্দিন প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, কক্সবাজার শহরের বাহারছড়ায় সর্বসাধারণের ব্যবহার্য প্রাচীন গোল চক্কর মাঠ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নামে দেওয়া হচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী এ মাঠ কোনো দপ্তরকে বরাদ্দ না দেওয়ার  জন্য ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে ‘কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলন’।

পতাকা বৈঠকে আটক নাসাকা সদস্য হস্তান্তর

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী নাসাকার সঙ্গে সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠকে আটক এক নাসাকা সদস্যকে হস্তান্তর করা হয়েছে।

রোববার দুপুর ১২টায় নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ঘুনধুম সীমান্ত এলাকায় অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে আটক নাসাকা সদস্যকে হস্তান্তর করা হয়। তবে তার নাম জানা যায়নি।
বিজিবি সূত্র জানায়, মিয়ানমারের সীমান্তের ওপারে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিজিবির ১০ সদস্যের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ১৭ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. খালেকুজ্জামান। নাসাকা বাহিনীর ৬ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন নাসাকা ৩নং সেক্টর কমান্ডার ডেপুটি ডিরেক্টর অং কো টাই।

বৈঠক শেষে বিজিবির কক্সবাজারের ১৭ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. খালেকুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, পতাকা বৈঠকে  নানা বিষয়ে ফলপ্রসূ এবং কার্যকরী আলোচনা হয়েছে। 

তিনি জানান, ১৮ মে বালুখালী বিওপির নিয়মিত টহল দল  বাউন্ডারি রেফারেন্স পিলার ২১ থেকে আনুমানিক ৫শ গজ দক্ষিণ পশ্চিম কোণের শূন্য লাইন থেকে ৫০ গজ বাংলাদেশের ভেতরে কাটাপাহাড়ের কাছে উখিয়া খাল থেকে ৩নং সেক্টরের নাইছাদং নাসাকা ক্যাম্পের সদস্যসহ মিয়ানমারের এক নাগরিককে আটক করে। পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে রোববার ওই নাসাকা সদস্যকে ৩নং সেক্টর কমান্ডারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এছাড়া নাসাকা সদস্যদের শূন্য লাইনের বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশের বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।

মো. খালেকুজ্জামান জানান, বাংলাদেশের তমব্রু খালে বাংলাদেশি জেলেরা মাছ ধরতে গেলে নাসাকা বাহিনীর সদস্যরা প্রায়ই তাদের ধরে নিয়ে যায় এবং মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেয়। এ বিষয়ে প্রতিপক্ষ নাসাকা বাহিনীকে এ ধরনের কার্যকলাপ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়।

এর উত্তরে নাসাকা বাহিনীর সেক্টর কমান্ডার জানান, এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তাকে জানানো হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উখিয়ায় পরিবেশবান্ধব ইটভাটা নির্মাণের পক্ষে এলাকাবাসী

‘ইয়াবা ব্যবসার ওপর ভাসছে উখিয়া-টেকনাফ। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ইয়াবাসহ উখিয়া-টেকনাফের লোকজন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হচ্ছে।

কিন্তু এ নিয়ে কোনো সচেতন মহলতো কখনো কোনো আন্দোলন করেনি। অথচ উখিয়ার একটি পিছিয়ে পড়া জনপদ সাবেক রুমখায় একটি পরিবেশবান্ধব ইটভাটা বন্ধ করার জন্য এতো আন্দোলন হচ্ছে- এর পেছনে রহস্য কি?’ একথাটি ক্ষোভের সঙ্গে বললেন উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুফিজুর রহমান (৬৮)। একটি নির্মাণাধীন ইটভাটা পরিদর্শনের জন্য একদল সাংবাদিক উখিয়ার সাবেক রুমখার কেলাসেপাড়ায় গেলে তিনি এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, “এই এলাকায় একটি ইটভাটা হচ্ছে- এতে এলাকার কারো কোনো আপত্তি নেই। কারণ ইটভাটাটি হলে এলাকার হাজারো লোকের কর্মসংস্থান হবে।”

এলাকার সমাজসেবক গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “এই এলাকার পূর্বপাশে বনাঞ্চল সংলগ্ন আরো চারটি ইটভাটা আছে। কিন্তু সেগুলো সরকার অনুমোদিতও নয়, পরিবেশবান্ধবও নয়। তাহলে ওসব ইটভাটার বিরুদ্ধে কখনও আন্দোলন হয়নি কেন? তখনও এসব সচেতন মহল বা পরিবেশবাদীরা কোথায় ছিল?”
 
তবে কক্সবাজার বন ও সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, “কক্সবাজার জেলার প্রায় ৬০টি ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র একটি জিকজাক পদ্ধতিতে স্থাপিত। জিকজাক পদ্ধতি পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এই ধরনের ইটভাটা স্থাপনে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সনাতনী পদ্ধতিতে স্থাপিত ইটভাটা পরিবেশের ক্ষতি হওয়ায় আমরা এসব ইটভাটা উচ্ছেদের পক্ষে।”

নতুন ইটভাটা নির্মাণ সম্পর্কে রুমখা এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবক ও জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য আবুল মনসুর চৌধুরী বলেন, “ইটভাটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু ইটভাটা না থাকলে দেশে উন্নয়ন করা যাবে না। সেজন্য সরকার পরিবেশ বান্ধব ইটভাটা গড়ার নীতিমালা তৈরি করেছে। সেই নীতিমালা অনুযায়ী ইটভাটা নির্মাণ করতে হলে ‘জিকজাক’ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। আর সেই জিকজাক পদ্ধতিতেই ইটভাটা নির্মাণ করছেন জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক শাহ আলম চৌধুরী। তার এই উদ্যোগ প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কর্মসংস্থান কর্মসূচিরও একটি অংশ।”

ইটভাটার উদ্যোক্তা জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক শাহ আলম চৌধুরী ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, “এই অঞ্চলের পাশে বনাঞ্চল নেই। জমির আশি ভাগই এক ফসলী ও অনুর্বর। যা সরেজমিনে সাংবাদিকরা পরিদর্শন করেছেন। কারো সন্দেহ থাকলে তারাও ঘটনাস্থলে এসে এলাকা পরিদর্শন করতে পারেন।”

তবে উখিয়া এলাকাবাসীর দাবি, কে কেউ ইটভাটা করুক তা যেন পরিবেশবান্ধব হয়।

কক্সবাজারে আড়াই মাসে বজ্রপাতে ১৮ জনের মৃত্যু

কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে বজ্রপাতে গত আড়াই মাসে ১৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে চলতি মাসেই মারা গেছে ১০ জন। আহত হয়েছে আরও ১৫ জন। বজ্রপাতে ২০টিরও বেশি গবাদিপশুর মৃত্যু হয়েছে।

বজ্রপাত থেকে রক্ষার উপায় সম্পর্কে জানতে চাইলে কক্সবাজার আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বজ্রপাতের সময় বড় কোনো গাছের নিচে দাঁড়ানো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ বড় গাছে আর্থিং (বৈদ্যুতিক প্রবাহকে মাটিতে নামতে সহায়তা করে) থাকে। তা ছাড়া বৃষ্টির সময় বিদ্যুতের খুঁটির পাশে বা নিচে অথবা খোলা জায়গায় ছাতা নিয়ে দাঁড়ানো ও হাঁটাচলা বিপজ্জনক। কারণ মাটি ও ছাতার ওপরের লৌহাদণ্ডে আর্থিং থাকে। বাসাবাড়িতে বজ্রনিরোধক তার লাগাতে হবে। এ ছাড়া বজ্রপাতের সময় বাসাবাড়ির টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর ও মুঠোফোন বন্ধ রাখা ভালো।’
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ১৬ মে সকাল আটটার দিকে টেকনাফে বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কুতুবদিয়াপাড়ার আবুল কালামের ছেলে মোহাম্মদ আলমগীর (১৫) বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিল। হঠাৎ বজ্রপাত বেড়ে গেলে আলমগীর দৌড়ে কুতুবদিয়াপাড়া জামে মসজিদের পাশে একটি বড় গাছের নিচে দাঁড়ায়। এ সময় বিকট শব্দে একটি বাজ গাছটির ওপর পড়ে। এতে নিচে দাঁড়িয়ে থাকা আলমগীরের মৃত্যু হয়। সঙ্গে গাছের নিচে দাঁড়ানো একটি ছাগলও মারা যায়।
একই দিন বেলা ১১টার দিকে টেকনাফ পৌরসভার বাস টার্মিনাল থেকে হেঁটে নাইট্যংপাড়ার নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে আবু তাহেরের ছেলে আবু বক্কর (১৭) মারা যায়। একই দিন সকাল সাড়ে সাতটায় চকরিয়ার বরইতলী ইউনিয়নের মুড়াপাড়া গ্রামে বজ্রপাতে মারা যান সলিম উল্লাহ (৪৫) ও তাঁর স্ত্রী রশিদা বেগম (৩৭)।
বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এ টি এম জিয়াউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বজ্রপাত প্রথমে একটি গাছে আঘাত হানে। তারপর গাছের পাশে সলিম উল্লাহর বাড়িতে লাগে। এ সময় ঘরের ভেতর থাকা স্বামী-স্ত্রী মারা যান। আহত হন পাশের বাড়ির আরেক গৃহবধূ সায়েমা আক্তার (১৯)। তাঁকে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।’ ওই দিন বজ্রপাতে মহেশখালীর কুতুবজোম গ্রামের লবণচাষি আবুল কালাম (৪৫) ও সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের চরপাড়ার ফরিদুল আলম (৪৩) গুরুতর আহত হন।
উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, গত ১৩ মে সকাল ১০টার দিকে বজ্রপাতে চেপটখালী গ্রামের মোহাম্মদ বাবুল (২৫) মারা যান। এ সময় গুরুতর আহত হন আরও তিনজন। তাঁদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁরা চারজন একটি নৌকা নিয়ে সমুদ্র উপকূলের চেপটখালী এলাকায় মাছ ধরতে গিয়েছিলেন।
বজ্রপাতে হতাহতের কোনো হিসাব আবহাওয়া কার্যালয়ে রাখা হয় না জানিয়ে কক্সবাজারের সহকারী আবহাওয়াবিদ আফতাব উদ্দিন জানান, মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে বজ্রপাত বেশি হয়। কারণ প্রচণ্ড দাবদাহে ভূমির ওপর থাকা বাতাস হালকা হয়ে ১৮ হাজার ফুটের বেশি ওপরে উঠে যায়। এ সময় নিম্নচাপ দেখা দেয়। তখন ভারসাম্যহীনতার কারণে বজ্রপাত ঘটে। আর বজ্রপাত হচ্ছে তড়িৎ-চুম্বক তরঙ্গ। তড়িৎগুলোর সংঘর্ষ হয় বলে বিকট শব্দ হয় এবং নিচের দিকে মাটি টেনে নেয় বলে বজ্রপাতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। তবে অন্য বছরের তুলনায় চলতি সালে গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। তাই বজ্রপাতের সংখ্যাও বাড়ছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী জানান, গত ১ মার্চ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত আড়াই মাসে কক্সবাজারে বজ্রপাতে কমপক্ষে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় ১৫ জন। মারা গেছে প্রায় ২০টি গরু-ছাগল।

চকরিয়ায় দেড় ঘণ্টা বন্দুকযুদ্ধ শেষে ছয় ডাকাত গ্রেপ্তার

কক্সবাজারের চকরিয়ায় পুলিশ ও ডাকাতদলের মধ্যে কয়েক দফা বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের রামপুর চিংড়ি জোন এলাকায় এই বন্দুকযুদ্ধ চলে দেড় ঘণ্টাব্যাপী।

বন্দুকযুদ্ধ শেষে পুলিশ ছয় ডাকাত গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় দুটি দেশীয় তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র, তিনটি কার্তুজ ও চারটি ছোরা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো চিরিঙ্গা ইউনিয়নের সওদাগরঘোনা এলাকার মো. সোলেমানের ছেলে মোহাম্মদ সেলিম, মৃত বশির উদ্দিনের ছেলে নুরমোহাম্মদ, জাফর আহমদের ছেলে জহির আহমদ, শহর আলীর ছেলে আবদুর রশিদ, জহির আহমদ ও আহমদ সোবহানের ছেলে নুরুল আবচার।
পুলিশ জানায়, সাহারবিল ইউনিয়নের রামপুর মৌজার চিংড়ি জোন এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন ৪ নম্বর স্লুইস গেট লাগোয়া ১০ একরবিশিষ্ট কয়েকটি চিংড়িঘেরে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল প্রায় ৪০ সদস্যের একদল সশস্ত্র ডাকাত। এ খবর পেয়ে শনিবার রাত ১১টার দিকে রামপুর পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেন।
এ সময় টের পেয়ে ডাকাতরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে এই বন্দুকযুদ্ধ শেষে ডাকাতদল একপর্যায়ে চিরিঙ্গা ইউনিয়নের সওদাগরঘোনা এলাকার দিকে পালিয়ে আসে। পরে রাত ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত চকরিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ ফরহাদের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য চিংড়ি জোন সওদাগরঘোনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছয় ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে।
রামপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আবদুল হাকিম জানান, বন্দুকযুদ্ধ চলাকালে মো. আরাফাত নামে পুলিশের একজন সোর্স আহত হয়েছে।
বর্তমানে সে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ ফরহাদ কালের কণ্ঠকে জানান, পুলিশের ওপর হামলা, ডাকাতির প্রস্তুতি ও অস্ত্র আইনে থানায় পৃথক তিনটি মামলা করা হয়েছে।

কুতুবদিয়া মাতিয়ে গেলেন খুদে গানরাজ পায়েল

গানের সুরে সুরে কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া মাতিয়ে গেলেন মেরিডিয়ান-চ্যানেল আই খুদে গানরাজ পায়েল।

তার কুতুবদিয়া আসায় খবর ছড়িয়ে পড়লে দ্বীপের সর্বস্তরের মানুষ এক নজর দেখতে এবং সুমধুর কণ্ঠে গান শোনার জন্য উপজেলা অফিসার্স ক্লাব প্রাঙ্গণে ভিড় জমায়। উপস্থিত সবার অনুরোধে শিল্পী পায়েল গান গেয়ে সবাইকে খুশি করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা এইচ এম এহসান জানান, পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর ই খাজা আলামিন কুতুবদিয়ায় দায়িত্ব পালন করছেন। গত বৃহস্পতিবার তিনি কুতুবদিয়ায় অফিস করতে আসেন। এ সময় তিনি খুদে গানরাজ পায়েলকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। পায়েলের আগমন সংবাদ দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে ভিড় জমে যায়। তৎক্ষণাৎ গানের সরঞ্জাম নিয়ে উপজেলা অফিসার্স ক্লাবে উপস্থিত হন কুতুবদিয়া শিল্পকলা একাডেমির সম্পাদক মাস্টার সমীর শীল। তার পরিচালনায় ১০-২০ মিনিটের একটি জমজমাট অনুষ্ঠান হয়ে যায়। এতে বেশ কটি জনপ্রিয় গান গেয়ে শোনান পায়েল।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আওরঙ্গজেব মাতবর, পিআইও সুব্রত দাশ, যুবলীগ নেতা শহীদুল ইসলাম লালা প্রমুখ।

কক্সবাজারে বসুন্ধরা টিস্যু ট্রেড স্কিমের পুরস্কার বিতরণ

বসুন্ধরা টিস্যু ট্রেড স্কিমে অংশ নেওয়া কক্সবাজার অঞ্চলের ২৫০ ব্যবসায়ী ও পরিবেশককে নিয়ে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান গত শুক্রবার রাতে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কক্সবাজারের একটি অভিজাত হোটেলের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন বসুন্ধরা টিস্যুর ইনচার্জ ও ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার খন্দকার এম এ জলিল। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, বসুন্ধরা টিস্যু গুণগত মানে এতই উন্নত যে তা আজ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন যথাক্রমে বসুন্ধরা পেপার মিল লিমিটেড ৩-এর সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড ফিন্যান্স) মোহাম্মদ ইউনুছ আলী, এক্সিকিউটিভ মোহাম্মদ ইরফান খাঁন, কক্সবাজারের এরিয়া ইনচার্জ মোহাম্মদ বদিউল আলম, কক্সবাজার অঞ্চলের চার পরিবেশক।

Friday, May 18, 2012

চকরিয়ায় হিমাগারের অভাবে নষ্ট হচ্ছে কৃষিপণ্য

চকরিয়ায় হিমাগার না থাকায় সংরক্ষণের অভাবে প্রতি বছর পচে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার কৃষিপণ্য। সরকারি অথবা ব্যক্তিমালিকানায় একটি হিমাগার স্থাপন করা হলে চকরিয়া-পেকুয়া ও বান্দরবানের লামা-আলীকদম

উপজেলার হাজার হাজার কৃষক উৎপাদিত কৃষিপণ্য সংরক্ষণ করে অতিরিক্ত কয়েক কোটি টাকা আয় করতে পারবেন। এ সরকার ক্ষমতায় আসার প্রথম দিকে চকরিয়ায় কয়েকটি সভা-সমাবেশে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ূয়াও এ উপজেলাকে কৃষিভিত্তিক শিল্প নগরী হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। সাড়ে ৩ বছরেও শিল্পমন্ত্রীর ওই ঘোষণা বাস্তবায়ন হয়নি।
জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভায় প্রতি বছর শুতনো মৌসুমে কৃষকরা আমনের পাশপাশি ব্যাপক সবজি চাষাবাদ করেন। এ উপজেলায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য এ অঞ্চলের মানুষের খাদ্য ঘাটতির চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হয়ে আসছে।
কৃষকরা জানান, প্রতি বছর জমিতে উৎপাদিত ফসল (কৃষিপণ্য) প্রথম দিকে স্থানীয় বাজারে ভালো দামে বিক্রি করলেও মাঝপথে হিমাগার না থাকায় সংরক্ষণের অভাবে পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন তারা। অনেক সময় বাজারে মূল্যের তারতম্যের কারণে কৃষিপণ্যগুলো কয়েকদিন অবিক্রীত থেকে গেলে তা পচে নষ্ট হয়ে যায়। এতে কৃষকরা লাভের চেয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন বেশি। কৃষকরা জানান, চকরিয়ায় সরকারি অথবা বেসরকারি পর্যায়ে একটি হিমাগার স্থাপন করা হলে কৃষিপণ্যগুলো সংরক্ষণের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারলে বছরে কয়েক কোটি টাকার বাড়তি আয় করতে পারবেন তারা। চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম জানান, উপজেলার সঙ্গে চকরিয়া উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব সহজ ও উন্নত হওয়ায় হিমাগারটি সব উপজেলার কৃষকরা ব্যবহার করতে পারবেন।